Home / বিশেষ সংবাদ / কুমিল্লা বরুড়া জ্বীনপরীর ভন্ড কবিরাজের চিকিৎসায় যুবকের মৃত্যু
কুমিল্লা বরুড়া জ্বীনপরীর ভন্ড কবিরাজের চিকিৎসায় যুবকের মৃত্যু

কুমিল্লা বরুড়া জ্বীনপরীর ভন্ড কবিরাজের চিকিৎসায় যুবকের মৃত্যু

কুমিল্লা প্রতিনিধি :

কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার ভাউকসার গ্রামে জ্বীন পরীর পরিচয় দিয়ে এক মহিলা চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে আসছে। এতে সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। সম্প্রতি ঔ মহিলার কাছে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে প্রাণ দিতে হয়েছে দুলাল নামে এক সৌদি প্রবাস ফেরত যুবককে।

নিহত দুলালের মৃত্যুকে ঘিরে বের হয়ে আসে ভন্ড জ্বীন পরীর রহস্য। সরেজমিন ঘুরে বিভিন্ন সূত্রে পাওয়ার তথ্যে জানা যায়, বরুড়া উপজেলার ভাউকসার ইউনিয়নের ভাউকসার গ্রামের মাজার সংলগ্ন মৃত্যু আব্দুল মান্নানের স্ত্রী অক্ষর জ্ঞান শূন্য মোহছেনারা (২৭) গত প্রায় ১০ বৎসর যাবৎ এলাকায় জ্বীন পরী দিয়ে মানুষের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার নামে প্রতারণা করার অভিযোগ আছে।

এই কথিত কবিরাজ মোহছেনারার কাজ লবন, কেরোসিন তৈল সহ বিভিন্ন মসলা দিয়ে ঔষধ বানিয়ে রোগীর চিকিৎসা করেন। তাঁর জ্বীন পরীর চিকিৎসা নিতে জেলা সহ জেলার বাহিরে বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় অসংখ্য রোগী আসে। এমনই ভাবে একই উপজেলার গালিমপুর গ্রামের আলী আহম্মদের পুত্র সৌদি প্রবাসী দুলাল (৩৩) গলার অসুস্থতা নিয়ে ২০১২ সালের প্রথমে মোহছেনার কাছে মাকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসে। কবিরাজ মোহছেনা জ্বীন চালানের মাধ্যমে মা সাফিয়াকে জানায় তাঁর ছেলে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ রোগ ভাল করতে হলে ৭০ হাজার টাকা দিতে হবে জ্বীন পরীকে খুশি করার জন্য।

ছেলের রোগ মুক্তির জন্য মা রাজি হয়ে প্রথমে ৩০ হাজার টাকা দেন এবং ১ মাসের ঔষুধ নেন। ঔষধ খাওয়া চলাকালীন সময়ে দুলালের ছুটি শেষ হওয়ায় সে সৌদিতে চলে যান।

বাকী ঔষুধ খেয়ে পূনরায় আরো ২০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দুলালের মা আবারও ঔষুধ পোষ্ট মারফতে সৌদিতে পাঠায়। এভাবে দুলাল পূর্বের চুক্তি মোতাবেক ৭০ হাজার টাকার ঔষুধ খান। ঔষুধ খাওয়া কালে মোবাইলের মাধ্যমে কথাবার্তা চলাকালে মোহছেনা তাঁদের সাথে ধর্ম আত্মীয় করে এতে দুলালের মা কবিরাজের বাড়ীতে প্রায় যাতায়ত করে। এক পর্যায় কবিরাজ মোহছেনা দুলালের নিকট স্বর্ণ অলংকার বানানোর নামে ১ লক্ষ টাকা হাওলাত নেন পরে বাড়ীতে ঘর করার জন্য আরো ২ লক্ষ টাকা হাওলাত নেয়, দুলাল বাড়ীতে আসলে দিয়ে দিবে বলে।

দুলাল ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ ছুটিতে বাড়ীতে এসে দুলালের মাকে কবিরাজের বাড়ীতে টাকার জন্য মা সাফিয়াকে পাঠালে মোহছেনা টাকা পরে দিবে বলে তাঁকে সামান্য ঔষধ দিয়ে বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়। ঔষুধ খাওয়ার সাথে সাথে দুলাল কয়েক বার বমি করে বলতে থাকে “মা তুমি কি ঔষুধ খাওয়ালে আমাকে” মা সাথে সাথে কবিরাজ মোছেনাকে দুলালের শারীরিক বিবরণ জানিয়ে ডাক্তারের কাছে নিতে চাইলে মোহছেনা মোবাইলে বাধা দিয়ে বলে কিছুক্ষনের মধ্যে সে ভালো হয়ে যাবে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে না। দুলাল ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে মারা যায়। দুলালের পরিবারে কোন সচেতন আত্মীয় না থাকায় ঐ দিনে তাঁকে পারিবারিক কবরের স্থানে দাফন করা হয়।

এব্যাপারে কবিরাজের বাড়ীতে গিয়ে বিষয়টি জানতে চাইলে ভন্ড কবিরাজ মোহছেনা ঘরে ভিতরে পর্দার আড়াল থেকে জানায়, দুলাল আমার চিকিৎসাধীন ছিল আমি তাঁর কাছ থেকে মাত্র ২৫ হাজার টাকা নিয়েছি। আমার ঔষুধ খাওয়া কালীন সময় তাঁদের সাথে আমার ধর্ম সম্পর্ক হয়। আমি দুলালের মাকে মা ডাকি এবং দুলালকে ভাই ডাকি। দুলাল গত ২০ ডিসেম্বর শুক্রবার আমার বাড়ীতে আসে ঔষুধের জন্য ঔষধ তৈরি না থাকায় পরদিন শনিবার তাঁর মা এসে ঔষুধ নিয়ে যান।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কবিরাজ মোহছেনা বলেন, সে স্কুলে লেখাপড়া করেননি, তাঁর কোন কবিরাজি ওস্তাদ নেই। হাসনাবাদে এক কবিরাজ তাঁকে একটি কবিরাজি বই দিয়েছে। ঐ বই পড়ে সে ঔষুধ বানিয়ে কবিরাজি করে।

জ্বীন পরী হাসিলের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি নিয়মিত নামাজ কালাম পড়ি বিদায় জ্বীন পরীর আচর হয়েছে। তাঁদের মাধ্যমে চালান দিয়ে মানুষের চিকিৎসা করি। কবিরাজের বাড়ীর হাফেজ আব্দুল রহিমের স্ত্রী জানায় ২ বছর পূর্বে সে ডায়বেটিস রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। তাঁর চাচাত দেবরের স্ত্রী কবিরাজ মোহছেনা কিছু বনাজি ঔষুধ কেরোসিনের সাথে লবণ মিশিয়ে খাওয়ায় এতে তাঁর শারীরিক অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। পরে জ্বীনের মাধ্যমে তাঁর ঘর বন্ধ করে সালেহার নিকট ৫০ হাজার টাকা দাবী করে।

দাবীকৃত টাকা দিতে আপত্তি জানালে মোহছেনা সালেহার স্বামীকে মোবাইলে জানায় সালেহার ক্যান্সার হয়েছে তাঁকে বাঁচানো যাবে না। এভাবে সে দিনের পর দিন চিকিৎসা নামে মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে। দুলালের মা সহ স্থানীয়রা তার বিচার চায়।

এ বিষয়ে বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ আবু জাহের বলেন, এটা চিকিৎসার নামে মানুষের সাথে প্রতারণা করা। বিষয়টি আইনের আওতায় আনা উচিত।

চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫