Home / শিক্ষাঙ্গন / চিকিৎসা শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য অধিদফতর গঠন করছে সরকার
gov-2

চিকিৎসা শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য অধিদফতর গঠন করছে সরকার

চিকিৎসা শিক্ষা কার্যক্রম দেখভালের জন্য অধিদফতর গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে। বর্তমানে চিকিৎসা শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

২০১৫ সালে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ নিয়ে চরম সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। ফলে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্বতন্ত্র একটি সংস্থা গঠনের উদ্যোগ নিল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ভর্তির দুর্বলতাসহ চিকিৎসা শিক্ষা ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব দূর ও তদারকি বাড়াতে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে।

অধিদফতর গঠন ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্বিন্যাসের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তাব দিতে গত ১৩ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন ও চিকিৎসা শিক্ষা) নাসির আরিফ মাহমুদ।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে একটি সভা করলাম। কীভাবে অধিদফতর গঠন করা হবে তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা মতামত দিয়েছেন। প্রস্তাব প্রণয়নে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে। তারাই সবকিছু বিবেচনা করে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেবে। সব কিছু চূড়ান্ত করতে আরও দুই-তিন মাস লেগে যাবে।’

১৩ জানুয়ারির ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এমন একজন কর্মকর্তা জানান, ১৯৫৮ সালে স্বাস্থ্য পরিদফতর গঠিত হয়। ১৯৮০ সালে এটি স্বাস্থ্য অধিদফতরে উন্নীত হয়। সেই সময়কার আইন-কানুন দিয়েই এটি চলছে। কিন্তু এখন কাজের পরিধি আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। দেশে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এ জন্য ভর্তিসহ চিকিৎসা শিক্ষার বিভিন্ন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। থেকে যাচ্ছে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি। এ জন্য সমালোচনার মুখেও পড়তে হচ্ছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ২৯টি সরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ৩ হাজার ১৬২টি আসন এবং ৬৪টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৫ হাজার ৩২৫টি আসন রয়েছে।

এ ছাড়া নয়টি সরকারি ডেন্টাল কলেজ ও মেডিকেল কলেজগুলোর ডেন্টাল ইউনিট মিলিয়ে বিডিএস কোর্সে মোট ৫৩২টি ও ২৪টি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে ১ হাজার ২৮০টি আসন রয়েছে।

বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. সেলিম বলেন, ‘বর্তমানে চিকিৎসা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় আমাদের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) দারস্থ হতে হয়। স্বতন্ত্র অধিদফতর গঠন করা হলে আমাদের ভোগান্তি কমবে, এটা এ খাতের উন্নয়নে সহায়ক হবে।’

সরকারের এ উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অধিদফতর গঠন করা হলে সমন্বয়ের পাশাপাশি তদরকির যে ঘাটতি আছে তা-ও দূর হবে বলে আমরা মনে করি।’

গত বছরের ১৮ নভেম্বর মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং ২০ নভেম্বর ফল প্রকাশিত হয়। পরীক্ষার দিন সকালে ও আগের রাতে ফেসবুকে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ এনে আন্দোলনে নামে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মেডিকেলে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার ফলাফল স্থগিতসহ এরসঙ্গে জড়িতদের শাস্তি ও পুনঃপরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানান তারা।

এদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে একাধিকবার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ নাকচ করে দেওয়া হয়।

এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের নেতৃত্বে বিশিষ্টজনদের নিয়ে ১৯ অক্টোবর একটি ‘গণতদন্ত কমিটি’ গঠন করা হয়।

কমিটি ১৮ নভেম্বর প্রতিবেদন প্রকাশ করে, প্রতিবেদনে নতুন করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সুপারিশসহ ভর্তির পরীক্ষার বিভিন্ন দুর্বলতা তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরীক্ষা পদ্ধতির ১১টি ধাপের ছয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতরের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিভাগে হয়ে থাকে। যথাযথ নজরদারি না হলে প্রশ্নপত্র পাচার হওয়ার আশঙ্কা এখানেই সবচেয়ে বেশি। মেধাক্রমে এগিয়ে থেকেও অপেক্ষমাণ তালিকায় পরীক্ষার্থীর নাম থাকা, শুধু পাস নম্বর পেয়েও একটি মেডিকেল কলেজের সম্মিলিত তালিকায় ক্রমিক নম্বর থাকা, একই নম্বর পাওয়া একাধিক পরীক্ষার্থীর এলোমেলো মেধাক্রম পরীক্ষা পদ্ধতির অসঙ্গতির বিষয়টি স্পষ্ট করে।

নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ১০:২৪ পিএম, ১৮ জানুয়ারি ২০১৬, সোমবার

এমআরআর