বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে রোগীরা পায়নি উন্নত খাবার

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে সরকার নির্দেশিত উন্নত মানের তেমন কোন খাবার পায়নি চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালের ভর্তিকৃত রোগীরা। এমন একটি বিশেষ দিনে হাসপাতালের রোগীদের মাঝে উন্নতমানের খাবার দেয়ার ঘোষণা থাকলেও তা নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। নামেমাত্র একমুঠো পোলাও এবং বয়লার মুরগির ১পিস মাংসকে তিন ভাগ করে রোগীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে বলে একাধিক রোগীর অভিযোগ।

জানা যায় গত ১৭ মার্চ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২ তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস পালিত হয়েছে। এদিন চাঁদপুর জেলা কারাগার, সরকারি শিশু পরিবার এবং চাঁদপুর সহকারি জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করার ঘোষনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসন।

কিন্তু খবর নিয়ে জানা গেছে, জেলা প্রশাসন থেকে এমন নির্দেশনা এবং ঘোষণা থাকলেও চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীরা তেমন কোনো উন্নত মানের খাবার পায়নি।

১৭ মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুরে এবং রাতে সরেজমিনে গিয়ে রোগীদের কাছ থেকে জানা যায়, ওইদিন রাতে উন্নতমানের খাবার হিসেবে রোগীদেরকে নামে মাত্র এক মুঠো পোলাও, একটি মিষ্টি এবং বয়লার মুরগির মাংসের একটি পিস  ২ থেকে ৩ ভাগ করে রোগীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। 

যেখানে এমন বিশেষ দিনে সকালের নাস্তায় সেমাই মিষ্টি সহ বিভিন্ন উন্নত মানের খাবার দেওয়ার কথা ছিলো। সেখানে হাসপাতালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রোগীদেরকে কলা রুটি এবং ডিম দিয়েছেন। সেখানেও রয়েছে পাউরুটি কলা নিয়ে নানা অভিযোগ। 

দুপুরে এবং রাতে উন্নতমানের খাবার হিসেবে পোলাও এবং মাংস দেওয়ার কথা থাকলেও, নিম্নমানের চাল দিয়ে কোনরকমে পোলাও রান্না করে এবং বয়লার মুরগির মাংস থেকে একটি মাংশের পিস কে ২/৩ ভাগ করে রোগীদেরকে দিয়েছেন। 

হাসপাতালের নিচ তলার গাইনী ওয়ার্ড, ৪র্থ তলার মহিলা ওয়ার্ডের ভর্তিকৃত রোগী মুক্তার মাতা হাজেরা বেগম, মিমের মাতা আমেনা বেগম, জেসমিন,এবং ২য় তলার পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত সুরুজ প্রধানীয়া, ফিরোজা বেগম, সফিউল্লাহ, আব্দুল  হান্নান, আমেনা আক্তার, ইসমাইল খানসহ একাধিক রোগীরা উন্নমানের খাবার প্রসঙ্গে অভিযোগ করে বলেন, আজকের দিনে দুপুর বেলা আমাদেরকে হাসপাতাল থেকে একমুঠো পলাউ, সাথে একটি মুরগির মাংসকে ২/৩ ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। রাতে ছাল না ছাড়ানো আলু, লাউ দিয়ে নিরামিশ আর ডাল,ভাত দিয়েছেন। তারা যে পরিমাণে খাবার দিয়েছে তাতে একজন  শিশুরও পেট ভরার মত নয়।

নিম্নমানের খাবারের পরিমাণ দেখে এবং একটি মুরগির মাংসকে ২/৩ পিস করতে দেখে আমরা জিজ্ঞেস করলে তারা উল্টো আমাদের উপরে উত্তেজিত হয়ে খারাপ ব্যবহার করেন। এমন খাবার দেখে আমরা নিজেরাই লজ্জা বোধ করেছি। এর বাইরে আমাদেরকে একটি করে মিষ্টি দিয়েছেন।

কোনো কোনো রোগী জানান, হাসপাতাল থেকে তাদেরকে যে খাবার দেয়া হয়েছে  সে খাবার না খেয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছি। 

এদিকে ওইদিন রাতে এমন সচিত্র সংবাদ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রকাশ হলে, তার পরদিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রোগীদেরকে উন্নতমানের খাবার হিসেবে পোলাও, মুরগির মাংস এবং ডিম দিয়েছেন বলে খবর নিয়ে জানা গেছে। 

জাতির পিতার জন্ম বার্ষিকীতে হাসপাতালে রোগীদের সাথে এমন অনিয়ম এবং প্রতারণার বিষয়ে জেলা প্রশাসন কৃর্তপক্ষ তদন্ত করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে মনে করছেন সচেতন মহল। 

এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের আলমগীর হোসেন ভূঁইয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, খাবারের ঠিকাদারের দায়িত্বে আমি নেই।  যে রয়েছে তাকে খোঁজ করে বক্তব্য নিন। 

একই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঞ্জিত পোদ্দারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, রোগীদেরকে উন্নতমানের খাবারের বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে দুপুর ২টায় জানিয়েছে। সময় কম থাকায় আমি তাৎক্ষণিক হোটেল থেকে বিরিয়ানি এনে রোগীদের মাঝে বিতরণ করতে বলেছি।

এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার এ কে এম মাহবুবুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, রোগীদেরকে উন্নত মানের খাবার দেওয়া হয়েছে। আমি নিজে সহ তদারকি করে দুপুরে রোগীদের মাঝে বিরিয়ানি এবং মুরগীর মাংস বিতরণ করা করেছি। উন্নত মানের খাবার বিতরণে কোন প্রকার সমস্যা হয়নি বলেও তিনি জানান। 

প্রতিবেদক: কবির হোসেন মিজি, ১৯ মার্চ ২০২২

Share