Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরে ইরি-বোরো মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষাণ-কৃষাণী : ৮৫% ধান কর্তন
paddy-2-...
কৃষকগণ ধান কেটে আনছে

চাঁদপুরে ইরি-বোরো মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষাণ-কৃষাণী : ৮৫% ধান কর্তন

চাঁদপুরে ইরি-বোরো ধান মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষাণ-কৃষাণীরা । ঘূণিঝড় আমফানের তান্ডবের হুশিয়ারির কথা জেনে চাঁদপুর জেলার সকল উপজেলা ও নদীতীরবর্তী এলাকা ও চরাঞ্চলগুলোতে তড়িগড়ি করে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে তারা ব্যস্ত হয়ে উঠছে ।

প্রশাসনিকভাবে চাঁদপুরের ৩টি উপজেলা সদর, হাইমচর এবং মতলব উত্তরের চরের ৮ টি ইউনিয়নে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে ইউএনওদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এসব এলাকায় মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করে রাখতে বলা হয়েছে। পাউবো এবং নৌ-বন্দরের কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। প্রত্যেকটি আশ্রায়ন কেন্দ্র প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। জরুরী অবস্থা মোকাবেলার জন্যে প্রয়োজনীয় খাদ্য মজুদ রাখতে ডিআরআরও কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

গতকাল ও আজ মঙগলবার দু’ দিনের মধ্যে চরাঞ্চলসহ ২ টি সেচ প্রকল্পের পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার জন্যে অনুরোধ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম দুলাল পাটওয়ারী। সভায় ডিডি এলজি, এডিসি জেনারেল, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ,চাঁদপুর প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মিরনসহ জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ির উপ-পরিচালক আব্দুর রশিদ মঙ্গলবার ১৯ মে চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ইতিমধ্যেই চাঁদপুর জেলার সকল উপজেলায় উৎপাদনের ৮৫ % ধান কৃষকদের ঘরে উঠে গেছে । বাকি রয়েছে ধান আজ বা কালের মধ্যেই কৃষকগণ কেটে ঘরে তুলতে পারবে ।

তিনি আরো বলেন , ‘এবারের ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার আবাদ হয়েছে ৬০ হাজার ৮ শ’ ৩০ হেক্টর । এ পর্যন্ত আমরা রিপোর্ট পেয়েছি তা হচ্ছে হেক্টর প্রতি গড়ে ৪ দশমিক ২৪ মে. টন উৎপাদন হয়েছে । ধান সম্পূর্ণ কাটা না হওয়া পর্যন্ত চূড়ান্ত রির্পোাট দেয়া যাচ্ছে না ।’

চাঁদপুরে ইরি-বোরো মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষাণ-কৃষাণী : ৮৫% ধান কর্তন

প্রসঙ্গত , চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ইরি-বোরো চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৬৩ হাজার ২ শ মে.টন চাল নির্ধারণ করা হয়েছে বলে চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে । আবাদ লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৬২ হাজার হেক্টর ।

হাইব্রিড,স্থানীয় ও উন্নত ফলনশীল এ ৩ জাতের ইরি-বোরোর চাষাবাদ করে থাকে চাঁদপুরের কৃষকরা। কম-বেশি সব উপজেলাই ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়ে থাকে । চাঁদপুর সেচ ও মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প, মতলব দক্ষিণ ও হাজীগঞ্জে ব্যাপক ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়।

চাঁদপুররে ৮ উপজলোয় ৪ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ২০১৯-২০ র্অথবছরে ২৪৮ কোটি ৭২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যে সোনালী, অগ্রণী,জনতা ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ঠ ব্যাংকের এক তথ্যে জানা গেছে ।

জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ১১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। বরে মধ্যে চাঁদপুরের বেসরকারি ব্যাংক গুলো বিতরণ করেছে ২০ কোটি টাকা। এ ছাড়াও সরকার এবছর কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যে চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় কম-বেশি হারে ৯৮ লাখ ৭০ হাজার টাকার সার, বীজ ও নগদ অর্থ প্রণোদনা হিসেবে বরাদ্দ দিয়েছে।

এর মধ্যে বীজ বাবৎ ৩৮ লাখ ৮০ হাজার,সার বাবৎ ৪৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং নগদ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে ১০ লাখ ৭০ হাজার টাকা । বিদ্যুৎ খাতে ভর্তূকি রয়েছে সেচ চাষীদের জন্যে ২০ % ।

চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে চাঁদপুর জেলায় ৬২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার ২শ’মে.টন চাল।

প্রাপ্ত তথ্য মতে,চাঁদপুর সদরে ৫ হাজার ৫ শ’৯৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২৩ হাজার ৪শ’৪৫ মে.টন। মতলব উত্তরে ৯ হাজার ৯ শ’ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৮ হাজার ১৪ মে.টন।

মতলব দক্ষিণে ৫ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২১ হাজার ১শ’ ৮ মে.টন। হাজীগঞ্জে ৯ হাজার ৮ শ’ ৬০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪২ হাজার ১ শ’ ৪৯ মে.টন । শাহারাস্তিতে ৯ হাজার ৫ শ’৩৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪২ হাজার ১শ ৮৫ মে.টন। কচুয়ায় ১২ হাজার ২ শ’ ২০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৫১ হাজার ৩ শ’ ২৫ মে.টন।

ফরিদগঞ্জে ১০ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪২ হাজার ৩ শ’৮৭ মে.টন এবং হাইমচরে ৬ শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ হাজার ৫ শ’৮৭ মে.টন চাল।

কৃষকরা বর্তমানে লাঙ্গলের পরিবর্তে ট্রাক্টর,হোচার পরিবর্তে বিদ্যুৎ চালিত স্যালো বা ডিপ নলকূপ দিয়ে পানি সেচ, গোবরের সারের পরিবর্তে বিভিন্ন প্রকার উন্নত রাসায়নিক সার ব্যবহার,বোনার পরিবর্তে সারিবদ্ধ ভাবে ধান রোপণ, উন্নত বীজ, পরিমিত কীটনাশকের ব্যবহার, নতুন নতুন জাতের উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির ব্যবহার ইত্যাদি কারণে ইরি-বোরোর বাম্পর ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষিবিদরা জানান। এ ছাড়াও চাঁদপুর জেলা একটি নদীবিধৌত কৃষি ভিক্তিক অঞ্চল বিধায় কৃষকরা সময়মত চাষাবাদ,বীজ রোপণ বা বীজবপন করে সঠিক পরিচর্যায় পারদর্শী।

আবদুল গনি , ১৯ মে ২০২০
এজি