Home / জাতীয় / ‘গোপন পরিকল্পনা ফাঁস’ : খালেদা জিয়ার ওমরাহ বাতিল
‘গোপন পরিকল্পনা ফাঁস’ : খালেদা জিয়ার ওমরাহ বাতিল

‘গোপন পরিকল্পনা ফাঁস’ : খালেদা জিয়ার ওমরাহ বাতিল

চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক :

তবে কী সরকারের পরিকল্পনা আঁচ করেতে পেরেই ওমরাহ পালন কর্মসূচি বাতিল করলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া? প্রশ্ন হচ্ছে কী সেই পরিকল্পনা? আর তা টেরই বা কীভাবে পেলেন বিএনপি নেত্রী?

ওয়াকেফহাল মহলের মতে, ৫ জানুয়ারির আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে বিএনপিতে নেতৃত্ব বদলের গুঞ্জন উঠছে। বলা হচ্ছে, এই বিএনপিকে দিয়ে হবে না। বেগম জিয়া বয়সের ভারে ন্যুজ্ব। তাকে দিয়েও আর হবে না। তাই কিছু একটা করতে হলে ‘নতুন নেতৃত্ব’ আসতে হবে।

দলের তিনজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার টেলিকথোপকোথন থেকে বিএনপির নেতৃত্ব বদলের বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে গণমাধ্যমে। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান ও লে. (অব) জেনারেল মাহবুবুর রহমানের টেলিকথোপকোথন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। কে বা কারা এই টেলিফোন রেকর্ড প্রকাশ করেছে তা জানা না গেলেও এই ফাঁস করা ফোনালাপ নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি হয়।

আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও সাবেক পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বোধকরি বিএনপির সংস্কারের ব্যাপারে খুবই আগ্রহী। কীভাবে সেই সংস্কার করতে হবে তাও তিনি বাতলে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়াকে দলে থেকে সরিয়ে দিলেই বিএনপির সংস্কার হয়ে যাবে।’ তার এই কথায় খালেদা জিয়াকে দলের নেতৃত্ব থেকে সরানোর আভাস খুবই স্পষ্ট।

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপিকে ভাঙার তৎপরতা নিয়ে গণমাধ্যমে একাধিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এই তৎপরতার সঙ্গে সরকারের একটি বিশেষ সংস্থা জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে পর্দার অন্তরালে তারা একাধিক কুশিলবের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন।

সূত্র জানায়, খালেদা জিয়াকে ঘিরে এমন একটি তৎপরতার কথা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পরই শেষ মুহূর্তে সৌদি আরব সফর বাতিল করলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

খালেদার ওমরাহ বাতিল নিয়ে ঢাকার রাজনৈতিক মাঠে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এ নিয়ে নানান অনুষঙ্গ টেনে আনা হচ্ছে। কেউ বলছেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান সৌদি আরবে যেতে পারবেন না বলেই খালেদা জিয়া যাননি। আবার কেউ বলছেন, তার বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেটি শিমুল বিশ্বাস গ্রেপ্তার হতে পারেন। আর শিমুল বিশ্বাস গ্রেপ্তার হলে খালেদা জিয়ার অনেক গোপন তথ্য বের করে নেবে সরকার। তাই এই সময়ে খালেদা জিয়া সৌদি আরব যেতে চান না।

তবে বিএনপির ভেতরের খবর হলো ওমরাহ পালন করতে গেলে এবার খালেদা জিয়াকে ভয়ানক বিপদের মধ্যেই পড়তে হতো। এমনকি নেতৃত্ব হারানোর ঝুঁকিও ছিল তার। কারণ এ আওয়ামী লীগ সরকার যে অনেক কিছুই করতে পারে তা হারে হারে টের পেয়েছেন বিএনপির হাইকমান্ড।

বিএনপির ওই সূত্রের খবর হলো- খালেদা জিয়া ওমরাহ পালন করতে গেলেই সরকার তার ‘সেই পরিকল্পনা’ বাস্তবায়নে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেতো। খালেদা বিমানে উঠলেই তার দেশে ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতো। শেষ পর্যন্ত বাইরের বড় কোনো দেশের চাপে তাকে দেশে ফিরতে দিলেও ফেরামাত্র গ্রেপ্তার করে সোজা কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হতো।

সরকারের পরিকল্পনায় ছিল খালেদা জিয়া একবার গ্রেপ্তার হলেই দলটির নেতৃত্বে পরিবর্তন আসবে। চেয়ারম্যান, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পদে নতুন মুখ দেখা যেতো। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবও ছয়মাসের বেশি সময় ধরে গ্রেপ্তার হয়ে কারাকারে আছেন। তার মুক্তির বিষয়টি এখন আপিল বিভাগে ঝুলছে।

সরকারের এই ‘ষড়যন্ত্র’র খবর ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সৌদি আরবে ওমরাহ পালন কর্মসূচি বাতিল করেন খালেদা জিয়া। ওমরাহ পালনে খালেদা জিয়ার সৌদি আরব যাবার কথা ছিল গতকাল বুধবার অর্থাৎ ৮ জুলাই। কিন্তু তার আগে ৭ জুলাই মঙ্গলবার খালেদা জিয়া তার গুলশানের কার্যালয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘বেগম জিয়া ওমরাহ পালনে যাবেন, তাই নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি দেখা সাক্ষাৎ করেছেন।’

সৌদি আরবে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা হবে এবং সেখানে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে মা-ছেলের মধ্যে আলোচনা হবে- এমন প্রতিবেদন প্রকাশ হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। কিন্তু বুধবার সকাল থেকেই শোনা যায় খালেদা জিয়া ওমরাহ পালন করতে যাচ্ছেন না।

এ বিষয়ে বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘প্রতিবছরই সৌদি বাদশাহর আমন্ত্রণে আমাদের চেয়ারপারসন ওমরাহ করতে যান। বেগম খালেদা জিয়া রোজার পরও সৌদি আরবে যেতে পারেন। আর এটা সম্পূর্ণ তার উপর নির্ভর করবে।’

তবে নির্ধারিত সময়ে খালেদার সৌদি না যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতা ও অসংখ্য কর্মী এখনও কারাবন্দি। এই মুহূর্তে ম্যাডাম তাদের পাশে থাকার কথা চিন্তা করছেন। ঈদের পর সুবিধাজনক সময়ে তিনি ওমরাহ করতে যাবেন।’

তবে বিএনপির এ নেতা সুবিধাজনক সময়ে খালেদা জিয়ার ওমরাহ পালনের ব্যাপারে আশাবাদী থাকলেও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা কল্যাণ পার্টির সভাপতি সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম জানিয়েছেন- ওমরাহ পালনের জন্য খালেদা জিয়া এবার সৌদি সরকারের আমন্ত্রণই পাননি।

এদিকে প্রতিবছরই ২০ রোজায় সৌদি আরবে গিয়ে সপ্তাহ খানেক অবস্থান করেন খালেদা। গতবছরের রোজাতেও বড় ছেলে তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি ওমরাহ পালন করেছিলেন।

জানা গেছে, এবার মোট ১৩ জনের ভিসা তৈরি ছিল। বুধবার রাতে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের টিকিটও কাটা হয়। এর মধ্যে তারেক রহমান, তার স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমানের লন্ডন থেকে এবং প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিথি, মেয়ে জাফিয়া রহমানের মালয়েশিয়া থেকে খালেদার সঙ্গে যোগ দেয়ার কথা ছিল।

গুঞ্জন রয়েছে, বিভিন্ন মামলায় পলাতক আসামি তারেক রহমান গত ছয় বছর ধরে পরিবার নিয়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। ইতোমধ্যে তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট বৈধতা হারানোয় তিনি এখন ‘শরণার্থী’ হিসেবে দেশটিতে অবস্থান করছেন। তাই এই মুহূর্তে তারেক রহমান লন্ডন ত্যাগ করতে পারছেন না। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি।

আপডেট :   বাংলাদেশ সময় : ১0:৪০ অপরাহ্ন, ২৪ আষাঢ় ১৪২২ বঙ্গাব্দ, বৃহস্পতিবার ০৮ জুলাই ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ

 

চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫

চাঁদপুর টাইমস ডট কমপ্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি