করোনায় আতংকিত না হয়ে সচেতন হওয়ার অনুরোধ করেছেন সৌদিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ। ২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এই অনুরোধ জানান ।
সৌদি আরবে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১শত ৬৫জন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৮ শত ৮৫জন। মারা গেছেন ৫জন, এই নিয়ে সর্বোমোট মারা গেছেন ২১জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৪জন, সর্বমোট সুস্থ হয়েছেন ৩২৮ জন।
নতুন আক্রান্তদের মধ্যে রিয়াদে ৭জন, মক্কায় ৪৮জন, মদিনায় ৪৬জন, জেদ্দায় ৩০জন, দাম্মাম ৪জন, কাতিফ ৫জন, আল-খোবার ১জন, আল খাবজি ৯জন, দাহারান ৪জন, খামিজ মোশায়ে্ত ৬জন, আবহা ২জন, বিসা ১জন, আহাদ রাফিদা ১জন, রাস্তানুরা ১জন খবরটি নিশ্চিত করেছেন সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এই পর্যন্ত চার বাংলাদেশি মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস ও কনস্যুলেট । তাদের মধ্যে করোনা ভাইরাসে মদিনায় একজন ডাক্তার, একজন কোম্পানী ড্রাইভার আরেকজন বিক্রয়কর্মী । রিয়াদে মার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫২ বছর বয়সী একজন হাউজ ড্রাইভার ।
আজ থেকে পবিত্র শহর মক্কা এবং মদিনায় ২৪ ঘন্টা কারফিউ জারি করা হয়েছে । যা পূর্বে ছিল বিকাল ৩ টা থেকে সকাল ৬ টা পর্যন্ত । রাজধানী রিয়াদ সহ অন্যান্য শহরে এখন পর্যন্ত পূর্বের সময় বলবৎ রয়েছে ।
এসময় এই দুই নগরীতে নিজ নিজ বাড়ি থেকে বের হওয়া সর্ম্পূনরুপে নিষিদ্ধ থাকবে। তবে, একান্ত জরুরী চিকিৎসা সেবা ও জরুরী খাদ্যদ্রব্য কেনাকাটা ও জরুরী ব্যাংকিং সেবার জন্য যার যার নির্দিষ্ট বসতি এলাকার ভেতরে অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিতভাবে (সকাল ছয়টা হতে বিকেল তিনটার মধ্যে) বের হওয়া যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত বয়স্করা বের হতে পারবেন। বের হতে হলে প্রতি গাড়িতে ড্রাইভারসহ আরেকজন অর্থাৎ মাত্র দুইজন থাকতে হবে।
শুধুমাত্র গ্রোসারি শপ/ তামউইনাত, ফার্মেসী, ফিলিং স্টেশন ও ব্যাংক ছাড়া সকল প্রকার ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে। কারফিউ আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে মর্মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে জানানো হয়েছে।
একই ভাবে ইতোপূর্বে যাদেরকে কাজের স্বার্থে কারফিউর আওতার বাইরে রাখা হয়েছিল তারা এসব এলাকায় অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিতভাবে চলাফেরা করতে পারবে। এই নির্দেশনা জনস্বার্থ বিবেচনায় জারি করা হয়েছে।
সৌদি পাবলিক সিকিউরিটি অথরিটি জানিয়েছে, লকডাউন এবং কারফিউর মধ্যে যদি কেউ এক প্রদেশ হতে অন্য প্রদেশে যাওয়া জরুরী গুরুত্বপূর্ন মনে করেন তাহলে তাদের ইমেইল roc@ps.moi.gov.sa এ নিজের পরিচয়, ফোন নাম্বার ও কেন যাওয়া প্রয়োজন তার বিস্তারিত উল্লেখ করে ইমেইল করতে হবে। পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করে তার যাওয়ার অনুমতি প্রদান করবে। তবে ইমেইল যেন শুধু অতীব জরুরী বিষয়েই হয়।
অন্যদিকে রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে যাদের জরুরি ভিত্তিতে মেডিক্যালে যাওয়া প্রয়োজন হবে (এম্বুলেন্স সুবিধা ছাড়া) তারা যেন রেড ক্রিসেন্টের নাম্বার ৯৯৭ এ কল করে। প্রয়োজন অনুযায়ী রেড ক্রিসেন্ট তাকে শুধুমাত্র হাসপাতালে যাওয়ার উদ্দেশ্যে জরুরী অনুমতির একটি এস এম এস মোবাইলে পাঠাবে। মোবাইলে এস এম এস পাওয়ার পর শুধুমাত্র হাসপাতালে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হওয়া যাবে। এই সুবিধার অপব্যবহারে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
তবে কোন অবস্থাতেই যেন কেউ অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের না হয়। সকলের মনে রাখা দরকার এই কারফিউ এবং লকডাউন আপনার আমার স্বাস্থ্যের নিরাপত্তার জন্য।
সৌদি আরবে বাংলাদেশি প্রবাসীদের যে কোন প্রয়োজনে রিয়াদ বাংলাদেশ দূতাবাসের টোল ফ্রি হটলাইন ৮০০১০০০১২৫ জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল ৮০০২৪৪০০৫১ নাম্বারে কল করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে ।
জ্বর সর্দি কাশি গলা ব্যথাসহ সাস্থ্যগত বেশি সমস্যা হলে সৌদি সাস্থ্যসেবা ৯৩৭ নাম্বারে কল করে দ্রুত সেবা নেয়ারও অনুরোধ জানানো হয়।
এর আগে ৩১ মার্চ সৌদি আরবে বসবাসরত সৌদি নাগরিক, বৈধ ও অবৈধ সকল প্রবাসীর করোনাভাইরাসের চিকিৎসা বিনামূল্যে প্রদানের জন্য দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম, বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ এক রাজকীয় ফরমান জারি করেন ।
সৌদি হজ্জ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হজ্জ চুক্তি সম্পাদনে ধৈর্য্য ধারণ করার জন্য। কারন, আগে করোনা মহামারি থেকে মানুষকে রক্ষা করা জরুরি। রাজকীয় সৌদি সরকার মানুষের নিরাপত্তার জন্য সম্ভব সব কিছু করবে।
হজ্জ মন্ত্রী বলেন, যারা ওমরাহ পালনের ফি প্রদান করেছেন তাদের সেই ফি ফিরিয়ে দিতে সৌদি আরব প্রতিজ্ঞাবদ্ধ । উল্লেখ্য, সৌদিআরবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রথম দিকে মাত্র পাঁচ দিনে ৮৬ হাজার ওমরাহ যাত্রীকে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছিল কর্তপক্ষ।
প্রতিবেদক:সাগর চৌধুরী,৩ এপ্রিল ২০২০