বিশেষ সংবাদ

একত্রে ওদের ৩ জনের বিয়েতে বেদে পল্লীতে আনন্দের বন্যা

উৎসবের রঙ লেগেছে বেদে পল্লীতে। শুক্রবার (০৭ অক্টোবর) ওদের বিয়ে। চোখেমুখে নানা স্বপ্ন আর চমৎকার ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর তিন তরুণী। ভোর থেকেই সবার মনে বেজে চলেছে বিয়ের সানাই।

মজিরন আক্তার (১৮), মাছেনা খাতুন (১৮) ও লিমা বিবি (১৯), এই তিন তরুণীর জীবনে শুক্রবার ভিন্ন একদিন। জীবনে নতুন এক অধ্যায়ে পা রাখছেন তারা। তিন-তিনটি বিয়ের আয়োজনে এখন ধুমধাম কাণ্ড গোটা বেদে পাড়ায়।

গরু, মুরগির রেজালা, দই, ফিরনি, চিনিগুড়ো চালের পোলাও- রান্নার সৌরভে এখন ম ম অবস্থা ঈদ গাঁ মাঠ। যেখানে আয়োজন চলছে এই বিয়ের।

গ্রামের সবার মুখেই এখন ওদের কথা। পুরো গ্রামের মানুষের দাওয়াত। আসবেন বাইরের অতিথিরাও। তবে যাদের বিয়ে, তাদের পরিবারে আয়োজন নিয়ে নেই কোনো দুঃচিন্তা। একরকম নির্ভার আর উৎফুল্ল চিত্তেই রয়েছে তরুণীদের পরিবার। কারণ সব আয়োজনের নেপথ্যেই পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি হাবিবুর রহমান, পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি। বিয়ের কেনাকাটা থেকে কন্যা দান, অতিথি আপ্যায়ন, উপহার, সব আয়োজনই হচ্ছে তার নিবিড় তত্বাবধানে।

মেয়েগুলো যেন তারই! ওরাও জানে হাবিবুর রহমান তাদের পিতৃসম। বাবার হয়ে দায়িত্ব ও কর্তব্যের সব বোঝা যে নিজের ঘাড়েই তুলে নিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

কেন? প্রশ্ন মাটিতে না পড়তেই চটপট উত্তর মজিরন আক্তারের বাবা মোস্তাকিন মিয়ার। অকপটে জানান, মেয়েকে জন্ম দিয়েছিলাম। ছিলাম কন্যাদায়গ্রস্ত বাবা। অভাব দারিদ্রতা ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। অন্ধকার আর কুসংস্কার আচ্ছন্ন আমাদের গোটা গ্রাম। আজ প্রকৃত বাবার দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান।

‘‘বছর তিনেক আগের অতীতে ফিরে যান মোস্তাকিন। মেয়ের বয়স তখন সবে ১৫। বিয়ে দেওয়ার সব আয়োজন চূড়ান্ত। তবে গরীব মানুষ। আপনারা যাকে বলেন বাল্য বিবাহ। এটাই ছিল আমাদের রীতি। হাবিবুর রহমান স্যার তখন ঢাকার পুলিশ সুপার। খবর পেয়ে ছুটে এলেন আমার আঙিনায়। বোঝালেন বাল্য বিয়ের কুফল সম্পর্কে‍,’’ যোগ করেন তিনি।

আরও বললেন, স্যার (হাবিবুর রহমান) বরকে যখন স্থিরই করে ফেলেছেন। ভেঙে ফেলার প্রয়োজন নেই। মুলতবি রাখুন। বয়স হোক। আমি নিজেই আয়োজন করে আপনার মেয়ের বিয়ে দেবো। হলোও তাই। শুক্রবার তিনি নিজে থেকেই মেয়েকে তুলে দিচ্ছেন বরের হাতে।

লিমা বিবি আর মাছেনা খাতুনের গল্পগুলোও অভিন্ন।

লিমা বিবির মা অভাবি বিবি। নামের উপযুক্ততা খুঁজে পাওয়া যায় পরিবারে। জীর্ণতার সঙ্গে ক্লিষ্টতাও আষ্টেপিষ্ঠে বেঁধে রেখেছে পরিবারটিকে।

অভাবি বিবি জানান, জীবনে এতো খুশি হইনি। আইজ আমাগো জীবনে আনন্দের দিন। আমার মাইয়াডারে নিজের মাইয়া মনে কইরা হাবিব স্যার সব আয়োজন করছেন। নতুন বর তুইলা দেন আমার মাইয়াডারে।

পোড়াবাড়ি সমাজকল্যাণ সংঘের সাধারণ সম্পাদক রমজান আহামেদ বাংলানিউজকে জানান, হাবিবুর রহমান স্যার ঢাকার এসপি থাকা অবস্থাতেই বেদেদের জীবন-মান উন্নয়নে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। তার হাত ধরেই বদলে যেতে শুরু করে বেদেপল্লী। উত্তরণ নামের একটি পোশাক তৈরি কারখানা স্থাপন করা হয় এখানে। যেখানে কাজ করছেন অসংখ্য বেদে নারী। নিজেরাই হয়েছেন স্বচ্ছল। আমরা বলেছি- বর-কনের সুন্দর জীবন যাপনের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব নিয়েছেন হাবিব স্যার। তাদের প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। বিয়ের আয়োজন এখন, তা নিয়েই সরগরম গোটা এলাকা। যেখানে হাবিবুর রহমান স্যার আমাদের মধ্যমণি।

সকাল থেকেই বেশ ব্যস্ত সাভার মডেল থানার এএসপি মাহবুবুর রহমান। আয়োজনের খুঁটিনাটি। সব কিছুর দেখভাল করছেন তিনি।

বেদে পল্লীতে কথা হয় মজিরন আক্তারের বর ছাদ্দাম হোসেনের (২২) সঙ্গে। তিনি জানান, ‘দিনটি আসলেই জীবনের গুরুত্বপূর্ণ। আমার বিয়েতে এতো বড় বড় মানুষ থাকছেন। বিষয়টি ভাবলেই ভীষণ রোমাঞ্চিত হচ্ছি।’

গোটা আয়োজনের নেপথ্য পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান। জানান, ওরা সবাই আমার মেয়ের মতোন। বিয়ের সব আয়োজনের দায়িত্ব আমার। শুক্রবার আমার মেয়েদের বিয়ে। এক অর্থে আনন্দের। অন্যদিকে বিষাদের। তারপরও কন্যাদের সুপাত্রের হাতে তুলে দিতে পারার মধ্যে এক ধরনের আনন্দ রয়েছে। সেই আনন্দে বিভোর। (বাংলানিউজ)

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৫:৪০ পিএম, ০৭ অক্টোবর ২০১৬, শুক্রবার
ডিএইচ

Share