Home / বিশেষ সংবাদ / কাপ্তাই লেকের ইতিবৃত্ত : বছরে ৭ শ’টন মাছ উৎপাদন
kaptai,,,,

কাপ্তাই লেকের ইতিবৃত্ত : বছরে ৭ শ’টন মাছ উৎপাদন

কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণ করে কর্ণফুলী বিদ্যুৎ স্থাপনা প্রকল্পের জন্য যে বিশাল জলাধারটি গড়ে তোলা হয়েছে সেটিই ‘কাপ্তাই লেক’।১৯৬২ সালের বর্ষাকালে সর্বপ্রখম চট্গ্রাম এলাকা ও জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়।

প্রকৃতপক্ষে কাপ্তাই হলো ধনুকাকৃতির বাঁকযুক্ত একটি খাল,যার উজানে রেংখিয়াং নদী ও ভাটিতে পাহাড়ি ছড়া ফ্রিংখিয়াং। প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী বাঁধ দিয়ে বাঁকের উঁচু পাহাড়ি অঞ্চলের শেষ প্রান্তে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে সঞ্চিত পানির বিরাট জলাধার সৃষ্টির পরিকল্পনা করা হয়।

যতদূর জানা গেছে , ইংরেজ শাসনামলে ১৯০৬ সালে চট্টগ্রামের পার্বত্য এলাকায় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে প্রথম পরিকল্পনা করা হয়। এ সংক্রান্ত দ্বিতীয় গবেষণাটি হয় ১৯২৩ সালে। ১৯৪৬ সালে বর্তমান বাঁধ এলাকার ৬৫ কি.মি. উজানে বরকলে প্রকল্প করার প্রস্তাব করেন।

১৯৫০ সালে মার্জ রেনডাল ভ্যাটেন কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স কাপ্তাইয়ের ৪৫ কি.মি. উজানে চিলার্ডাকের একটি সাইট প্রস্তাব করেছিলেন। ১৯৫১ সালে সরকারি প্রকৌশলীরা চিত্মরমকে প্রকল্পের জন্য বেছে নেন। অবশেষে ১৯৫২ সালের শুরুর দিকে বাঁধ নির্মাণের জন্য কাপ্তাইকে নির্বাচিত করা হয়।
পরিকল্পনাটি চূড়ান্ত করে তৎকালীন সরকার কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রস্তাব করে। যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবটি গ্রহণ
করলে ১৯৫৬ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ বাঁধ তৈরির জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হয়। ১৯৫৭ সালে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ‘ইউটাহ ইন্টারন্যাশনাল’ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯৬১ সালের শেষ নাগাদ।

মূল বাঁধটি লম্বায় ২ হাজার ২ শ ’ফুট, প্রস্থে ১ হাজার ৫শ ফুট এবং তলদেশ থেকে উচ্চতা ১শ’১৮ ফুট। বাঁধের ১৬ টি গেট দিয়ে সেকেন্ডে ৫ লাখ ৬২ হাজার কিউসেক ফুট পানি প্রবাহিত হতে পারে। জলাধারটিতে গড় বার্ষিক পানি প্রবাহের পরিমাণ প্রায় ১হাজার ৫শ’ ৬৪ কোটি ঘনমিটার।

১৯৫৭ সালে মূল বাঁধ নির্মাণের সময়েই ‘কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র’র ১ ও ২ নম্বর ইউনিটের নির্মাণকাজও শুরু হয়। এ ইউনিট দু’ টি নির্মাণের মূল কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বল্ডউইন লিমা হেমিলটন’। আর জেনারেটর দেয় ইতালির ‘টেকনোমাছিনো ইতালিয়ানো ব্রাউন বোভেরি’।

দ্বিতীয় ইউনিটটি চালু হয় ১৯৬২ সালের ৮ জানুয়ারি। আর ২৬ ফেব্রুয়ারি ইউনিট-১ থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। ইউনিট দু’ টি থেকে তখন সর্বোচ্চ ৯২ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যেত।

১৯৬৯ সালে প্রকল্পের ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার তৃতীয় ইউনিটের কাজ শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ‘এলিস কালমার’ ৬ ব্লেডের ৬৯ হাজার হর্সপাওয়ার ক্ষমতার ইউনিটটির কাজ শেষ হয় ১৯৮১ সালে। ১৯৮২ সালের ৮ জানুয়ারি থেকে এ ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হয়।

প্রকৌশলীদের সম্ভাব্যতা যাচাই জরিপে দেখা যায়, শুরুর অনুমানের চেয়ে জলাধারটির ধারণক্ষমতা ২৫ শতাংশ বেশি। তাই এ অতিরিক্ত ক্ষমতা কাজে লাগাতে ৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন আরো দ’ুটি অতিরিক্ত জেনারেটর ১৯৮৭ সালে স্থাপন করা হয়। জাপানের ‘হিটাচি’ এ দু’ টি ইউনিটের নির্মাণ কাজ করে। বর্তমানে কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্তমান প্রজন্মের ক্ষমতা সর্বোচ্চ লোডের সময় ২৩০ মেগাওয়াট।

এ হ্রদের পানির ধারণক্ষমতা ৫ দশমিক ২৭ মিলিয়ন কিউসেক। গড়ে বার্ষিক ১৩ দশমিক ২৯ মিলিয়ন কিউসেক থেকে সর্বোচ্চ ২২ দশমিক ২৯ মিলিয়ন কিউসেক পানি প্রবাহিত হয় । যা ক্ষমতার প্রায় চার গুণ বেশি।

বাড়তি পানি ধরে রাখার কোনো সুযোগও নেই। পানির সর্বোচ্চ ব্যবহারে ১৯৯৮ সালের আগস্ট মাসে জাপানের টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার সার্ভিস কোম্পানির (টেপসকো) মাধ্যমে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছিল। টেপসকো এ বিদ্যুৎ প্রকল্পে ৬ ও ৭ নম্বর ইউনিট বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়। অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি অতিরিক্ত প্রবাহিত পানিকে নবায়নযোগ্য শক্তি হিসেবে কাজে লাগানো যাবে বলে তাঁরা মত দেন। প্রকল্পটি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

মানব জীবনে এর প্রভাব বিশ্লেষণে জানা গেছে, জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের পাশাপাশি বিদ্যুতের সহজলভ্যতার কারণে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের মাধ্যমে বিপুল এলাকায় সেচ সুবিধা অর্জন সম্ভব হয়েছে। প্রত্যন্ত বরকল নদীপ্রপাত থেকে শুরু করে রাঙামাটি হয়ে উত্তরে কাসালং-এর সংরক্ষিত বনভূমি পর্যন্ত এলাকায় যাতায়াত লঞ্চ,নৌকা ও অন্যান্য জলযানের মাধ্যমে খুবই সহজ হয়েছে।

জলাধারটি চট্টগ্রাম শহর ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরসহ আশপাশের অঞ্চলকে বন্যার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। কাপ্তাই লেক থেকে বছরে ৭ শ’ টনেরও বেশি স্বাদু পানির মাছ পাওয়া যায়।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় জানা যায় – প্রকল্পের দলিল-দস্তাবেজ অনুযায়ী লেকের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের সর্বোচ্চ ৩৩ দশমিক ২২ মিটার উঁচু পর্যন্ত এলাকাগুলো নিমজ্জিত হওয়া সম্ভাবনা। মূল লেকটির আয়তন ১ হাজার ৭ শ’ ২২ বর্গ কি.মি.। আশপাশের আরো ৭ শ’৭৭ বর্গ কি.মি.এলাকাও প্লাবিত হয় ।

বার্তা কক্ষ
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৩:০০ পিএম, ১৮ আগস্ট ২০১৮, শনিবার
এজি

Leave a Reply