চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনা ও ডাকাতিয়ার ত্রিনদীর মোহনায় সৃষ্ট হওয়া উত্তাল ঢেউয়ে শহররক্ষা বাঁধে নতুনবাজার-পুরাণবাজার অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
২১ আগস্ট বিকেল ৩টায় শুরু হওয়া জলোচ্ছ্বাসে ৭ থেকে ১২ মিটার উচ্চতার ঢেলে ভাঙন দেখা দেয়। এতে দু’ স্থানের ১শ’ ১৩ মিটার এলাকার ব্লক ধস এবং ১৫টি বসতঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
সোমবার (২২ আগস্ট) সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখানো ভাঙন স্থানে কোনো প্রকার কাজ শুরু হয়নি। তবে ভাঙন স্থান পরিদর্শন করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লা অঞ্চলের চীফ ইঞ্জিনিয়ার মোসাদ্দেক হোসেন।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছেন এ জলোচ্ছ্বাসে শহর রক্ষা বাঁধের নতুন বাজার স্থানে ৬৮ মিটার ও পুরাণবাজার স্থানে ৪৫ মিটার এলাকার সিসি ব্লক ধসে গেছে। সকালে ম্যানুয়ালি সার্ভে করে জানা গেছে, নদী তীরে ২ থেকে প্রায় ৭ মিটার দেবে গেছে। ২২ আগস্ট বিকেলে কুমিল্লা থেকে উচ্চতর একটি প্রতিনিধি দল এসে ডিজিটাল সার্ভে করার পরে ভাঙন স্থানে কাজ শুরু করা হবে।
এ দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, ‘বর্তমানে বড়স্টেশন মোলহেড এলাকায় থেকে মেঘনার ৩শ’ মিটার দূরে পানির গভীরতা ৫০-৬০ মিটার এবং ত্রি-নদীর মোহায় গভীরতা প্রায় ১শ’ ২০ ফুট। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় পানি উন্নয়নবোর্ডের কাছে ২০ হাজার জিও ভ্যাগ স্টকে রয়েছে।’
শহর রক্ষা বাঁধের পুরাণবাজার দুধ হাটা বস্তির আফিল বেপারী, রোকন হাওলাদার, তগদির বেপারী, ফরহাদ, মানিক, খালেক, ছোবাহান, জহির, ফয়সাল, সোহেলসহ বেশ কয়েক জনের ১০টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্থ এবং মদিনা মসজিদ ট্রলার ঘাটের সুমন ইলেক্টনিক্স দোকান নদীতে বিলীন ও আরো ৩টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ সায়লা বেগম ও আফিল বেপারী জানান, প্রতি বছর ২ থেকে ৩ বার তারা মেঘনার ভাঙনের শিকার হয়। তাদের দাবি নদী তীরে স্থায়ীভাবে বাঁধ দিয়ে ব্যবসায়িক এলাকা তথা চাঁদপুরকে রক্ষা করা হোক।
এছাড়া নতুনবাজার প্রান্তের বড়স্টেশন মোহনার বেশ কয়েকটি স্থানের ৬৮ মিটার জায়গার সিসি ব্লব ধসে গেছে এবং পর্যটকদের বসার পাকা বেঞ্চ ভেঙ্গে গেছে। তবে মোলহেড এলাকায় লাল নিশান উড়িয়ে বিপদ চিহ্ন দেখানো হলোও সেখানে পর্যটকদের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত রোববার(২১ আগস্ট) বিকেল ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত মোহনায় হঠাৎ সৃষ্ট হওয়া জলোচ্ছ্বাসে উত্তাল ঢেউয়ে শহরক্ষা বাঁধের নতুনবাজার-পুরাণবাজার অংশে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়।
৫ থেকে ৬ মিটার উচ্চতার একেকটি ঢেউ নদী তীরে আঘাত হানলে ব্যাপক ক্ষতি হয়। রাতেই জেলা প্রশাসক আব্দুস সবুর মন্ডল, চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী নিজামুল হক ভূঁইয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটোয়ারী দুলাল, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নিজামুল হক ভূঁইয়া, নির্বাহী প্রকৌশলী আতাউর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
নদীতে অনবরত তীব্র টেউয়ে বড় স্টেশন মোলহেডের দুই পাশের প্রায় ৩শ’ মিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয় উত্তাল ঢেউ আর নদী ভাঙ্গন পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
রেলওয়ে ক্লাব রোডের দেলোয়ার (৩৫) জানান, ৮৮’র বন্যার সময়ও বড় স্টেশন মোল হেডে পানি উঠেনি। কিন্তু গতকাল সন্ধ্যার পর দেখা গেছে দক্ষিণ দিক থেকে প্রবল বেগে বাতাসের সাথে বিরাট বিরাট ঢেউ এসে আঘাত করতে থাকে। বাঁধের অনেক বস্নক সরে যায় এবং দক্ষিণ পাশের ঢেউয়ের পানি মোলহেডের বাঁধ উপচে পূর্বপাশে প্রচ- গতিতে গড়াতে দেখেছেন। পুরো মোলহেড এলাকা হাঁটু পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে।
অপরদিকে চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি তমাল কুমার ঘোষ, নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন মন্টু গাজী জানান, পুরাণবাজারের পশ্চিমবাজার মদিনা মসজিদ সংলগ্ন পাটিয়াল পট্টির ৩টি দোকান ঘর মেঘনায় বিলীন হয়েছে। হরিসভা, দক্ষিণ বাজার, যুগী পট্টি এবং দোল মন্দির পয়েন্টে বাঁধের অনেক ব্লক দেবে গেছে।
এ সংক্রান্ত আগের প্রতিবেদন- (ক্লিক/টাচ্ করুন) মেঘনার উত্তাল ঢেউ আচড়ে পড়ছে বড়স্টেশন মোলহেডে : তিন দিকে ভাঙন
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৭:৫০ পিএম, ২২ আগস্ট ২০১৬, সোমবার
ডিএইচ