Home / উপজেলা সংবাদ / কচুয়া / কচুয়ার শহীদ উল্যাহ মিয়াজী আর বেঁচে নেই
শহীদ উল্যাহ

কচুয়ার শহীদ উল্যাহ মিয়াজী আর বেঁচে নেই

চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ৯নং কড়ইয়া ইউনিয়নের সুবিদপুর গ্রামের কৃতিসন্তান, শ্রদ্ধেয় শহিদ উল্লাহ বাচ্ছু। তিনি ছিলেন ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয়। রহিমানগর বি.এ.বি. উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্ত্বের সাথে এসএসসি পাস করেন। কুমিল্লা কোর্টবাড়ি পলিটেকনিক্যালের ছাত্র হিসেবে তিনি ছিলেন মেধা তালিকায় শীর্ষে।

১৯৬৯ সালে ছাত্রলীগের ১১ দফা আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী ও গণঅভ্যূত্থানে গণজাগরনের অগ্রসেনানী ছিলেন শহিদ ভাই। ১৯৭০ এর আওয়ামীলীগের বিজয়ের নির্বাচনে কচুয়া থানা ও বরুড়া থানা নির্বাচনী এলাকার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম.এ. রশিদ প্রধানের বিশ্বস্ত সহচর ছিলেন তিনি।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে কচুয়া থানা স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি এডভোকেট মোবারক হোসেন, শহিদুল্লা মিয়াজী বাচ্ছুসহ আমরা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে কচুয়ার ছাত্র জনতাকে স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত করতে সাহসী ভূমিকা পালন করি।

কচুয়া হতে কালিয়াপাড়া হয়ে চাঁদপুর-কুমিল্লা-ঢাকা যাতায়াতের তৎকালীন কচুয়ার একমাত্র পাঁকা রাস্তায় লুন্তি গ্রামের খন্দকার বাড়ির সামনে পাঁকা রাস্তা কেটে ট্রেঞ্চনির্মাণ, কচুয়া ডাকবাংলার পূর্ব পার্শ্বের কচুয়া বাজারে ঢোকার একমাত্র কাঠের পুলটি উপড়ে ফেলে এবং বিভিন্ন ভাবে বেরিকেট তৈরী করে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কচুয়ায় আগমনের পথে প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিল। সারা রাত্র ব্যাপী এদুর্ধস্য অপারেশনে ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত প্রতিরোধ যোদ্ধারা রাতের খাবার ও সকালে খেজুরের গুড়ে পাঁকানো খোলা পিঠার (বাপাপিঠা) নাস্তার অতূলনীয় স্বাদ শহিদ ভাইসহ সকলের মুখে মুখে ছিল। আমার মায়ের হাতের পাকের তিনিসহ অনেকেই প্রশংসা করতেন। এ দু’সাহসী প্রতিরোধ ব্যবস্থায় মোবারক সাহেব, শহিদ সাহেব, তরিক মুন্সী, সালাউদ্দিন মানিক, আমি লেখক আনোয়ার সিকদার, রুহুল আমিন (চেয়ারম্যান), মফিজ (চেয়ারম্যান), আবু তাহের, ইঞ্জিনিয়ার কাজী রফিক, মজিবুর রহমান, নূরুল ইসলাম, হাবিব, সন্তোষ সেন, মন্নান, খলিল ভাই এবং রুনু সহ বহুছাত্র যুবক বঙ্গবন্ধুর উত্তাল ভাষণে উজ্জ্বিবীত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।

কচুয়ার বর্তমান সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শহিদ ভাইসহ আমরা বিপুল পরিমাণ ছাত্র-যুবক মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলাম। বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্থ সহচর তৎকালীন মাননীয় গণপরিষদ সদস্য আ: আউয়াল, মাননীয় এমপিএ, আলহাজ্ব সিকান্দর আলী, আওয়ামীলী সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি এম.এ. রশিধ প্রধানের পরামর্শে শহিদভাই সহ আমরা কচুয়া থানায় রক্ষিত ত্রি-নট-ত্রি গাধা রাইফেল চিনিয়ে নিয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেছেন বঙ্গবন্ধু কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ অবসরপ্রাপ্ত ফ্লাইট লেঃ ফজলুল করিম, বিমান বাহিনীর ছুটিতে থাকা সিরাজুল ইসলাম, আঃ জলিল, আনছার কমন্ডার আ: গফুর মাষ্টার, আঃ মতিন, ইউটিসি মেলিটারী ট্রেনিং প্রাপ্ত আঃ লতিফ মজুমদার সহ অনেকেই। পাক সেনাদের নির্মমতায় টিকতে না পেরে আমরা অনেকেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্রহাতে মরণ-পণ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি।

শহিদুল্লাহ সাহেব নেতার নির্দেশে দেশে থেকে মুক্তিযুদ্ধাদের খাওয়া দাওয়া, যাতায়াত সুবিধা এবং নিরাপদ শেল্টারের ব্যবস্থার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভূক্ত হওয়ার তেমন জোর প্রচেষ্টা তিনি করেন নাই। তবে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে অনলাইনে আবেদনের তালিকায় তাঁহার নাম লিপিবদ্ধ আছে।

কর্মজীবনে তিনি সরকারে জেলা ত্রান ও পুর্নবাসনের জেলা কর্মকর্তা হিসেবে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন শেষে অবসরে চলে যান।

একজন বিনয়ী, ভদ্র, সদালাপী হিসেবে শহিদ ভাইয়ের সাথে আমার ছিল হৃদয় নিংড়ানো গভীর সম্পর্ক। তিনি একজন দক্ষ সংগঠক। সেই সুবাদে তিনি কুমিল্লাস্থ কচুয়া সমিতির সম্মানিত উপদেষ্টা। এক সময় কুমিল্লা মহানগরের চকবাজর কচুয়া স্টোরের মালিক হিসেবে উল্লেখিত সমিতির প্রতিষ্ঠায় আমি এবং আমার বড় ভাই মাওলানা সফিকুল ইসলামের অবদান ছিল।

শহিদ উল্যাহ মিয়াজী বাচ্চু স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা এবং সর্বশেষ গাজীপুর সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বহু প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। গত ২০ মে ২০২২ শুক্রবার দুপুরে গাজীপুর সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭-৮ মাস চিকিৎসাধীন অবস্থায় পৃথিবীর সকল কিছুর মায়া মমতা ত্যাগ করে মৃত্যুর পরপারে চলে যান তিনি।

ঢাকা গাজীপুর মরহুমের ১ম জানাজা শেষে ওইদিন রাত্র ১০ টার সময় চাঁদপুরের কচুয়া উপজেল সদরের অতি নিকটে সুবিদপুর নিজ গ্রামের স্কুল ও মাদ্রাসা মাঠে ২য় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, আওয়ামীলীগ সহ সর্বস্তরের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, কুমিল্লাস্থ কচুয়া সমিতির নেতৃবৃন্দ বহু ওলামায়ে কেরামসহ বিভিন্ন সমাজপতিক এবং সর্ব সাধারনের উপস্থিতিতে মরহুমের জানাজায় ছিল উপচেপড়া ভীড়। মরহুমের বাবা আলহাজ্ব আঃ লতিফ মাষ্টারের পাশেই তাঁকে কবরস্থ করা হয়।
মরহুমের মৃত্যুতে কচুয়ার মাননীয় এমপি জননেতা ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, উপজেলার চেয়ারম্যান শাহাজান শিশির, পৌরসভার মেয়র নাজমুল আলম স্বপন, যুদ্ধকালীন ডেপুটি কমান্ডার অপারেশন আলহাজ্ব মোঃ জাবের মিয়া ও ৯নং কড়ইয়া ইউনিয়ন পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান আলহাজ¦ আব্দুস ছালামসহ বহুব্যক্তিবর্গ মরহুমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন।

কচুয়ার মুক্তিযুদ্ধের এই সংগঠকের মৃত্যুতে কচুয়ার সকল কুক্তিযোদ্ধা ও সর্বস্তরের মানুষের মাঝে নেমে আসে শোকের ছায়া। কচুয়ার মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যথিত হৃদয়ের করুন আত্মনাদ পরম দয়াময় আল্লাহ যেন, মরহুমের পরিবারকে এ শোক সইবার শক্তিদান করেন এবং মরহুমকে বেহেস্তের উচ্চ মোকাম দান করেন। আমিন।

প্রতিবেদক: জিসান আহমেদ নান্নু, ২৫ মে ২০২২