Home / জাতীয় / রাজনীতি / খালেদা জিয়া কারাগারে, দল চালাবে কে?
Khaleda Family

খালেদা জিয়া কারাগারে, দল চালাবে কে?

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৫ বছরের সাজা হয়েছে। এখন তাঁকে নাজিমউদ্দীন রোডে সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।

বিএনপির গঠনতন্ত্রে দল পরিচালনার একক ক্ষমতা দলীয় চেয়ারপারসনকে দেওয়া হয়েছে। তাঁর অনুপস্থিতিতে এই ক্ষমতায় থাকেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কিন্তু তিনিও ১০ বছর ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তা ছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তারেকের ১০ বছর এবং এর আগে অর্থপাচার মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। আইনের চোখে এখন তিনি পলাতক।

বিএনপির প্রধান দুই ব্যক্তির একজন কারাগারে অন্যজন বিদেশে অবস্থান করায় দল কীভাবে পরিচালিত হবে তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই আলোচনা চলছে। সম্প্রতি এ নিয়ে কয়েক দফা আলোচনাও হয়েছে। দলটি বলছে, আগামী কয়েক সপ্তাহ দলের করণীয় চেয়ারপারসন নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ফলে নতুন নীতি গ্রহণের প্রয়োজন হবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা ও পরামর্শে দল চলবে। তিনি দলের দ্বিতীয় ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি। এজন্য তারেকের দেশে ফেরার দরকার আছে কি না জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, না এজন্য তাঁর দেশে ফেরার দরকার নেই। ওখান থেকেই নির্দেশনা দিতে পারবেন।

একই কথা বলছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেছেন, তারেকের পরামর্শে দলের স্থায়ী কমিটি দল পরিচালনা করবেন। কোনো সমস্যা হবে না।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, তারা আশা করছেন খালেদা জিয়া শিগগিরই জামিনে মুক্তি পাবেন। এরপর সবকিছু তাঁর নির্দেশেই পরিচালিত হবে। এই সময়ে তারেক দূর থেকে মূল দায়িত্ব পালন করবেন। তবে তারেকের বক্তব্য প্রচারে হাইকোর্টের বিধিনিষেধ থাকায় তাঁর পক্ষে সরাসরি কিছু করা সম্ভব হবে না। খালেদা জিয়া জামিনে মুক্ত হওয়া পর্যন্ত বিএনপির মূল পরামর্শক থাকবেন তিনি। তাঁর পরামর্শই বাস্তবায়ন করবে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা।

এই সময়ে সংগঠন পরিচালনায় সব কাজ সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনিই দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কর্মসূচি পালন করবেন। মাঠপর্যায়ে নির্দেশনাসহ সব কাজ করবেন। তবে নীতি নির্ধারণী কোনো বিষয়ে মির্জা ফখরুল একক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। এ জন্য তাঁকে বর্তমান স্থায়ী কমিটির নেতাদের ওপর নির্ভর করতে হবে।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ স্থায়ী কমিটির নয় সদস্য। অন্য আট সদস্য হলেন মওদুদ আহমদ, মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, জমিরউদ্দীন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৫(গ) ধারায় সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানকে দ্বিতীয় ক্ষমতাবান ব্যক্তির মর্যাদা দিয়েছে। চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান স্থায়ী কমিটি, নির্বাহী কমিটির সভা ডাকাসহ চেয়ারপারসনের অন্য সব ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দল পরিচালনায় এই দুজন ছাড়া অন্যদের কোনো ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। কেননা এ দুজনের বাইরে কেউই দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠক ডাকতে পারেন না। আর এ বৈঠক না হলে কোনো সিদ্ধান্ত অনুমোদন পায় না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য আজ প্রথম আলোকে বলেন, আগামী সপ্তাহে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। তাঁরা আশাবাদী বিএনপির চেয়ারপারসন জামিন পাবেন। দল পরিচালনায় যে সমস্যা হবে সেটা একেবারেই সাময়িক। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে দলের করণীয় কি হবে সে সম্পর্কে দলীয় চেয়ারপারসন নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী আপাতত কাজ চলবে। পাশাপাশি আজ -কালের মধ্যে তারেক রহমানের সঙ্গে তারা কথা বলবেন। তবে এই মুহূর্তে নতুন কোনো নীতি গ্রহণের প্রয়োজন নেই।

সম্প্রতি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন মাস যে খালেদা জিয়া ছিলেন না (চিকিৎসার জন্য লন্ডনে ছিলেন), আমরা বিএনপি পরিচালনা করেছি না? স্থায়ী কমিটির মেম্বাররাই আমরা সময়-সময় বসে যেটা ভালো মনে করেছি, সেটা মহাসচিব বাস্তবায়ন করেছেন। এ ধরনের কোনো পরিস্থিতি হবে না বলে আমাদের বিশ্বাস। আর যদি হয়, তাহলে আমরা স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সমষ্টিগতভাবে আলোচনা করে আমাদের দল পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেব।’ তিনি বলেন, আমাদের দ্বিতীয় নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে পরামর্শ করে দলের মহাসচিব আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করে দল চালাবেন। দল চালানোর ব্যাপারে কোনো রকমের কোনো সমস্যা হবে না।’ (প্রথম আলো)
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১:০৩ পিএম, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ