Home / ফিচার / জাটকা রক্ষার কৌশল পরিবর্তন জরুরি
জাটকা রক্ষার কৌশল পরিবর্তন জরুরি

জাটকা রক্ষার কৌশল পরিবর্তন জরুরি

আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে ইলিশ। আমাদের দেশের ইলিশের সুনাম পৃথিবীর সর্বত্র। বাঙালীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও গৌরবের সাথে মিশে আছে ইলিশের স্বাদ।

মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, প্রায় ৭০% ইলিশ বাংলাদেশে, ২০% ভারতে, ৫% মায়ানমারে এবং বাকি ৫% টাইগ্রিসসহ পৃথিবীর অন্যান্য নদীতে পাওয়া যায়।

এর মধ্যে বাংলাদেশের ইলিশের স্বাদই আলাদা, অভিন্ন ও সর্বত্র চাহিদা রয়েছে।

আমাদের দেশের সব নদ-নদীতে ইলিশের প্রাচুর্য না থাকলেও মেঘনা ও পদ্মা নদীর উপকূলীয় এলাকায় এর বিচরণ ক্ষেত্র রয়েছে।

দেশের মাছের মোট উৎপাদনের ১২% হলো ইলিশ এবং জেডিপিতে এর অবদান ১%। তাই ইলিশের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের চেয়ে কম নয়। বিদেশ থেকে আমদানি করা আমাদের দেশেই এক লিটার অকটেন এর মূল্য ৯৮ টাকা ও এক লিটার পেট্রোল এর মূল্য ৯৬ টাকা । অথচ ওই পরিমাণ ১ কেজি ইলিশের মূল্য ৮ শ’ থেকে ১ হাজার টাকা।

সরকার প্রতিবছর জাতীয় মাছ ইলিশ রক্ষায় মেঘনা ও পদ্মা নদীর উপকূলীয় এলাকার বিচরণ কেন্দ্রগুলিতে অভয়াশ্রম ঘোষণা ও মা মাছসহ জাটকা রক্ষা করতে ৩ মাস নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে থাকেন। ।

অথচ এক শ্রেণির অপয়া জেলে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে মার্চ-এপ্রিলে অবাধে জাটকা নিধন করে যাচ্ছে। সংসার চালানোর অজুহাতে তারা এ কাজটি করছে। এক্ষেত্রে তাদেরকে সহায়তা করছে একশ্রেণির অসাধু আড়তদার।

মৎস্য বিভাগের দেয়া এক তথ্যে জানা গেছে, উপকূলীয় এলাকায় মাত্র ২% লোক জাটকা ধরা, বেচা, কেনা ও বিভিন্ন স্থানে চালান, বরফ ব্যবসা, পরিবহনের কাজে জড়িত। মাত্র এ দু’ভাগ লোক দেশের ৯৮ ভাগ মানুষরে জাতীয় সম্পদ ইলিশ ধ্বংসের কাজে নিয়োজিত রয়েছে, যা কারো কাম্য নয়।

চলতি অর্থবছর জেলা মৎস্য অফিসের দেয়া তথ্য মতে , মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এ দু’মাসের অভিযানে ৫শ’ ৩০ জন জেলে আটক করে।

এর মধ্যে ২শ’ ৯০ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ-, ২ শ’ ৪০ জন জেলেকে নগদ অর্থ জরিমানা করা হয়।

এ ছাড়াও ২৫ মে.টন জাটকা ও ৪১ লাখ মিটার নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। যার মূল্য ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা । জাটকা রক্ষা বিরোধী কার্যকলাপের দায়ে ৩ শ’৪৮ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে ।

অথচ ওইসব জেলেদের ৩ মাস সংসার চালাতে আর্থিক সহায়তা ও বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সত্ত্বেও নির্বোধ জেলেরা তাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন বড় হয়ে মাছে পরিণত হওয়ার সময়ই জাটকা অবাধে ধরে ফেলছে।

কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ২০০১- ‘০২ অর্থবছর থেকেই জাতীয়ভাবে ইলিশ সম্পদ রক্ষায় জাটকা নিধন প্রতিরোধ কর্মসূচি পালন করতে হচ্ছে।

সরকার প্রকৃত জেলেদের সুযোগ সুবিধা দেয়ার জন্যেই তাদের সঠিক তালিকা তৈরিসহ ছবিযুক্ত পরিচয়পত্রও দিয়েছেন । মৎস্য বিভাগ ইউপির জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় ওইসব জেলেদের তালিকা তৈরি, কার্ডের মাধ্যমে চাল বিতরণ, প্রশিক্ষণ, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে থাকেন।

তাই তারাই জানেন জাটকা নিধনে রাতে বা দিনে, সকালে বা সন্ধ্যায় সরকারি ছুটির দিনে কিংবা টাস্কফোর্স অভিযানে অংশগ্রহণ করে ফিরে আসার পর কারা জাটকা নিধন মিশনে নেমে পড়ে ।

এতে জাটকা নিধন আশানুরূপ ভাবে বন্ধ করা যাচেছ না। তাই জাটকা নিধন কার্যক্রম পরিচালনার কৌশল পরিবর্তন করতে হবে।

কৌশলগুলো এমন হতে পারে-

প্রথমত: নদী উপকূলীয় ইউপির সকল জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম পুলিশ বাহিনীদের কে জাতীয় মাছ ইলিশ রক্ষায় সম্পৃক্ত করে ৩ মাস মেয়াদী শক্তিশালী কমিটি গঠন করতে হবে ।

দ্বিতীয়ত: জেলার ৩ টি উপজেলার বিশেষ বিশেষ স্থান সমূহে ওই ৩ মাসের জন্যে সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা যেতে পারে ।

তৃতীয়ত : পুলিশ জাটকা নিধনকারীদের আইনের আওয়তায় নেয়ার কাজে নিয়োজিত থাকবে ও কোস্টগার্ড বাহিনী শুধু নদীতে টহলরত অবস্থায় থাকবে। স্থানসমূহ হলো : মতলব উত্তরের মহনপুর ও এখলাছপুর ।

চাঁদপুর সদরের কানুদি মিয়ার বাজার , ডাসাদী, রাজরাজেস্বর , চাঁদপুরের মেঘনা-ডাকাতিয়ার মোলহেড, হরিণা ফেরিঘাট, ইব্রাহিমপুরের রব মুন্সীর বাজার বা বাংলাবাজার ।

হাইমচর উপজেলার ঈশানবালা , চরগাজীপুর , হাইমচর ইউনিয়নের মধ্যচর এলাকায় , চরভৈরবী বাজার , বর্তমান হাইমচর বাজার এবং কালিখোলা লঞ্চঘাট ইত্যাদি। এর ফলে জাল-নৌকা নিয়ে তথাকথিত জাটকা নিধনকারীরা তখন নদীতে নামার দু:সাহস পাবে না। চোরাই পথে নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট জাল ক্রয়ও করবে না ।

এ পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে সরকারের কয়েক কোটি টাকা সাশ্রয় হবে, জাটকা রক্ষা কর্মসূচি আরো সফল হবে, মৎস্য বিভাগ নিয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের অযথা সময় নষ্ট ও দাপ্তরিক কাজের ব্যঘাত কম হবে।  তাই জাটকা রক্ষার কৌশল পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছে।

[ ]লেখক- আবদুল গনি, সহ-সম্পাদক, চাঁদপুর টাইমস[/author]

:  আপডেট ৫:০০ পিএম,  ০৬ মে  ২০১৬, শুক্রবার

ডিএইচ

Leave a Reply