Home / চাঁদপুর / চলতি অর্থবছর ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৫ লাখ মে.টন
ELISH-
ফাইল ছবি

চলতি অর্থবছর ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৫ লাখ মে.টন

দেশে চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন সাড়ে ৫ লাখ মে.টন হওযার সম্ভাবনা রয়েছে । ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৫ লাখ ৩৩ হাজার মে.টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে। আগামি ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের নদ-নদী থেকে জাটকা ধরা নিষিদ্ধকরণ সময়সীমা ছিল।

দেশের প্রজননের সময় জাটকা ধরা নিষিদ্ধকরণ ও ইলিশ ধরা বন্ধসহ সরকারের নানামুখী পদক্ষেপে ইলিশের উৎপাদন বাড়ার এ সম্ভাবনার কথা মঙ্গলবার ১৮ আগস্ট বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নদীকেন্দ্র চাঁদপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও দেশের খ্যাতিমান ইলিশ গবেষক ড.আনিছুর রহমান জানিয়েছেন।

দেশে গত অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন ছিল ৫ লাখ ৩৩ হাজার মে.টন। যেখানে ২০০২-২০০৩ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল ১ লাখ ৯৯ হাজার মে.টন । চলতি অর্থবছরে তা বেড়ে ৫ লাখ ৫০ হাজার মে.টনে হওয়ার কথা রয়েছে । আগামি ৫ বছরে ইলিশের উৎপাদন বাড়বেই ।

তথ্য অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫১ হাজার মে.টন,২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩ লাখ ৮৫ হাজার মে.টন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩ লাখ ৮৭ হাজার মে. টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩ লাখ ৯৫ হাজার মে.টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪ লাখ ৯৬ হাজার মে.টন এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫ লাখ ১৭ হাজার মে. টন এবং ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৫ লাখ ৩৩ হাজার মে.টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে। দেড় দশকে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে আড়াই গুণের বেশি।’

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট,নদীকেন্দ্র চাঁদপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও দেশের খ্যাতনামা ইলিশ গবেষক ড.আনিছুর রহমান আরো বলেন,‘সম্প্রতি ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে অধিক মাত্রায় ডিমওয়ালা ইলিশ ও জাটকা আহরণ বন্ধ করে মাছের অবাধ প্রজনন এবং বিচরণের সুযোগ সৃষ্টি করে ও সহনশীল উৎপাদন বজায় রাখলে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি হতে থাকবে । এবার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি, জাটকা সংরক্ষণ , মা ইলিশ আহরোণ বন্ধ রাখায় ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। এবারের মাছ সুস্বাধু ও বড় আকারের মাছ বেশি আহরিত হচ্ছে । দামও ভালো পাচ্ছে জেলেরা । বাজারে চাহিদাও প্রচুর ।’

প্রসঙ্গত, মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, ইলিশ উৎপাদনে ৬ষ্ঠ অভয়াশ্রম স্থাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নদীকেন্দ্র চাঁদপুর ধারাবাহিকভাবে গবেষণা পরিচালনা করেছে। বরিশাল সদর ও বরিশালের হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা অঞ্চলে মেঘনার শাখা নদীগুলিতে জাটকার প্রাচুর্যতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

সকল গুণাবলীর মাত্রা নদীর জীববৈচিত্র্যের জন্যে অনুকূল। একই অঞ্চলে প্ল্যাকংটনের আধিক্য লক্ষ্য করা যায় যা মাছের খাদ্য প্রাচুর্যতা নিশ্চিত করে। গবেষণালব্ধ সামগ্রিক ফলাফলের ভিত্তিতে জাটকার প্রাচুর্যতা,নদীর পানির গুণাগুণ এবং নদীর পানির প্ল্যাকংটন ইত্যাদি সহ সার্বিক বিবেচনায় জাটকা বা ইলিশের জন্য উক্ত অঞ্চলের পরিবেশ অনুকূল রয়েছে একথা নিশ্চিত হওয়া যায়।

ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে অধিক মাত্রায় ডিমওয়ালা ইলিশ ও জাটকা আহরণ হতে রক্ষা করে মাছের অবাধ প্রজনন এবং বিচরণের সুযোগ সৃষ্টি করার মাধ্যমে সহনশীল উৎপাদন বাজায় রাখাসহ উৎপাদন বৃদ্ধি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ অপরিহার্য। এ অঞ্চলটি অভয়াশ্রম আকারে বাস্তবায়ন হলে বছরে গড়ে ৪ হাজার ৩ শ’কোটি অতিরিক্ত জাটকা ইলিশ জনতায় যুক্ত হবে বলে ধারণা করা যায়।

বরিশাল অঞ্চলের নদ-নদীসমুহ আরো ইলিশ সমৃদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে অভয়াশ্রমটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এমনকি ভৌগলিক অবস্থানগত কারণেও অঞ্চলটি ৮২ কি.মি.অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণার যোগ্য ।

এ প্রেক্ষাপটে এ অঞ্চলকে ৬ষ্ঠ অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা ও স্থাপনের নির্মিত্তে জোর সুপারিশ করা হয় এবং সেটি বাস্তবায়নের পর্যায়ে যায়। এক একটি অভয়াশ্রম হচেছ এক একটি রূপালী ইলিশ উৎপাদনের কারখানা । প্রয়োজন শুধু ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন। তাহলেই বাংলাদেশের জলসীমায় ইলিশ সম্পদ উন্নয়নের ও সহনশীল উৎপাদনের গতিধারা বজায় থাকবে এবং জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ হবে।

আবদুল গনি ,১৮ আগস্ট ২০২০