চাঁদপুর

জননিরাপত্তায় চাঁদপুরে পুলিশ প্রশাসনের ব্যাপক তৎপরতা

*২৫ তারিখের মধ্যে ভাড়াটিয়াদের বায়োডাটা সংশ্লিষ্ট থানায় প্রদান করতে হবে।
* অনিবন্ধিত যানবাহন জেলা শহরে প্রবেশ করতে পারবে না।
* মোটর সাইকেলে চালকসহ ৩ জন আরোহী নেয়া যাবে না।
* থানায় বিচার প্রার্থীদের সাথে সরাসরি কথা বলবেন পুলিশ সুপার।

দেশে চলমান অস্থিতি চাঁদপুর পুলিশ প্রশাসনের ব্যাপক পরিকল্পনা ও কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো বাস্তবায়ন হওয়া সাধুবাদ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।

এর মধ্যে রয়েছে অবৈধ যান চলাচলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, লঞ্চঘাট, থানা চত্ত্বরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থান সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা ও মোটর সাইকেলে চালকসহ ২ জনের অধিক আরোহী না না উঠা, একাধিক পয়েন্টে চেকপোস্ট, শহরে অতিরিক্ত টহল জোরদার, মুখোশধারী মোটর সাইকেলযোগে ছিনতাই চক্রকে ধরতে সাঁড়াশি অভিযান, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ও সে অনুযায়ী প্রতিনিয়ত মাদক বিরোধী অভিযান ও গ্রেফতার, জঙ্গিবাদ ইস্যুতে জনসচেতনতায় ব্যাপক প্রচারণা।

ইতোমধ্যে থানা চত্ত্বরে দালালদের দৌরাত্ম ঠেকাতে চাঁদপুর মডেল থানাকে সিসি ক্যামেরার স্থাপন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) দুপুরে থানার অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে ৭টি এ সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়।

এ ব্যাপারে মডেল থানা অফিসার্স ইনচার্জ ওয়ালি উল্লাহ অলি জানান, ‘মডেল থানাকে সম্পূর্ণ দালাল মুক্ত করতে পুলিশ সুপারের নির্দেশে এসব ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে থানা অভ্যন্তরে গুরুত্বপূর্ণস্থানে ৭টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। নিরাপত্তার নিশ্চিত করণে প্রয়োজনে পর্যায়ক্রমে আরো সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘এ সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে চাঁদপুর মডেল থানাকে তথ্য-প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এর ফলে থানা অভ্যন্তরে বিচারপ্রার্থীদের দালালের খপ্পরে পড়া বন্ধ হবে। আমরা চাই বিচার প্রার্থীরা থানায় এসে যাতে তার অভিযোগ দিতে পারে, সেদিকে সকল পুলিশ কর্মকর্তা দৃষ্টি রাখবে।’

এছাড়া এখন থেকে চাঁদপুর মডেল থানায় আগত বিচারপ্রার্থীদের সাথে স্কাইপির মাধ্যমে সরাসরি কথা বলবেন পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার। মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) চাঁদপুর মডেল থানার কম্পিউটার অপারেটরের কক্ষে এজন্য স্কাইপ স্থাপন করা হয়।

বিকেলে মডেল থানায় আইনী সহায়তা নিতে আসা দু’ ব্যাক্তির সাথে সরাসরি কথা বলে স্কাইফির উদ্বোধন করেন পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার।

চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ ওয়ালি উল্লাহ ওলি জানান,‘পর্যাক্রমে চাঁদপুর জেলার সকল থানায় এই স্কাইপি পদ্ধতি চালু করা হবে। এতে করে আইনী সহয়তা নিতে আসা ব্যাক্তিরা পুলিশ সুপারের সাথে সরাসরি ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে কথা বলতে পারবেন।’

এছাড়া চাঁদপুর পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজ, সার্কিট হাউজ, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বাসভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থান ইতোমধ্যে সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

এদিকে জঙ্গি দমন ও অপরাধীদের চিহ্নিত করতে চাঁদপুর জেলার সব উপজেলা শহরের বাড়িওয়ালা ও মোটর সাইকেল চালকদের প্রতি বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছেন চাঁদপুর পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার।

নির্দেশনায় বাড়ির মালিকদের বলা হয়েছে, নিজ থানার অফিসার ইনচার্জদের (ওসি) কাছ থেকে নির্ধারিত ফরম সংগ্রহ করে ওই ফরমটিতে বাড়িতে বসবাসকারী ভাড়াটিয়াদের নাম, মোবাইল নাম্বারসহ পূর্ণাঙ্গ তথ্যাবলী পূরণ করে জমা দেয়ার জন্য।

এ নির্দেশনায় আগামী ২৫ জুলাই এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় পূরণকৃত ফরমের সাথে ভাড়াটিয়ার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিও জমা দিতে বলা হয়েছে।

বর্তমান দেশের সার্বিক আইন-শৃংখলা রক্ষার্থে এ পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাড়ির মালিকগণের কোনো গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে একই নির্দেশনায় জানানো হয়, ‘সম্প্রতি কেউ কেউ রাস্তায় চালকসহ ৩ জন আরোহী নিয়ে মোটর সাইকেল চালিয়ে থাকে। যা মোটরযান আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থি।’

তাদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে চালক ছাড়া কোনোভাবেই অতিরিক্ত আরো দু’জন বহন করা যাবে না। এরকম পাওয়া গেলে ‘জিরো টলারেন্সে’ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঈদের আগ থেকেই চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজস্ব বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছেন। এ নিয়ে চাঁদপুরের কম্পিউটার-ক্যামেরা বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে সিসি ক্যামেরা ক্রেতাদের সংখ্যা তুলনামূলক বেড়েছে।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা কম্পিউটার সমিতির সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সুমন চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘চাঁদপুরে বাসা-বাড়িতে বা দোকানের নিরাপত্তায় অনেকেই ক্যামেরা লাগাচ্ছেন। সরকারি ব্যবস্থায় বিশেষ স্থানে যেসব ক্যামেরা ব্যবাহার করা হয় সেগুলো কম্পিউটার বাজার থেকেই নেয়া। এগুলোর রেজুলেশন ভালো থাকায়, ভিডিও দেখে অপরাধী চিহ্নিত করা সহজ।’

তিনি আারো জানান, কিছুদিন আগে তার সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত ফুটেজ থেকে পুলিশ ছিনতাইকারীকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে।

জঙ্গি ও নিরাপত্ত ইস্যুতে মুঠোফোনে চাঁদপুর পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘নিরাপত্তার বিষয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে, শুধুমাত্র পুলিশকে প্রশাসনকে দিয়ে হবে না, প্রত্যেকটা ঘর থেকে সামাজিকভাবে দায়িত্ব নিতে হবে।’

তিনি আরো জানান, ‘ফেসবুকের মাধ্যমে কিছু ছেলে-মেয়ে জঙ্গিদের দিকে ধাবিত হচ্ছে, তাই এ বিষয়টি নজর রাখতে হবে।’

জঙ্গিদের তালিকা হাতে নিয়ে চাঁদপুর পুলিশ প্রশাসন কাজ করছেন জানালেও এর সংখ্যা বা বিস্তারিত কিছু বলতে সম্মত হননি তিনি।

About The Author

প্রতিবেদক- দেলোয়ার হোসাইন
Share