Home / চাঁদপুর / ‘ইউপি চেয়ারম্যানরা দায়িত্বশীল না হলে গ্রাম আদালত প্রশ্নের সম্মুখীন হবে’
Mazedur Rahman Khan..
চাঁদপুর জেলা প্রশাক মো. মাজেদুর রহমান খান (ফাইল ছবি)

‘ইউপি চেয়ারম্যানরা দায়িত্বশীল না হলে গ্রাম আদালত প্রশ্নের সম্মুখীন হবে’

চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মাজেদুর রহমান বলেছেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যানগণ গ্রাম আদালতে খুব সময় কম দেন। অনেক সময় তারা অযথা কাল ক্ষেপন করেন যার ফলে বিচারপ্রার্থীগণ গ্রাম আদালতের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। নিয়মিতভাবে গ্রাম আদালতের নথি ও রেজিস্টার আপডেট করতে না পারলে গ্রাম আদালত প্রশ্নের সম্মুখিন হবে। এজন্য ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবদের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।’

বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে কচুয়া,শাহরাস্তি, ফরিদগঞ্জ,মতলব উত্তর-দক্ষিণ উপজেলার মোট ৪৪টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সচিব ও গ্রাম আদালত সহকারীদের সঙ্গে গ্রাম আদালতের অগ্রগতি ও বিভিন্ন চ্যালেন্জ নিয়ে ভিডিও কনফারেন্স প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।

‘বর্তমান সরকারের ঘোষিত ইশতেহারের অন্যতম শ্লোগান “গ্রাম হবে শহর”। প্রতিটি গ্রামকে শহরে পরিণত করতে হলে শহরের সকল সেবা গ্রামে নিয়ে যেতে হবে। এজন্য গ্রাম আদালতকে সক্রিয় ও কার্যকর করা খুবই প্রয়োজন যাতে শহরের মত বিচারক-সেবা গ্রামের মানুষ গ্রামেই পেতে পারে।’

আমরা এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই যেখানে মানুষ সহজেই সরকারি সেবা পাবেন। সরকারি সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কোন প্রকার অবহেলা ও কাল ক্ষেপন করা যাবে না। গ্রাম আদালতের সেবা নিশ্চিত করার জন্য ইউপি সচিবদের মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।’

এতে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আব্দুলাহ আল মাহমুদ জামান। নিজ নিজ উপজেলা ভিডিও কনফারেন্সে নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) বৃন্দ। এতে জেলা ও উপজেলায় একযোগে প্রায় ১৬০ জন অংশগ্রহণ করেন।

প্রযুক্তির সুবিধা ব্যবহার করে উপজেলাগুলোর সঙ্গে এ ধরণের ভিডিও কনফারেন্স চাঁদপুরে এই প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত হয়।

তিনি আরো বলেন, ‘প্রকল্পাধীন ৪৪টি ইউনিয়নের মধ্যে যাদের পারফরমেন্স ভালো নয় তাদের কাছে তিনি এর কারণ জানতে চান। একই সঙ্গে যে সকল ইউনিয়ন গ্রাম আদালত ভালোভাবে পরিচালনা করছে তাদের প্রশংসা করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি টামটা-উত্তর, ফতেপুর-পূর্ব ও বালিথুবা-পশ্চিম ইউনিয়নের গ্রাম আদালতের নাম উল্লেখ করেন কারণ তাদের অর্জন খুবই ভালো। ভিডিও কনফারেন্সের সঙ্গে সংযুক্ত গ্রাম আদালতের সকল অংশীদারদের তা অনুসরণ করার পরামর্শ দেন।’

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘কোন কোন ইউপি চেয়ারম্যান প্যানেল সদস্যদের কাছে আদালতের বিচারিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য দায়িত্ব দিতে চান না। এজন্য চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে আদালতের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে। অথচ আইনে সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে প্যানেল-১, ২ অথবা ৩ পর্যায়ক্রমে পরিষদে ও গ্রাম আদালতে দায়িত্ব পালন করবেন।’

তিনি বলেন,‘কোন কোন ইউপি সদস্য এখনো এলাকায় সালিশ-দরবার করেন যার কারণে গ্রাম আদালতের এখতিয়ারাধীন মামলা আদালতের বাইরে নিস্পত্তি হচ্ছে যা আইন-সম্মত নয়।’

ভিডিও কনফারেন্সে গ্রাম আদালতের অগ্রগতি ও চ্যালেন্জ নিয়ে আলোচনা করেন চাঁদপুরের গ্রাম আদালত বিষয়ক ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর নিকোলাস বিশ্বাস।

তিনি বলেন, গ্রাম আদালতের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা খুবই জরুরী। গ্রাম আদালতের বিচার-প্রার্থীদের সাথে সহযোগিতামূলক আচরণ করতে হবে। আদালতের সমন জারী সহ অন্যান্য কাজে গ্রাম পুলিশদের যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে যাতে আদালতের কাজে গতি আসে। এ ব্যাপারে ইউপি সচিবদের মূখ্য ভূমিকা নিতে হবে।

ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণকারী ৪৪টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সচিব ও গ্রাম আদালত সহকারীদের মধ্য থেকে প্রশ্ন উত্থাপন করে বলা হয় যে, গ্রাম আদালতের এখতিয়ারাধীন মামলা পুলিশ থানায় দায়ের হলেও সেখান থেকে মামলাগুলো উচ্চ আদালতে চলে যাচ্ছে কিন্তু আইনি বাধ্যবধকতা থাকায় গ্রাম আদালতে মামলাগুলো আসছে না। এতে সাধারণ মানুষ অযথা ভোগান্তি ও ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন।

এজন্য পুলিশ থানা ও ইউএনও অফিস থেকে এখতিয়ারাধীন মামলাগুলো গ্রাম আদালতে সরাসরি স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে পারলে গ্রাম আদালত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেত এবং মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পেত। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও আইনি কাঠামো তৈরী করা প্রয়োজন যাতে গ্রাম আদালত অসহায়ের সহায় হয়ে ওঠে।

ভিডিও কনফারেন্সে জেলা প্রশাসনের সাথে অংশগ্রহণ করেন স্থানীয় সরকার সহকারী পরিচালক নারায়ন চন্দ্র পাল, সহকারী কমিশনার নুশরাত শারমিন ও মোরশেদুল ইসলাম। সরকারের আইসিটি অধিদপ্তরের সহকারী প্রোগ্রামার মোঃ হারুনুর রশীদ ও পার্থ প্রতীম ঘোষসহ বাংলাদেশ কম্পিটার কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ টেলি-কমুনিকেশন্স লিমিটেডের কর্মকর্তাগণ ভিডিও কনফারেন্স আয়োজনে যাবতীয় কারিগরি সহায়তা প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্পের সহযোগী সংস্থা ব্লাষ্টের জেলা সমন্বয়কারী আমিনুর রহমান সহ উপজেলা সমন্বয়কারীগণ।

আরো পড়ুন-

***চাঁদপুরের গ্রাম আদালতে দেড় বছরে আড়াই সহস্রাধিক মামলা নিষ্পত্তি

*** মামলা জট কমাতে চাঁদপুরে কাজ করছে ৪৪টি গ্রাম আদালত

করেসপন্ডেট
২০ ফেব্রুয়ারি,২০১৯