Home / জাতীয় / এসএসসি-সমমানের পরীক্ষা শুরু সোমবার
ডা. দীপু মনি
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি : ফাইল ছবি

এসএসসি-সমমানের পরীক্ষা শুরু সোমবার

শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি বলেছেন,‘ কিছু প্রতারক চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া বা মিথ্যা প্রশ্ন তৈরি করে দ্রুত গুজব ছড়িয়ে দেয়। এ বিষয়ে আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সর্বোচ্চ সতর্ক করে দিয়েছি। পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যাতে কোনো রূপ অনৈতিক কাজে বা প্রতারণার ফাঁদে না জড়ান সে বিষয়ে সকলকে আরো দায়িত্বশীল ও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।’

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা সোমবার ৩ ফেব্রুযারি শুরু হচ্ছে । প্রথমদিন এসএসসিতে বাংলা প্রথমপত্র, মাদ্রাসায় দাখিলে কুরআন মাজিদ বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। সকাল ১০ টায় পরীক্ষা শুরু হবে। পরীক্ষার্থীদের ৩০ মিনিট আগে নিজ নিজ সিটে বসতে হবে।

পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোর ২শ গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী ছাড়া জনসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস রোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পরীক্ষা সংক্রান্ত অপরাধ দমনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশও (ডিএমপি) আলাদা একটি নির্দেশনা জারি করেছে। এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমেও নির্দেশনা জারি করা হবে।

নিরাপত্তার লক্ষ্যে জেলার ক্ষেত্রে ট্রেজারি এবং উপজেলার উপজেলাস্থ থানা মালখানায় প্রশ্নপত্রের ট্রাংক সংরক্ষণ করা হবে। ট্রেজারিতে রক্ষিত প্রশ্নপত্র পরীক্ষা শুরুর ৩ দিন আগে দিনভিত্তিক ও সেটভিত্তিক সর্টিং করে সিকিউরিটি খামে সংরক্ষণ হবে। ট্রেজারি-থানা থেকে প্রশ্ন কেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য দূরত্ব অনুযায়ী বেশি সময় আগে প্রশ্ন না এনে প্রয়োজনীয় সময় নির্ধারণ করে প্রশ্নপত্র আনা হবে।

এতকিছুর পরও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসের বিজ্ঞাপন প্রচার চলছে। এ কারণে এবার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। যদিও প্রশ্নপত্রের শতভাগ সিকিউরিটির নিশ্চয়তা দিচ্ছেন শিক্ষা প্রশসানের কর্তাব্যক্তিরা।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক জিয়াউল হক বলেন,‘শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের আমরা আশ্বস্ত করছি যে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। দুষ্কৃতকারীরা কোনো ফাঁক-ফোঁকর খুঁজে পাবে না। আমাদের গোয়েন্দা বাহিনী খুবই তৎপর। নিরাপত্তার লক্ষে আমরা প্রশ্নপত্রের প্যাকেট অ্যালুমিনিয়ামের ফয়েল মোড়ানো থাকবে ’

ফাঁস ঠেকাতে ২২ সিন্ধান্ত

পরীক্ষার নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিট আগে নিজ নিজ আসনে বসতে হবে পরীক্ষার্থীদের। তবে অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষার্থীকে এরপরে প্রবেশ করতে দিলে তাদের নাম,রোল প্রবেশের সময়,বিলম্ব হওয়ার কারণ ইত্যাদি রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করে শিক্ষা বোর্ডে প্রতিবেদন পাঠাতে হবে।

পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রের ২শ মিটারের মধ্যে মোবাইল ফোনসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার নিষিদ্ধ। মোবাইল ফোন বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসে কথিত কোনো প্রশ্ন পেলেই গ্রেফতার। তবে কেন্দ্রসচিব শুধু একটি সাধারণ ফোন ব্যবহার করবেন। ট্যাগ অফিসার (কেন্দ্রে নিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তা) বা ম্যাজিস্ট্রেট, স্থানীয় পুলিশ প্রধান ও কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা তার প্রতিনিধির সহায়তায় ট্রেজারি থেকে প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন।

ট্যাগ অফিসার,কেন্দ্র সচিব বা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলা এবং প্যাকেট অক্ষত ছিল মর্মে সত্যয়ন রাখা। পরীক্ষার ২৫ মিনিট আগে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলা। পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না।

প্রশ্নপত্র ট্রেজারি-থানা থেকে গ্রহণ, কেন্দ্রে প্রেরণ এবং পরীক্ষা কক্ষে বিতরণ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম পরীক্ষা সংক্রান্ত কার্যাবলী ম্যানুয়ালে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষক কোনো ভাবে পাবলিক পরীক্ষায় বে-আইনি কোন কাজ করলে সে প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রয়োজনে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা কেন্দ্র বাতিল করা হবে। দোষী শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হলে তাকে চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হবে এবং বেসরকারি শিক্ষকরাও অভিযুক্ত হলে তার এমপিও বন্ধ করে ম্যানেজিং কমিটিকে তাকে চাকরি হতে বরখাস্ত করার জন্য বলতে হবে। ২৫ জানুয়ারি থেকে ২ মার্চ পর্যন্ত কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।

যদি কোনো মোবাইল নম্বরে একাধিকবার একই অংকের টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট এজেন্টকে নিকটস্থ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করতে হবে। সবস্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষক-কর্মচারীকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হবে। পরীক্ষা নিয়ে ফেসবুকে প্রশ্ন ফাঁসের গুজব সৃষ্টিকারী পেইজ দ্রুত বন্ধের জন্য আগ থেকেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে বিটিআরসি কর্তৃপক্ষ পত্র প্রেরণ করবে।

তথ্য অনুযায়ী,এবার সারাদেশে ২০ লাখ ৪৭ হাজার ৭শ ৭৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এদের মধ্যে ৮টি সাধারণ বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষার্থী ১৬ লাখ ৩৫ হাজার ২ শ ৪০ জন,মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার্থী ২ লাখ ৮১ হাজার ২ শ ৫৪জন এবং কারিগরির এসএসসি ভোকেশনালে ১ লাখ ৩১ হাজার ২ শ ৮৫ জন।

জনসাধারণ প্রবেশে ডিএমপি’র নিষেধাজ্ঞা

পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোর ২শ গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী ছাড়া জনসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বৃহস্পতিবার ৩০ জানুয়ারি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়,পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ডিএমপি কমিশনার মোহা.শফিকুল ইসলাম ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স এর ২৮ ও ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে পরীক্ষা কেন্দ্রসমূহের ২ শ গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী ব্যতীত জনসাধারণের অনধিকার প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এ আদেশ আগামী ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখ থেকে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার দিনগুলোতে পরীক্ষা চলাকালীন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

চাঁদপুরে ৭১ কেন্দ্রে ৩৫ হাজার ৯শ’পরীক্ষার্থী

সারা দেশের ন্যায় চাঁদপুরেও ৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে ২০২০ সালের এসএসসি,দাখিল ও এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষা। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে ও সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন থেকে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

চলতি শিক্ষাবর্ষে চাঁদপুরে এসএসসি ও সমমানের ৭১ টি কেন্দ্রে ৩৫ হাজার ৯ শ’ ১৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে । চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শিক্ষা শাখা থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় ৭১ টি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫ হাজার ৯ শ’ ১৪। এর মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৭ হাজার ১ শ’ ৯৪ জন ও কেন্দ্র ৪৪ টি,দাখিল পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৭ হাজার ২ শ’ ৬৪ জন এবং কেন্দ্র ১৭ টি ও এসএসসি ভোকেশনাল ১০ টি কেন্দ্রে ১ হাজার ৪ শ ৫৬ জন।

আগামি ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষা। ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে তত্ত্বীয় পরীক্ষা। ব্যবহারিক পরীক্ষা চলবে ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মার্চ।

বার্তা কক্ষ , ৩১ জানুয়ারি ২০২০