Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরের প্রতিভাবান গানের পাখি মৌমিতার স্বপ্ন ও সাফল্যের গল্প
Moumita-ahcarjee

চাঁদপুরের প্রতিভাবান গানের পাখি মৌমিতার স্বপ্ন ও সাফল্যের গল্প

শিল্প সাহিত্য আর সংস্কৃতির এক অনন্য উর্বর ভূমি চাঁদপুর ভূমিতে যুগের বিভিন্ন পরিক্রমায় জন্ম নিয়েছে বহু গুণি শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক ও বিশিষ্টজন। অগ্রজদের পথে ধরে এরোমধ্যেই হেঁটে যাচ্ছেন প্রতিশ্রুতিশীল নবীন প্রতিভাবান। যাঁদের সৃষ্টিশীল কর্মদক্ষতা আশান্বিত করছে ভবিষ্যৎ চাঁদপুরের এ অঙ্গনকে নেতৃত্ব দেয়ার।

চাঁদপুরের সম্ভাবনাময়ী সংগীত শিল্পী মৌমিতা আচার্যী তাঁদেরই একজন। সংগীত পরিবারে জন্মনেয়া মৌমিতার শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখবে এটাই স্বাভাবিক। তাই ছেলেবেলা থেকেই তার সংগীতের প্রতি গভীর ভালো লাগা সৃষ্টি হয়। যা বর্তমানে তার ধ্যান-জ্ঞানের সাথে মিশে আছে।

‘স্বপ্ন সেটা নয় যেটা মানুষ ঘুমিয়ে দেখে, স্বপ্ন সেটাই যেটা পূরণের প্রত্যাশা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না’ এপিজে আবুল কালামের এ বাণীর মতো ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরের কণ্ঠযোদ্ধা মৌমিতা আচার্যী স্বপ্ন দেখেছিলেন যে, তিনি একদিন বড় শিল্পী হবেন।

তিনি গানের উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্যে শাস্ত্রীয় সংগীতের আতুড় ঘর ভারতের আলোকিত সংগীত শিক্ষালয় রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নের স্বপ্ন দেখেন। শুধু স্বপ্ন দেখা নয়, স্বপ্ন পূরণের পথে হেঁটে চলেন বিরামহীন।

চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে হিসাব বিজ্ঞানে অনার্স শেষ করে স্কলারশিপের জন্যে আবেদন করেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিলর ফর কালচারাল রিলেশনে। তার চেষ্টা বৃথা যায়নি। মৌমিতা আচার্যী বর্তমানে স্কলারশিপ নিয়ে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোকাল মিউসিক ডিপার্টমেন্টে সংগীতের উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

মৌমিতার গানের হাতেখড়ি একেবারে বাল্যকাল থেকেই। চাচা চাঁদপুরের সুপরিচিত গণসংগীত শিল্পী মনোজ আচার্যীর হাত ধরে শিশু বয়সেই তার গান-হারমোনিয়ামের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে । এরপর ধীরে ধীরে চলতে থাকে সংগীত চর্চা। ২০০৭ সাল থেকে এখনো পর্যন্ত গুরু শঙ্কর আচার্যীর কাছ থেকে সংগীতের তালিম নিচ্ছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ বেতারের নজরুলগীতি তে তালিকাবদ্ধ শিল্পি।

গানের সাথে মিশে থাকার বিষয়ে মৌমিতা বলেন, আমি মনে করি গান হলো একটি গভীর আরাধনার বিষয়। গান শেখার কোন শেষ নেই। তাই আমৃত্যু গান শিখে যেতে চাই।

রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পাওয়ার ব্যাপারে মৌমিতা জানায়, ‘চাঁদপুরের একজন সিনিয়রের কাছ থেকে আইসিসিআর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন্স) স্কলারশিপের ব্যপারে জানতে পারি। পরে তার দিক নির্দেশনা অনুসারে সামনে অগ্রসর হই। অতঃপর স্কলারশিপের জন্য আবেদন, ঢাকায় গিয়ে পরীক্ষা দেয়া, সবশেষে পরীক্ষায় উত্তির্ণ হয়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোকাল মিউসিক ডিপার্টমেন্টে সংগীতের ওপর উচ্চতর পরাশুনা করার সুযোগ পাই। গত ২০ জুলাই এখানে ক্লাশ শুরু করেছি।

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন এবং সেখানকার লেখাপড়ার বিষয়ে মৌমিতা বলেন, ‘ সংগগীতে বর্তমানে কলকাতার ছেলে মেয়েরা অনেক এগিয়ে রয়েছে। কারণ হলো শাস্ত্রীয় সংগীতের আতুড় ঘর হলো ভারত। আর এখানে যারা সংগীত নিয়ে কাজ করেন, তারা সংগীতকে ধ্যান ও জ্ঞান হিসেবে নেন। এখানকান শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক এডভান্সড। শিক্ষকরা অনেক আন্তরিক।

দেশে ফিরে সংগীত নিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে মৌমিতা বলেন, এখান থেকে সংগীত নিয়ে পড়াশুনা শেষ করে আমার দেশে গিয়ে ভালো কিছু করতে চাই। নিজ দেশের মানুষের মাঝেও আমার শিক্ষাটা ছড়িয়ে দিতে চাই। পরিশেষে একজন রুচিবোধ সম্পন্ন শিল্পি হতে চাই।

মৌমিতা আচার্যীর বাব বাসুদেব আচার্যী পেশায় একজন ঔষধ ব্যবসায়ী। মাতা সাধনা আচার্যী গৃহিনী। বাবার চাকরি সূত্রে সপ্তম শ্রেণি অবদি চুয়াডাঙ্গায় লেখাপড়া। এরপর নিজ জেলা শহর পুরাণবাজার মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণীতে ভর্তি হন।

ধারাবাহিকভাবে পুরাণ বাজার ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন সমাপ্ত করেন। সঙ্গীতের সাথে মিশে থেকে এ পর্যন্ত সে বহু জাতীয় প্রতিযোগিতায় পুরস্কার অর্জন করেছেন।

বিশেষ করে জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মেলনে জেলা পর্যায়ে ২য় স্থান, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলায় একাধিক পুরস্কার ও কুমিল্লা বেতার থেকেও একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন।

লিখেছেন- আশিক বিন রহিম
সাহিত্যক ও সাংবাদিক

৬ অক্টোবর, ২০১৮

Leave a Reply