চাঁদপুর সদর

চাঁদপুরে ৩ সন্তানের জননীকে জবাই করে হত্যা : মূল আসামী পলাতক

আশিক বিন রহিম, শরীফুল ইসলাম ও আনোয়ারুল হক | আপডেট: ০৭:৫১ অপরাহ্ণ, ২৩ আগস্ট ২০১৫, রোববার

চাঁদপুর শহরের রমহতপুর আবসিক কলোনির ভূঁইয়া বাড়িতে শনিবার রাতে কোহিনুর বেগম (৪০) নামের ৩ সন্তানের এক জননীকে জবাই করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। নিহত কোহিনুর বেগম একই এলাকার ৯০ নং ‘প্রতিজ্ঞা ভিলা’র প্রবাসী আব্দুল মান্নান খানের স্ত্রী। রিপন, শিপন ও তানজিল নামের ওই দম্পত্তির ৩ ছেলে রয়েছে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, শনিবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে একই এলাকার নয়ন বেগমের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। এসময় কোহিনুর বেগমের গলাকাটা লাশটি নয়ন বেগমের খাটের নিচে লুকানো অবস্থায় দেখা গেছে।

খবর পেয়ে চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ লাশ ময়না তদন্তের জন্য থানায় নিয়ে গেছে। তবে হত্যাকারীকে এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। তবে ওই বাড়ির মালিক নয়ন বেগম (৩৫) এর ৫ম শ্রেণিতে পড়–য়া মেয়ে তন্নী (১২)-র বক্তব্যের সূত্রে স্থানীয়রা নয়ন বেগমকে খুনি হিসেবে ধারণা করছেন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে নয়নের বাড়ির এক শিশু মহিলার গলাকাটা লাশটি দেখতে পায়। পরে তার ডাক চিৎকারে এলাকাবাসী ছুঁটে এসে লাশটি শনাক্ত করে পুলিশ খবর দেয়। খবর পেয়ে চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএম এনায়েত উদ্দিন পিপিএম ঘটনাস্থলে ছুঁটে আসেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার বেশ ক’জন জানায়, কোহিনুর বেগমের সাথে অভিযুক্ত নয়ন বেগমের টাকা ও সমিতি কেন্দ্রিক লেনদেন ছিলো। ধারণা করা হচ্ছে সে সূত্রেই হত্যাকান্ড সংঘটিত হতে পারে।

নিহতের স্বামী আব্দুল মান্নান গত ৫দিন পূর্বে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে আসে। তিনি বর্তমানে ঢাকায় রয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো স্থানীয় ক’জন জানায়, রাত সাড়ে ৭টার দিকে একজন মহিলাকে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেঁড়া কাপড় নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখেছে।

কোহিনুর বেগমের বাড়ির ভাড়াটিয়ারা জানায়, ঘটনার দিন মাগরিবের নামাজের পর তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে নয়নের বড়িতে যান। পরে রাত সাড়ে ৯টায় আমরা এই খবর শুনতে পাই।

কোহিনুরের ছোট ছেলে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় সরাসরি তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি, তবে সে অজ্ঞান হওয়ার পূর্বে উপস্থিত লোকদেরকে জানায়, ‘মাগরিবের পর থেকে আমি মাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করে পাইনি এবং মোবাইল বন্ধ’ এ কথা বলতেই তানজিল ঘটনাস্থলে মায়ের লাশ দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।

অভিযুক্ত নয়ন বেগমের মেয়ে তন্নী (১২) এর সূত্রে জানা যায়, তারা দু’বোন মিলে পাশের রুমে টিভি দেখা অবস্থায় তাদের মা নয়ন ও কোহিনুর বেগমের চিৎকার ও ধস্তাধস্তির আওয়াজ শুনতে পায়। এতে তারা রুমে দরজার খুলতে বললে তাদের মা দরজা না খুলে ভেতর থেকে উল্টো আওয়াজ দিয়ে বলে কিছু হয়নি। এর কিছুক্ষণ পর পুনরায় ওই রুমে কাছে গিয়ে তারা দরজা খোলা দেখতে পায়। তবে এ অবস্থায় এবং তারা তাদের মাকে কিংবা কোনো লাশ তখনও দেখতে পায়নি।

এদিকে নয়ন বেগমের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর নানা অভিযোগ রয়েছে। তিনি মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিতেন। তারা সাথে এলাকার অনেকের সাথে বহুবার ঝগড়া-বিবাদ হয়েছে। এছাড়াও তার সাথে বহু পুরুষের সাথে শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগও রয়েছে বলে জানা গেছে।

এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত খুনের অভিযুক্ত নয়ন বেগম (৩৮) কে খুঁজে পায়নি পুলিশ। অভিযুক্ত নয়নের মেয়ে স্বপ্না আক্তার তিশা (১৭) ও তন্নীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫

Share