মতলব দক্ষিণ

জাতীয় পর্যায়ে দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা নুরুন নাহার বকুলের জীবনগল্প

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
নুরুন নাহার বকুল একজন শিক্ষাবিদ একজন উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হওয়া একজন শিক্ষিকা। ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার কলাদী গ্রামের ডাক্তার পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।

বাবা প্রয়াত মুক্তার আহমেদ বৃহত্তর মতলবের বিশিষ্ট দলিল লিখক ছিলেন, মা প্রয়াত রাজিয়া আহমেদ গৃহিনী ছিলেন। আট ভাইবোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। তার আরো দু‘বোন একই পেশায় নিয়োজিত।

“নুরুন নাহার বকুল  দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় মায়ের ইচ্ছায় বাল্যবধূ সাজেন। স্বপ্নগুলো তার ডানা মেলতে বাধাগ্রস্থ তখন। কিন্তু বকুল হাল ছাড়েননি। বিয়ের পর ১৯৮৯ সালে মতলবগঞ্জ জেবি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উপবৃত্তিসহ এসএসসি পাশ করেন। তারপর প্রাথিমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯০ সালে নারায়ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের মধ্য দিয়ে শিক্ষকতা পেশা শুরু করেন। এরপর একই বছরের সেপ্টেম্বরে ১৬৫ নং নওগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন।

ওই বছরই তাঁর বড় ছেলের জন্ম হয় । মাতৃত্ব আর সংসারের দৈন্যতাকে সাথী করেই এগিয়েছেন। ১৯৯৩ সালে অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে উপবৃত্তির খরচে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৯৪ সালে মেজ ছেলে আসে তার কোল জুড়ে। যুদ্ধটা আরো তীব্র হয় তার জন্য। লড়াকু মনটাকে আরও শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করেন বকুল।

১৯৯৬ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী ও শিক্ষকতা পেশা থাকাবস্থায় ২০১৪ সালে চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে অনিয়মিত বিভাগে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।

শিক্ষকতা ১৯৯৪-২০০২ পর্যন্ত কয়েক দফা সিপাইকান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ভাঙনের কবলে পড়লে তিনি ওই বিদ্যালয়টিকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করে বেড়িবাঁধের অভ্যন্তরে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করে এলাবাসীর নিকট সমাদৃত হন।

২০০৩ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয়বার মা হন তিনি। ২০০৫ খ্রি,এ যোগদান করেন মতলব মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এ বিদ্যালয়েই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহন করেছিলেন বিধায় নিজের সবটুকু মেধা আর আন্তরিকতার মাধূর্যে সাজিয়ে তুলেছিলেন এটাকে। ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে চারবার, ২০১২ সাল থেকে ২০১৪ সালে জেলা পর্যায়ে তিনবার, ২০১৩ – ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে দু’বার এবং ২০১৪ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষিকা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী “শেখ হাসিনার” কাছ থেকে থেকে শিক্ষা পদক ও সনদ গ্রহন করেন।

বর্তমানে মতলব দক্ষিণ উপজেলার চরনিলক্ষী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। সরকারিভাবে ২১ দিনের বিদেশি প্রশিক্ষণ ও সফর করেছি ১৫ মে ২০১৫ থেকে ০৪ জুন ২০১৫ পর্যন্ত। ভারতের দিল্লী, রাজস্থান, আগ্রা, জয়পুর, আজমীর ভ্রমণ করেছেন।

তার স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাকে আম্মা ম্যাডাম বলে সম্বোধন করে। শ্রেণি পাঠদান, দাপ্তরিক কাজ,সহশিক্ষাক্রমিক সকল কাজ করেন তিনি নিপূণভাবে। তার পদচারণায় মুগ্ধ শিক্ষক-অভিভাবক-শিক্ষার্থীরাসহ এলাকার আপামর জনসাধারণ।

বকুল অবসর সময়ে লেখালেখি করেন। ২০১১ সালে কবিতার বই নবদ্যূতি প্রকাশ হয়। ২০১৩ সালে একক সম্পাদনায় স্মরণিকা চিরন্তন প্রকাশ করেন। এছাড়া তিনি
বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় শিক্ষা বিষয়ক কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, ফিচার ইত্যাদি লিখে যাচ্ছেন। সেরা লেখক হিসেবে বিভিন্ন সংস্থা থেকে একাধিকবার পুরস্কার পেয়েছেন।

শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদান স্বরুপ চাঁদপুর রোটারী ক্লাব থেকে ২০১২ ও ২০১৩ সালে পরপর দুইবার, শাহাজউদ্দিন ফাউন্ডেশন থেকে ২০১১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত চারবার, ২০১৪ সালে শিক্ষা ও চাকুরি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য বেগম রেকেয়া দিবসে জয়িতা পুরস্কার পান।

জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ এ শিক্ষিকে ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ঠুনকো অভিযোগে বরখাস্তের আদেশ দিলেও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজার রহমান মহোদয় সেই বরখাস্তের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে আদেশ প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেন।

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, মতলব দক্ষিণ
১ অক্টোবর ২০১৬

Share