Home / উপজেলা সংবাদ / শাহরাস্তি / চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কে পাথর উঠে যাওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে চালকরা
চাঁদপুর-কুমিল্লা

চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কে পাথর উঠে যাওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে চালকরা

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে শাহরাস্তি অংশে দোয়াভাঙ্গা থেকে ওয়ারুক বাজার পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার রাস্তায় পাথর উঠে যাওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে বলে দাবী চালক ও যাত্রীদের।

গত দেড় মাসে এ সড়কে কমপক্ষে ১০টি দুর্ঘটনায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, শাহরাস্তি উপজেলাধীন ওই সড়কে দোয়াভাঙ্গা থেকে ওয়ারুক বাজার পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে পিচ উঠে গর্তের সৃষ্টি হলে সম্প্রতি সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে সড়কটি সংস্কার করা হয়। নুড়ি পাথর ও পিচ দিয়ে সড়কটি মসৃণ করা হলেও ১ সপ্তাহের মধ্যে সব পাথর উঠে যায়।রাস্তার পাথর সরে যাওয়ায় শুধু পিচের উপর দিয়ে বিভিন্ন দূরপাল্লার বাসসহ মালবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলছে।

চালকদের অভিযোগ রাস্তায় পাথর না থাকায় শুধুমাত্র পিচের উপর গাড়ি ব্রেক করে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ২ মিনিটের বৃষ্টিতে এ সড়কে চলার সময় গাড়ির স্টিয়ারিং এঁকেবেঁকে যায়। ফলশ্রুতিতে প্রায়ই দূর্ঘটনা ঘটছে। স্থানীয়রা জানান, গত ২২ এপ্রিল শুক্রবার রাত পৌনে ৯টায় উপজেলার মেহার স্টেশন এলাকায় পিচ্ছিল রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বোগদাদ সার্ভিসের একটি বাস ড্রেনে গিয়ে পড়ে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও দুটি সিএনজি অটোরিকশা ও একটি প্রাইভেটকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত ৪ মে সকালে মেহের ষ্টেশনের পশ্চিমে পদ্মা এক্সপ্রেসের ১টি ও বোগদাদ সার্ভিসের ১টি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে যায়।

এ ঘটনায় কেউ নিহত না হলেও কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। এ সড়কে চলা চাঁদপুর থেকে ঢাকাগামী পদ্মা এক্সপ্রেসের চালক মোঃ আঃ আজিজ ঢালী জানান, এ রাস্তায় যে ঢালাই দিয়েছে সেটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, এ রাস্তাটা যেভাবে পাথর বিহীন, কনা বিহীন, পর্যাপ্ত মাল বিহীন একমাত্র পিচ দিয়ে ঢালাই দিয়েছে, যা খুবই তৈলাক্ত। ১ মিনিট বা ২ মিনিটের বৃষ্টিতে রাস্তা এতো পিচ্ছিল হয় গাড়ি তো দূরের কথা পথচারী হাটা পর্যন্ত দায় হয়ে পড়ে। যার ফলে প্রতিনিয়ত চলতে সমস্যা হচ্ছে, দুর্ঘটনা হচ্ছে। রাস্তাটি চলাচলের উপযোগী করতে পর্যাপ্ত পরিমান মালামাল দিয়ে সংস্কার করতে হবে।

একই অভিযোগ করেছেন বোগদাদ চালক মোঃ লিটন, আল আরাফাহ চালক মোঃ মিলনসহ অন্যান্য বাস চালকরা। ট্রাকচালক মোঃ আবীর হোসেন জানান, রাস্তায় পিচের কারণে পিচ্ছিল হওয়ায় বৃষ্টির সময় গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। দূর্ঘটনা এড়াতে রাস্তাটি সংস্কার প্রয়োজন। কাভার্ড ভ্যান চালক মোঃ জাফর জানান, বৃষ্টি হলে দূর্ঘটনার আশংকা নিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে।

সিএনজি অটোরিকশা চালক মোঃ কবির হোসেন জানান, বৃষ্টির সময় গাড়ি ব্রেক করলে ৫/১০ হাত দূরে গিয়ে গাড়ি থামে। কয়েকদিন আগেও ২/৩ টা সিএনজি দূর্ঘটনা কবলিত হয়েছে। রাস্তাটি মেরামতে সরকারের কাছে দাবি জানাই।

মোটরসাইকেল চালক মোঃ সুমন আহমদ জানান, রাস্তা এত পিচ্ছিল শুধু বাইক নয় বাস এ মাথায় ব্রেক করলে ও মাথায় গিয়ে পড়ে। এ রাস্তায় ঘন্টায় ৩০ কিলোমিটারের উপরে বাইক চালানো যায় না।

আল আরাফাহ বাসযাত্রী লক্ষীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার মোঃ আবু তাহের চাঁদপুর টাইমসকে জানান, রাস্তা পিচ্ছিল হওয়ায় চালকরা খুব ধীরে ও সতর্ক হয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। দোয়াভাঙ্গা থেকে ওয়ারুক পর্যন্ত এই অংশে প্রাণশংকা নিয়ে পার হতে হয়। একই অভিযোগ করেছেন

কুমিল্লাগামী রিলাক্স বাসের যাত্রী মোঃ রফিকুল ইসলাম, ঢাকাগামী পদ্মা বাসযাত্রী মোঃ আজাদ হোসেন। স্থানীয় মেহের ষ্টেশন এলাকার বাসিন্দা মোঃ শাহ আলম জানান, রাস্তার পিচঢালাই অত্যন্ত ভয়াবহ। হাটলে রাস্তায় জুতার দাগ পড়ে যায়। পাশেই আমার বাড়ি। গত ১ সপ্তাহে এ রাস্তায় আমার চোখের সামনে ১০ থেকে ১৫ টি দুর্ঘটনা ঘটেছে।

শাহরাস্তি থেকে হাজীগঞ্জগামী হাজীগঞ্জ মডেল কলেজের ছাত্র আবদুল্লাহ আল তানভীর খান লিমন চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘রাস্তার যে অবস্থা, গাড়িতে উঠলে বাসায় যেতে পারবো কিনা সে শঙ্কায় থাকি। একই আশংকার কথা জানিয়েছে ওই কলেজের ছাত্র মেহেদী হাসান সাইমুন ও আয়মন হোসেন শিহাব।’

বোগদাদ সার্ভিসের লাইন সুপারভাইজার মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, মেহের থেকে ওয়ারুক পর্যন্ত এই সড়কটিতে অতিরিক্ত বিটুমিন ব্যবহারের ফলে পিচ্ছিল হয়ে খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। গত ১ সপ্তাহে ৮/১০ টি দূর্ঘটনা ঘটেছে। সড়কটি মেরামতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

চাঁদপুর জেলা সিএনজি অটোরিক্সা মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ আবুল হোসেন চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ইতোমধ্যে এ সড়কে যে সংস্কার কাজ হয়েছে তাতে বিটুমিনের পরিমাণ বেশী হওয়ায় দূর্ঘটনা বাড়ছে। এ সড়কের উপর নতুন করে ঢালাই দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের হাজীগঞ্জ অঞ্চলের কালিয়াপাড়া সেকশনের উপ-সহকারি প্রকৌশলী মোঃ রমিজ উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘এখানে পাথর মুখ্য বিষয় না। বিটুমিন স্প্রে করে যে পাথরটা আমরা দিয়েছি সেখান থেকে কিছু পাথর বিটুমিনের সাথে যুক্ত হবে বাকিটা সরে যাবে। একটা পাথর ওই স্তরে পড়লে আরেকটা উপরে পড়লে সেটা থাকেনা। এটার কাজের ধরনটাই এরকম। গাড়ি চলাচলের কিছু দিনের মধ্যে এটা মসৃণ হয়ে যায়। রোদের তাপে বিটুমিন গলে পাথরটা ভিতরে ঢুকে যায়। এটা কোন সমস্যা না এতে রাস্তার স্থায়িত্ব বাড়ে। চালকদের ব্রেক হচ্ছেনা এটা সঠিক না। তারা ভুল বুঝতেছে। এতে মসৃণ রাস্তায় গাড়ি চললে চাকা নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা। চালকরা বিষয়টি সাময়িক ভাবে বুঝছে না।’

প্রতিবেদক: মো.জামাল হোসেন, ১৮ মে ২০২২