Home / বিনোদন / খলনায়ক মিশা বাস্তবে সিগারেটও খান না
Misa Sawdagar

খলনায়ক মিশা বাস্তবে সিগারেটও খান না

মিশা সওদাগর। পর্দায় যাকে হরহামেশাই দেখা যায় সিরিয়াল কিলার, স্মাগলার হিসেবে। সময়ের নাম্বার ওয়ান খলনায়ক তিনি। দীর্ঘ তিরিশ বছরে আটশ’রও বেশি সিনেমায় খল চরিত্রে কাজ করেছেন। ‘কুখ্যাত খুনি, ‘লাল চোখ’, টপ টেরর, দানব, ‘হিংস্র মানব’ সিনেমায় তার দানবীয় মুর্তি দর্শকদের মনে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে। পর্দার সামনে তিনি বরাবরই খারাপ মানুষ। সিনেমার সেই খারাপ মানুষটির আজ জন্মদিন। পঞ্চাশে পা দিলেন তিনি। জন্মদিনে জানালেন, পর্দার পেছনের মিশা সওদাগর কেমন, তার ভিলেন হয়ে উঠার গল্প।

জন্মদিনটা কেমন কাটলো?
খুবই সাদামাটা। আর দশটা মানুষের মতোই। আমি আসলে জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে চাইনা। ফেসবুকের কল্যানে সবাই জেনে গেছে। সবাই সমানে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। অনেকে আবার কেক নিয়ে বাসায় হাজির হচ্ছে। আজ জীবনের পঞ্চাশ বছরে পা দিলাম। মানুষের জীবন একটাই। জন্ম একবারই হয়। যে কটা দিন বেঁচে থাকবো আনন্দেই কাটাবো। পৃথিবীর সব মানুষের কাছ থেকে দোয়া চাই আমি।

প্রায় বিশটা বছর কাটিয়ে দিলেন অভিনয়ে। জানতে চাই আপনি ভিলেন হলেন কেন?
আমার শুরুটা কিন্তু নায়ক হিসেবে। কিন্তু আমার স্টাইলটা ছিল অনেকটা রাগী নায়কের মতো। যেমন একটা সিনেমায় দুটি হিরো থাকবে। একটা হিরো হিরোইনকে মন থেকে ভালোবাসে। আর রাগী হিরো জোর করে নায়িকাকে পেতে চাইবে। আমার মধ্যে অভিনয়ের তীব্রতা ছিল। সেটা দেখে গুরু ছটকু আহমেদ আমাকে ভিলেন চরিত্রে অভিনয়ের পরামর্শ দেন। ৯৩ সালের ‘আশা ভালোবাসা’ ছবিতে ভিলেন হিসেবে প্রথমবারের মতো অভিনয় করি। তখন কিন্তু আমি অভিনয়ের ‘অ’ আ বুঝতাম না। তবে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি কথা বললে আশেপাশের মানুষজন তাকিয়ে থাকতো। আমার মনে হয় মানুষের সবচেয়ে বড় মেধা হলো সুন্দর করে কথা বলা। আর একজন আর্টিস্টের জন্য সেটা অনেক বেশি দরকার। অভিনয় না জানলেও অভিনয়টা করার মতো অন্যান্য যোগ্যতা ছিল। শিক্ষিত ছিলাম। নাচতে পারতাম। জুডো ক্যারাতে করেছি। ফুটবল খেলতাম। এসব অভিনয়ের জন্য আমাকে খুব সহায়তা করেছে। সেই সিনেমায় আমার অভিনয় দেখেই বিভিন্ন জন আমাকে নতুন ছবিতে কাস্ট করে। একযোগে প্রায় আটটা সিনেমায় নাম লেখালাম। হুমায়ুন ফরিদি, রাজিবদের মতো শক্তিমান ভিলেনদের যুগে আমার মতো একজন তরুণ অভিনয়শিল্পী এতগুলো ছবিতে কাজের অফার পাওয়াটা ছিল সত্যিই অবিশ্বাস্য। এই তো! সেই থেকেই আমি ভিলেন।

ভিলেন হওয়ার সুবিধা কি কি?
নায়কের কাজ তো ছকে বাঁধা। চারটা ফাইট, দুইটা গান আর নায়িকাকে বাঁচানো। দেশে নায়কের চরিত্রে কোন বৈচিত্র আসেনি। যে নায়ক সে শুধুই নায়ক। অথচ একজন সাংবাদিক, ডাক্তারও যে নায়ক হতে পারে এমনটা ঘটেনা। নায়ক মানে নায়ক। তার অন্য কোন কাজ নেই। সে শুধু ফাইট করবে, নাচগান করবে আর নায়িকাকে উদ্ধার করবে। কিন্তু ভিলেন কিন্তু শুধুই ভিলেন নয়। সব ধরনের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ আছে। ভিলেন হওয়ার ফলেই এমন কিছু নায়কদের বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছি যারা কিনা আমার চেয়েও কয়েক বছরের বড়! এটা ভিলেন হয়েই সম্ভব হয়েছে। নায়ক রুবেল আমার অনেক বড়। অথচ সিনেমায় আমি ওর বাবার চরিত্র করেছি। ‘নুরা পাগলা’ ছবিতে অমিত হাসানের বাবার চরিত্র করেছি। শুটিংয়ের সময় কি মজার কাণ্ড! ক্যামেরা রেডি। অমিত আমাকে বাবা ডাকতে গিয়েই হেসে ফেলে। আমিও আর হাসি চেপে রাখতে পারিনা।

দর্শকরা তো আপনার বেশিরভাগ ‘চরিত্র’কে গালাগালি করে। এটাকে কতোটা ইনজয় করেন?
আমি যখন যে ক্যারেক্টারটা করি সেটাই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি। সেটা খুনি হলেও সেটা যেমন চরিত্র আবার বড় ভাই হলেও সেটা তেমন চরিত্র। নেগেটিভ রোল দেখে দর্শকরা যেমন গালাগালি করে আবার আমিই যখন ভালো কোন রোল করি সেটা দেখেই মুগ্ধ হয়। ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ সিনেমায় আমার চরিত্রটা দেখে মেয়েরা মুগ্ধ হয়েছে। বলেছে মানুষ এতো ভালো হয় নাকি। ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ ছবিটি দেখে’ অনেকেই বলেছে মাইন্ড ব্লোয়িং। এটা কি আমাদের মিশা ভাই! চেনাই যায়না। ‘নি:শ্বাস আমার তুমি’ সিনেমাটা দেখে রাজ্জাক ভাই পনের মিনিট আমাকে ধন্যবাদ দিয়েছে। আবার ‘দানব’ সিনেমায় আমার দানবীয় চরিত্র দেখে দর্শকরা ভয় পেয়েছিল। ভালো কিংবা মন্দ যে চরিত্রই হোক না কেন সেটা ফুটিয়ে তোলাটাই আমার কাজ।

সরাসরি আপনাকে দেখে ভক্তদের ভয় পাওয়ার ঘটনা আছে কিনা?
আগে তো অনেক ভয় পেত। কিন্তু এখন মিডিয়ার কল্যানে সবাই জানে আমি পর্দার সামনে যতোটা ভয়ংকর, পেছনে অনেক সাদামাটা জীবন যাপন করি। তারা জানেই না, আমি মদ তো দুরের কথা সিগারেট পর্যন্ত খাইনি, দুইবার হজ্জ করেছি। তিরিশ বছরেও সাংবাদিক আমার কোন স্ক্যাণ্ডাল পায়নি। কখনো লেট করে শুটিংয়ে যাইনা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। সবার ভালোবাসায় আমি আজীবন এভাবেই চলতে চাই। সামনাসামনি দেখলে অনেকে আবেগে বুকে জড়িয়ে ধরে।

নিজেকে ভিলেন হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য যে সরঞ্জামাদি লাগে সেগুলো কি দেশীয় সিনেমায় ব্যবহার হয়?
বাংলা সিনেমায় বাজেট খুব কম। স্বল্প পরিসরে নির্মাণ হয় বেশিরভাগ সিনেমা। সেক্ষেত্রে সব সরঞ্জামাদি তো পাওয়াটা কঠিন। যেখানে তিরিশ সেকেণ্ডের অ্যাড তৈরী করতেই পঞ্চাশ লাখ টাকা লাগে সেখানে সিনেমার বাজেট অনেক কম।

নিউজ ডেস্ক ।। আপডেট : ০৫:২৭ এএম, ০৫ জানুয়ারি ২০১৫, মঙ্গলবার
ডিএইচ