কচুয়ায় গৃহবধূকে মারধর ও হত্যার চেষ্টায় থানায় অভিযোগ

চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার হাসিমপুর গ্রামে ছায়েরা বেগম নামের দুই সন্তানের জননীকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মারধর ও ওড়না দিয়ে গলা চেপে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ ছায়েরা বেগম বাদী হয়ে অভিযুক্ত তার স্বামী আবুল কালাম,সৎ ছেলে রাসেল,ফয়সাল ও একই গ্রামের আমির হোসেনকে অভিযুক্ত করে কচুয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার বিকালে কচুয়া থানার এএসআই দিদারুল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

বাদীর লিখিত অভিযোগ ও সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার ১০নং গোহট উত্তর ইউনিয়নের হাসিমপুর গ্রামের মৃত. হাফিজ উদ্দিনের ছেলে মো. আবুল কালামের সাথে প্রায় ১৮ বছর আগে একই উপজেলার উজানী হাজী বাড়ির সাবেক ইউপি সদস্য মৃত. শহীদ উল্যাহ’র মেয়ে ছায়েরা বেগমের সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের গৃহে এমরান হোসেন (১৫) ও আরমান হোসেন (১১) নামের দুটি পুত্র সন্তান জন্ম হয়।

বাদী ছায়েরা বেগম লিখিত অভিযোগে আরো উল্লেখ করেন, তার স্বামী আবুল কালাম এর আগে পাশ্ববর্তী বুরগী গ্রামে আফরোজা বেগম নামে আরো একটি বিয়ে করেন। তার ওই গৃহে ৪ পুত্র সন্তান রয়েছে। তার স্বামী আবুল কালাম এর সাথে বিয়ের পর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তার বাবা মা নগদ ২ লাখ টাকা,স্বর্ণ গহনা সহ দেড় লক্ষ টাকার মালামাল দেন। এতেও মন ভরেনি পাষন্ড আবুল কালামের।

বিদেশ যাওয়ার কথা বলে তার কাছে ৩ লাখ টাকা দাবি করে। ছায়েরা বেগমের গরীব বাবা টাকা দিতে না পারায় তাকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। পরবর্তীতে আবারো মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে ধার হিসেবে ৩ লক্ষ টাকা দিলে আবুল কালাম বিদেশ পাড়ি দিয়ে ১৫ মাস পর দেশে চলে আসেন।

২২ জুন সকালে গৃহবধূ ছায়েরা বেগমকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আবুল কালাম গলায় ওড়না পেচিঁয়ে ফাঁস দিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা ও শারিরীক মারধর করেন।

এক পর্যায়ে গৃহবধূ ছায়েরা বেগম জ্ঞান হারিয়ে ফেললে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিক্যাল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ছায়েরা বেগম চিকিৎসা শেষে বাড়িতে এসে দেখেন তার ৩টি গরু যার আনুমানিক মূল্য ২ লক্ষ টাকা আবুল কালাম বিক্রি করে বর্তমানে (গাঁ ঢাকা) পলাতক রয়েছে।

গৃহবধু ছায়েরা বেগম জানান, আমি স্বামীর শত নির্যাতন ও মারধর সহ্য করে এই সংসারে ছেলেদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে রয়েছি। ন্যায় বিচার পেতে থানায় অভিযোগ করেছি। আমি আমার ও আমার অবুঝ সন্তানদের অধিকার ফিরে পেতে চাই এবং এই সংসারে থাকতে চাই।

হাসিমপুর গ্রামের অধিবাসী আব্দুস সালাম,অলি উল্যাহ,আইয়ুব আলী,মফিজুল ইসলাম,খোকন প্রধান,ইউসুফ মিয়া ও রাসেল সহ একাধিক লোকজন জানান, গৃহবধু ছায়োরা বেগম একজন নিরীহ ও শান্ত প্রকৃতির সহজ-সরল গ্রাম্য নারী। গ্রামবাসী হিসেবে আমরা কখনো তার কোনো অন্যায় দেখেনি কিংবা তাকে নিয়ে কোনো দিন গ্রামে সালিশ বৈঠক হয়নি। কিন্তু আবুল কালাম অহেতুক ওই নারী (ছায়েরা বেগম) কে বিভিন্ন সময়ে মারধর সহ নানান ভাবে অপবাদ দেয়ার চেষ্টা করছে। তাছাড়া আমরা যতদুর জানি আবুল কালাম ঘটকালি (বিয়ের ঘটক) কাজ করায় পর নারীর আশঙ্কায় আকৃষ্ট থাকে।

সমাজের দায়িত্ববান লোক হিসেবে আমরা সকলেই আবুল কালামের এ অন্যায়ের জোর প্রতিবাদ জানাই। এছাড়া সরলা নারী ছায়েরা বেগম তার স্বামী সংসারে ঠিকে থাকতে যা যা করণীয় আমরা তাই করব।

এসময় কয়েক শতাধিক লোকজন ছায়েরা বেগমের পক্ষে লিখিত ভাবে স্বাক্ষর দিয়ে তার প্রতি আবুল কালাম ও তার সৎ ছেলেদের অন্যায়ের জোরালো প্রতিবাদ করেন।

এলাকাবাসী আরো জানান, আবুল কালাম বর্তমানে টানা গত ৯/১০ দিন বাড়িতে না থাকায় তার স্ত্রী ছায়েরা বেগম তার দুই অবুঝ সন্তান নিয়ে খেয়ে না খেয়ে অতি কষ্টে জীবন যাপন করছে।

এদিকে অভিযুক্ত আবুল কালামের বক্তব্য জানতে তার ব্যবহূত নাম্বারে বারবার চেষ্টা করেও মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাকে পাওয়া যায়নি।

কচুয়া প্রতিনিধি

Share