Home / লাইফস্টাইল / এ্যাড.লুৎফুর রহমান ছিলেন চাঁদপুরের একজন নজরুল প্রেমিক
adv.-lutfur

এ্যাড.লুৎফুর রহমান ছিলেন চাঁদপুরের একজন নজরুল প্রেমিক

চাঁদপুরের এককালের প্রবীণ আইনজীবী মরহুম এ্যাড.আলহাজ্ব লুৎফুর রহমান খান ছিলেন সত্যিকারেরএকজন নজরুল প্রেমিক। জাতীয় কবি নজরুল ইলামের রচনাবলী, সাহিত্য চর্চ্চা, সাহিত্য ও কাব্যে অবদান, কবির জীবনধারা ও বৈচিত্র্য, সৈনিক জীবন, তাঁর কাব্য ইতিহাস-ঐতিহ্য,সুনাম-সুখ্যাতি এবং নজরুল সাহিত্য-কর্মের বিস্তৃতি লাভ ও নজরুলের তিন-তিনবার চাঁদপুরে আগমনের বিজরিত স্মৃতি তুলে ধরার জন্য এ প্রবীণ আইনজীবী মরহুম এ্যাড. আলহাজ্ব লুৎফুর রহমান খান ২০০১ সালে ‘ নজরুল গবেষণা পরিষদ, চাঁদপুর নামে একটি পরিষদ গড়ে তোলেন। নজরুলের অনেক গ্রন্থ তিনি পড়েন ও সংরক্ষণে রাখেন।

চাঁদপুরের ক’জন আইনজীবীকে নিয়ে তিনি এটি গড়ে তোলেন শের-ই-বাংলা রোড়, বিষ্ণুদির ৩৮০ নং বাড়ির একটি কক্ষে। যা আজোও তাঁর স্মৃতি হিসেবে কক্ষটি শূন্য অবস্থায় পড়ে আছে।

এ্যাড. লুৎফুর রহমান খান ১৯২০ সালে হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখালের প্রতাপপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৩৫ সালে এসএসসি, ১৯৩৭ সালে এইচএসসি ও ১৯৩৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেন এবং ১৯৪১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন।Abdul-Ghon

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থেকেই তিনি পড়াশুনা করেন। তিনি প্রথমে ১৯৪৫ সালে ঢাকা এবং পরবর্তীতে চাঁদপুরে আইন ব্যবসা শুরু করেন। তিনি ছিলেন চাঁদপুরের একজন প্রবীণ আইনজীবী। দীর্ঘ ৫০ বছর আইন ব্যবসা পরিচালনা করেন। বেশ সুখ্যাতির মধ্যেই আইন পেশায় সারাজীবন কাটান এবং ২০১১ সালের ৬ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াবস্থায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আবাসিক হলে বিভিন্ন অবসর সময়ে দেশের তৎকালীন ছাত্র রাজনীতি ও প্রেক্ষাপট নিয়ে অনেক আলাপ আলোচনা করার সুযোগ পান বলে জানা যায়। কেননা বঙ্গবন্ধুর রুমমেট ছিলেন তিনি। মরহুম এ্যাড.লুৎফুর রহমান হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি সংসদীয় আসন থেকে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ থেকে এমপি নির্বাচন করেন। তিনি ছিলেন তৎকালীন মুসলিম লীগের জেলা সভাপতি।

এছাড়াও তিনি ছিলেন হাজীগঞ্জের বেশ ’কটি মাদ্রসা, মসজিদ, স্কুল ও কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও অভ্যন্তরীণ কমিটির সম্মানিত সদস্য। প্রতাপপুর বাইতুল আমান জামে মসজিদ ও চাঁদপুরের কাদির মিজি জামে মসজিদ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।

মাও.ভাসানী ও শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হকের রাজনৈতিক অনুসারী ছিলেন বলে তাঁর নামে অনুসারে চাঁদপুর বিষ্ণুদি চক্ষু হাসপাতালের সামনের সড়কটি ‘শের-ই-বাংলা রোড’ নামে নামকরণ করেন বর্তমান হাজিগঞ্জ-শাহরাস্তি আসনের এমপি মেজর অব.রফিকুল ইসলামের চাচাত বোন ও তাঁর সহধর্মিণী ডা.রওশান আরা।

তাঁর সহধর্মিণীর নাম ডা.রওশন আরা বেগম। ডা.রওশান আরার জন্ম নাওড়া পঞ্চগ্রাম পাটোয়ারি বাড়ি,শাহরাস্তি। তিনি কলকাতার শাফায়েত স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং হোমিওপ্যাথিক পরীক্ষায় পাশ করে সনদ নিয়ে দেশে এসে ঢাকায় চিকিৎসা সেবা শুরু করেন। তিনিও একজন নজরুল অনুরাগী ছিলেন। যার ফলেই জাতীয় কবিকে নিয়ে তারা উভয়ই কাজ করার উদ্যোগী হন।

কেননা তিনি সে সময়ে পিতার চাকুরির সুবাদে কলিকাতায় থাকার সৌভাগ্য লাভ করেন। শাহরাস্তি পঞ্চগ্রাম এর নাওড়া পাটোয়ারি বাড়ির ড.এম এ সাত্তার তৎকালীন শিক্ষা সচিব ও গণশিক্ষার প্রবর্তক ও করফুলেন্নেসা মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মরহুমা ডা.রওশান আরার চাচাত ভাই। ডা.রওশান আরা ২০১৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

রেখে যান তাঁদের ৬ ছেলে ও তিন মেয়ে। প্রথম জন ক্যাপ্টেন তইমুর খান,দ্বিতীয় জন ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল কাইউম,তৃতীয়জন হানিফ আল মামুন (ব্যাবসায়ী),চতূর্থজন অধ্যাপক জামির খান,৫ম জন আবুল মনসুর (মৃত) এবং ষষ্ঠজন স্কাউটার অধ্যাপক মো.ওয়ালিদ হোসেন (বাংলা বিভাগ) সিএএলটিস। সবাই পারিবারিকভাবে নজরুল অনুরাগী ।

(তথ্যসূত্র : ছোট ছেলে স্কাউটার অধ্যাপক মো.ওয়ালিদ হোসেন খান থেকে নেয়া হয়েছে । )

আবদুল গনি , অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী , চাঁদপুর । ২৪ নভেম্বর ২০২০