চাঁদপুর

করোনাভাইরাস নিয়ে এতোটা নির্দয় হবেন না

সতর্কতা আর পেনিক হওয়া এক নয়। ধৈর্যশীল বুদ্ধিমানরা হয় সতর্ক, আর অধৈর্য বোকারা হয় পেনিক। যেই সিদ্ধান্তগুলো এখন নিচ্ছেন খুব পেনিক হয়ে, সেই সিদ্ধান্তুগুলো একসময় অস্থিরতায় ফেলতে পারে নিজেকেই, এই করোনা আতঙ্ক সবসময় থাকবে না, কিন্তু আচরণগুলো থেকে যাবে স্মৃতিতে, ইতিহাস হয়ে।

সতর্কবান হোন কিন্তু নির্দয় আর জালেম হইয়েন না। মনে রাখবেন, অন্ধকার রাতের শেষে ভোরের আলো দেখা যাবেই।

করোনার ভয়ে আজ মৃত ব্যক্তিকে নিজেদের সামাজিক কবরস্থানে পর্যন্ত জায়গা দিবেন না, সেই জায়গা আপনারও না হতে পারে, আপনারই নেয়া এই সিদ্ধান্তে। জানাজা ছাড়া দাফন করবেন, এতটা নির্দয় আর জালেম হবেন না।

করোনার ভয়ে আজ ডাঃ. রোগী দেখবেন না যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কেউ কেউ চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছেন, সেই সিদ্ধান্তে অন্যসব রোগীরাও মারাত্নকভাবে যেভাবে ভুগবে বা ভুগতেছে। এই রোগীরাই আপনাদের আহারের ব্যবস্থা করে, নাহয় আপনার খন্তা কোদাল নিয়েও পেটে ভাত জুটতো না। জমিদারি ভাব আসতো না। এতটা নির্দয় হবেন না।

স্বামী স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে, ভাই ভাইকে, আত্নার আত্নীয়কে ছেড়ে যাচ্ছেন সামান্য এই ছোট্র ভাইরাস করোনার ভয়ে। একদিন তারাই ছিলো আপনার সব, জীবন মরন। আজ সেই মরনকে ভয় করেই ভুলে যাচ্ছেন সবাইকে। এতটা নির্দয় হবেন না।

আল্লাহর ঘর ছেড়ে দিচ্ছেন কোয়ারান্টাইন এর জন্য, সমস্যা নাই, বিদ্রুপাত্মক আচরণ করবেন না, আল্লাহর পবিত্র কালাম কোরআন ছেড়ে দিয়েন না, যে কোরআন আপনাকে আবারো সেই ঘরে নিয়ে যাবে। এই মসজিদ ছেড়ে নাফরমান হবেন না।

গরীব অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ান। জীবন কত ঠুনকো ভেবেছেন? এই মানুষগুলো এখন সবচেয়ে বিপদে আছে, তাদের জীবনটা নিজেকে দিয়ে অনুভব করতে শিখেন, হোম কোয়ারান্টাইন এ থেকে।

সামান্য এক ভাইরাস আপনার সুন্দর মন মননশীলতাকে এভাবে নষ্ট করতে দিয়েন না। মনে রাখবেন এই ভাইরাস মানুষ আর পশুকে চিনিয়ে দিচ্ছে। একদিন এগুলো নিয়েও আলোচানা সমালোচনা করবেন। ভুলগুলোর জন্য অনুশোচনা করবেন।

সতর্কতাসরুপ যে নির্দেশনাগুলো মেডিক্যালিয় বা সায়েন্টিফিক্যালি বলা হচ্ছে তা আপনার ধর্মীয় রীতিতেও লক্ষ করলে সমাধান পাবেন। মহামারীতে রাসূল সাঃ, মহামারী এলাকায় কাউকে প্রবেশ নিষেধ করেছেন, এবং মহামারী এলাকা থেকেও অন্য এলাকায় যেতে নিষেধ করেছেন। যা এখন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হচ্ছে সেরকমই।

পাশাপাশি হাত, নাক, মুখ, চোখ পরিষ্কারের উপর জোড় দিয়ে বলা হচ্ছে। প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহারকরন। যা আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে ওযু তেই করে থাকি। দ্যাটস এনাফ, রিয়েলী দ্যাটস এনাফ, সময়েতে প্রয়োজনে সাবান পানি ব্যবহার করেন, কোন সমস্যা নাই। এটা রেস্পিরেটরী ড্রপলেট, আর ডিরেক্ট কন্টাক্ট এর মাধ্যমে ছড়ায়। অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি সুস্থ ব্যক্তির নাক, মুখ, চোখে পরলে ভাইরাসটি রেস্পিরেটরী ড্রপলেটের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং ফুসফুস নষ্ট করে ফেলে। ভাইরাসটি হাতে লাগলে ঐ হাত নাক, মুখ, আর চোখে লাগলেও এভাবেই ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে কন্টাক্ট হয়ে যায়। সুতরাং কে আক্রান্ত, কে সুস্থ তা বুঝতে, আর আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে যাতে মাস বা গণহারে ট্রান্সমিশন বা ছড়ানো না হয় তা বুঝতেই হোম কোয়ারান্টাইন, আর আইসোলেশনের ব্যবস্থা। সুতরাং পেনিক হয়ে নয়, সিস্টেমেটিকেলি নিয়মগুলো মেনে চললেই হবে, হাত ধুতে হবে ঘন ঘন, অপরিষ্কার হাতে নাক, মুখ, চোখে হাত দিবেন না। আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসায় বা তার সাথে কথাবার্তায়, চলাচলে নিজেকে পিপিই (পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমে) পরিধান করে প্রেটেক্শন নিলে আক্রান্তের সুযোগ নেই। তাকে হাসপাতাল আইসোলেশনে বা হোম কোয়ারান্টাইনে রেখে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা উচিত। এজন্য কিন্তু তাকে সেবা না দিয়ে একেবারে ছেড়ে দেয়া অমানবিক, সে কি সেবা পাওয়ার অধিকার রাখে।

এর চেয়েও অনেকে ভাইরাস, ব্যক্টেরিয়ার সাথে যুদ্ধ করেই বেঁচে আছি, কি মনে হয়? এক করোনা ভাইরাসেই জীবন শেষ হবে আর কিছুতে হতে পারে না? এই করোনায় আমরা নিজেদের সব ঈমান আমল শেষ করে দিবো? মরতে তো হবেই একদিন, “ক্বুল্লু নাফসিন জা’ইকাতুল মাউত” আল-কোরআন।

এই ভাইরাস কি আমাদের সাময়িকের জন্যও ভালো কিছু দেয়নি? সাময়িক আল্লাহভীতি তাকওয়া অর্জন করতে শিখায় নি? সাময়িক পারিবারিক বন্ধনটা মজবুত করেনি? যুবক যুবতীর অবাদ অসামাজিক কার্যকলাপ সাময়িক বন্ধ করেনি?

তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, সাময়িক ভালো গুলো হয়ে যাক স্থায়ী। সাময়িক নির্দয় আর জালেমি কাজগুলো বন্ধ হয়ে যাক স্থায়ীভাবে । সতর্ক হোন নিদর্শনাগুলো থেকে, ভরসা রাখুন সেই মহান সত্তার প্রতি।

লেখকঃ মাসুম রাব্বানী
এমএসসি ইন মাইক্রোবায়োলজি (অধ্যয়নরত)
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

কর্মস্থলঃ সিনিয়র স্টাফ নার্স, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, চাঁদপুর।

Share