উম্মে রায়হানা॥
মা, নানি-দাদিদের দেখেই গৃহকর্মকে নিজের ভবিষ্যৎ মনে করে বড় হয় জাপানের কিশোরীরা। কর্মব্যস্ত স্বামীর জন্য রান্না করে ঘর গুছিয়ে আর সন্তান পালন করে জীবন কাটিয়ে দেওয়ার বাইরে খুব বেশি কিছু চিন্তা করে না তারা। অবিবাহিত অবস্থায় ঘরের কাজকে ‘স্থায়ী চাকরি’ হিসেবে দেখা জাপানি নারীরা অনেকেই সংসার জীবনে প্রবেশ করে বুঝতে পারেন বাইরে থেকে স্বপ্নের মতো মনে হলেও কাজটা সত্যিকার অর্থে কতটা কঠিন।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, ২০০৩ থেকে ২০১৩ সালে ‘মেয়েদের কাজ সংসার করা’ এ ধরনের মানসিকতা ধারণ করা কিশোরীর সংখ্যা ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে শতকরা ৪১ দশমিক ৬ ভাগে পৌঁছেছে। জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক সম্পাদিত ন্যাশনাল সার্ভে অন ফ্যামিলি শীর্ষক এক জরিপে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সাংবাদিক ও প্রভাষক তোওকো শিরাকাওয়া বলেন, ‘জাপান গৃহিণীদের জাতি, আজকের দিনে মেয়েদের জন্য আরও নানা রকম কর্মসংস্থান হলেও, প্রচলিত ব্যবস্থা অন্যরকম।’ তবে জাপান সরকার এই পরিস্থিতির পরিবর্তন চায়।
‘এর জন্য অনলাইন শপিং পদ্ধতিকে ধন্যবাদ জানাতে হয়। আমাদের নারী কর্মীদের ভারি পার্সেল বহন করতে হয় না। আর বাড়িতে থাকা নারী গ্রাহকরাও মেয়ে পিয়ন এলে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ বোধ করে।’ এই পরিবর্তনে

এই পরিবর্তনে এগিয়ে আসছে বেসরকারি কোম্পানিগুলোও। সাগাওয়াতা এক্সপ্রেস নামের এক সরবরাহ কোম্পানি নারীর জন্য খণ্ডকালীন কর্মসংস্থান বাড়িয়েছে এবং নমনীয় কর্মঘণ্টার ব্যবস্থা করেছে।
কোম্পানি পরিচালক শোযু হায়াশি বলেন, ‘এর জন্য অনলাইন শপিং পদ্ধতিকে ধন্যবাদ জানাতে হয়। আমাদের নারী কর্মীদের ভারি পার্সেল বহন করতে হয় না। আর বাড়িতে থাকা নারী গ্রাহকরাও মেয়ে পিয়ন এলে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ বোধ করে।’
তবে এই খণ্ডকালীন চাকরিতে আয় খুব বেশি নয়। সরকার নারীর জন্য পূর্ণকালীন কর্মসংস্থান করেছে। এ সব কাজে নারীরা এগিয়ে আসলেও সন্তানের মায়েরা এখনও এগিয়ে আসছেন না খুব বেশি মাত্রায়। এর কারণ জানা যায় ওই জরিপেই। জাপানের পরিবারগুলোতে লৈঙ্গিক শ্রমবিভাজন অত্যন্ত প্রবলভাবে বিরাজমান। বাড়ির পুরুষরা গৃহশ্রমের শতকরা ১০ ভাগেরও কম অংশ সম্পাদন করে থাকে। বাকি পুরো কাজই বর্তায় নারীর ওপর।
‘সরকার আমাদের বিয়ে করে, সংসার সামলে, সন্তান জন্ম দিয়ে, সন্তান পালনের সব দায়িত্ব নিয়ে আবার পূর্ণকালীন চাকরিও করতে বলছে। সরকার কী আমাদের মেরে ফেলতে চায়?’
যদি নারীরা বিয়ে না করে, সন্তান জন্ম না দেয় তাহলে দেশটিতে জনমিতিক সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা আরও মনে করছেন, সব কিছুর ঊর্ধ্বে রয়েছে মানসিকতার সমস্যা। মাতৃত্বকেই নারীর প্রধান দায়িত্ব মনে করে জাপানিরা।
সরকারের এহেন উদ্যোগে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেন অনেক নারীই। তোওকো শিরাকাওয়া জানান, তার অনেক অবিবাহিত ছাত্রী বলেছেন, ‘সরকার আমাদের বিয়ে করে, সংসার সামলে, সন্তান জন্ম দিয়ে, সন্তান পালনের সব দায়িত্ব নিয়ে আবার পূর্ণকালীন চাকরিও করতে বলছে। সরকার কী আমাদের মেরে ফেলতে চায়?’
সূত্র: বিবিসি।
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur