Home / সারাদেশ / জরুরি অবতরণ করতে না পারায় চাঁদপুরের প্রবাসীর করুণ মৃত্যু
জরুরি

জরুরি অবতরণ করতে না পারায় চাঁদপুরের প্রবাসীর করুণ মৃত্যু

শুধু জরুরি অবতরণের অনুমতি না পাওয়ায় একজন বিমানযাত্রীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী কোনো পাইলট যখন যাত্রীর অসুস্থতার কথা বলে জরুরি অবতরণের অনুমতি চাইবেন তখন সবার আগে সেই বিমানকে ল্যান্ডিংয়ের অনুমতি দিতে হবে। সিরিয়ালে থাকা অন্য বিমানকে হোল্ডে রাখতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো ঘটনা। জরুরি অবতরণের অনুমতি চাওয়া বিমানকে আগে নামতে দেওয়া হয়নি। এমনকি বিমান নামার পরও অসুস্থ ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিক ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থাও করেনি।

মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৫ আগস্ট বিমান বাংলাদেশের দাম্মাম থেকে ঢাকাগামী ফ্লাইটে (বিজি-৩৫০)। হতভাগ্য যাত্রীর নাম মো. শাহজালাল (৪২)। বাড়ি চাঁদপুর জেলায়। তিনি দাম্মামের অভিবাসী শ্রমিক ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছানোর এক ঘণ্টা আগে যাত্রীটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিমানের কেবিন ক্রুরা নানা চেষ্টা করেও তাকে কোনোভাবে সুস্থ করতে পারছিলেন না। এ সময় যাত্রীদের মধ্যে কোনো ডাক্তার আছেন কিনা জানতে চেয়ে বিমানের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু যাত্রীদের মধ্যে কোনো ডাক্তার ছিলেন না। এদিকে যাত্রী শাহজালাল তখন বুকের প্রচণ্ড ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন। পাশাপাশি ঘামছিলেন। ধারণা করা হয় তিনি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছেন। এ অবস্থায় তাৎক্ষণিকভাবে বিমান ক্রুদের অনুরোধে পাইলট হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমে বিশেষ বার্তা পাঠান। জরুরি অবতরণের সংকেত ‘মেডে মেডে’ জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করলেও টাওয়ার সেটা আমলে নেয়নি। কিন্তু ফিরতি কোনো বার্তাও দেয়নি এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল। এর মধ্যে বিমানের বেশিরভাগ যাত্রী বিমানটিকে তখন কলকাতায় জরুরি অবতরণ করার অনুরোধ জানান।

কেননা ওই সময় বিমানটি কলকাতা বিমানবন্দরের নিকটবর্তী ছিল। তবে বিমানের পাইলট যাত্রীদের সেই অনুরোধ আমলে নেননি। এমনকি তিনি সময়ক্ষেপণ করে উড়োজাহাজটি নিয়ে যথারীতি শাহজালালের পথে যাওয়া অব্যাহত রাখেন।

এদিকে বিমানবন্দরের কাছাকাছি সীমানায় এসে বিমানটি জানতে পারে, তাকে কোনোভাবে আগে ল্যান্ডিং করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। যথারীতি তার আগে থাকা বিদেশি একটি বিমানকে ল্যান্ডিং করানো হয়। এ কারণে গুরুতর অসুস্থ যাত্রীকে নিয়ে বাংলাদেশ বিমানকে কমপক্ষে ২০-২৫ মিনিট আকাশে চক্কর দিতে হয়।

বিমানটি ভোররাত ৩টা ২৫ মিনিটে যখন ঢাকায় অবতরণ করে তখন যাত্রীরা ভেবেছিলেন ডাক্তার স্ট্যান্ডবাই রাখা আছে। কিন্তু কী দুর্ভাগ্য কোনো ডাক্তার সেখানে ছিল না। বিমান নামার অন্তত ৪৫ মিনিট পর ডাক্তার আসে। তখন তিনি অসুস্থ শাহজালালকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘চিকিৎসকদের মতে ফ্লাইট অবতরণের দুই ঘণ্টা আগে ওই যাত্রীর মৃত্যু হয়।’ অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি দাবি করেন, সেখানে কোনো অবহেলা ছিল না। এটিসি (এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল) থেকে নির্ধারিত নিয়মে ডাক্তার কল করা হয়। এরপর বিমানবন্দরে সংরক্ষিত থাকা ডাক্তারকে বিমানে পাঠানো হয়। ডাক্তার অসুস্থ যাত্রীকে দেখেছিলেন। কিন্তু বিমানেই তিনি মারা যান।

উল্লেখ্য, ফ্লাইটে পাইলট হিসাবে ছিলেন বিমানের চিফ অব সেফটি ক্যাপ্টেন এনামুল হক।

প্রসঙ্গত, এর আগে বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন তোফায়েল আহমেদ দিলদারের অবহেলার কারণে জেদ্দা থেকে ছেড়ে আসা একটি ফ্লাইটে এক যাত্রীর মৃত্যু হয়। গত ১৫ জানুয়ারি বিমানের একটি ফ্লাইট জেদ্দা থেকে ছেড়ে আসা ওই ফ্লাইটটির (বিজি-৩৩৬) দায়িত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন দিলদার আহমেদ তোফায়েল। ফ্লাইটটি উড্ডয়নের (টেকঅফ) পর ইকোনমি ক্লাসের একজন যাত্রী (সৌদি আরব প্রবাসী কবীর আহমেদ) অসুস্থবোধ করেন। কিন্তু বিষয়টি আমলে না নিয়ে পাইলট উড়োজাহাজের ককপিট ছেড়ে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য রেস্ট বাংকে চলে যান।

ওই ফ্লাইটে উপস্থিত যাত্রীদের মধ্যে এবিএম হারুন নামে একজন চিকিৎসক উড়োজাহাজটিকে কাছাকাছি কোনো বিমানবন্দরে অবতরণের পরামর্শ দেন। কিন্তু তোফায়েলের অনুপস্থিতিতে ক্যাপ্টেন ফরিদুজ্জামান কাছাকাছি কোনো বিমানবন্দরে অবতরণ না করে সরাসরি ঢাকায় নিয়ে আসেন। এতে সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে যাত্রীর মৃত্যু হয়। – (যুগান্তর)

টাইমস ডেস্ক/ ৩১ আগস্ট ২০২৩