Home / বিশেষ সংবাদ / এক স্কুলের ৭০ ছাত্রীর বাল্যবিয়ে
ballo-biye-early-marrige
প্রতীকী ছবি

এক স্কুলের ৭০ ছাত্রীর বাল্যবিয়ে

ষষ্ঠ থেকে দশম। এ পাঁচটি শ্রেণির ছাত্রী উপস্থিতি কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। এক বছরে ঝরে গেছে অন্তত ৭০ জন ছাত্রী। তারা এখন শ্বশুরবাড়িতে সংসার ধর্ম নিয়ে ব্যস্ত। মূলত বখাটেদের উত্পাত, প্রেমঘটিত বিষয় আর পারিবারিক অসচেতনতার কারণে অল্প এসব ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।

এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের মরিয়ম মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। আইনের বাস্তবায়ন না থাকায় কোনোভাবেই বাল্যবিয়ে রোধ করা যাচ্ছে না। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন শিক্ষকরা।

প্রধান শিক্ষক মো. ফিরোজ আলী বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য ২০০২ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বছরের শুরুতে ২৯২জন ছাত্রী ছিল। অক্টোবর পর্যন্ত বিদ্যালয়ের ৭০জন (ষষ্ঠ-দশম) ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। তার মধ্যে জেএসসি পরীক্ষার জন্য ৫৬জন রেজিস্ট্রেশন করে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ৪৩ জন। অবশিষ্ট ১৩জন ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।

তাছাড়া অন্য শ্রেণির ছাত্রীদেরও একই পরিণতি হয়েছে। এটা নারী শিক্ষার জন্য উদ্বেগজনক। বাল্যবিয়ের শিকার অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রী জানায়, ৩-৪ মাসের ব্যবধানের তাদের বিয়ে হয়েছে। কেউ শ্বশুরবাড়িতে, কেউ নিজের বাড়িতেই রয়েছে। পরিবারের চাপের মুখে তারা বিয়ে করতে বাধ্য হয় বলে জানায়। পরিস্থিতি উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অভিভাবক সমাবেশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বিভিন্ন সংগঠনের তথ্যমতে, অল্প বয়সে মা হওয়া ও এ বয়সে মা হওয়ার সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে জরায়ু ছিঁড়ে যাওয়াসহ জরায়ুতে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা। প্রায় ৬৬ %মেয়ের বাল্যবিয়ে হচ্ছে ১৮ বছরের আগেই। ৬৬% এক- তৃতীয়াংশ ১৯ বছর বয়স হওয়ার আগেই গর্ভবতী হচ্ছে। সে সঙ্গে ১৮ বছর বয়সের ৫ শতাংশ ছেলের বিয়ে হচ্ছে। মহিলা শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বাল্যবিয়ে রোধে বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করছে। কিন্তু কোনো প্রতিকার নেই।

জানা গেছে, বাল্যবিয়ে রোধে ১৯২৯ সালে আইন পাস করা হয়। এ আইন ১৯৮৪ সালে সংশোধন করে বাল্যবিয়েকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করা হয়। ওই আইনে বিয়ের জন্য পুরুষের ন্যূনতম ২১ বছর এবং মেয়ের বয়স ন্যূনতম ১৮ বছর করা হয়। সর্বশেষ চলতি বছর বাল্যবিয়ের আইনে বিশেষ ধারা রাখা হয়েছে। দফায় দফায় আইনের পরিবর্তন করা হলেও বাস্তবায়ন নেই।

মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মো. নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, ‘‘ বাল্যবিয়ে কিশোরীকে অপরিপক্ব যৌন সম্পর্কে বাধ্য করে। এতে ওই কিশোরির নিরাপত্তা, বিকাশের অধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ খর্ব হওয়ায় মানসিক ও আবেগগত ক্ষতের সৃষ্টি হয়। বিয়ের বয়স হওয়ার আগেই বাল্যবিয়ে ওই মেয়েটির সারা জীবনের সুস্থতা, শৈশব, নিজস্ব পছন্দ ও স্বাধীনতাকে চিরতরে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বেড়ে যায় প্রজননগত স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। ফলে অপরিকল্পিত গর্ভ ধারণের কারণে মায়ের সঠিক জ্ঞানের অভাবে প্রয়োজনীয় পরিচর্যা থেকে বঞ্চিত হয় ভূমিষ্ঠ শিশুও।’’

বাল্যবিয়ের ঘটনা গ্রামাঞ্চলে মাহামারী আকার ধারণ করেছে।

মূলত: বখাটেদের উত্পাতের কারণে অসচেতন অভিভাবক পারিবারিক সম্মান রক্ষায় অল্প বয়সে তাঁদের মেয়েদের বিয়ে দিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে অবাধ মোবাইলফোন ব্যবহারের সুযোগ থাকায় প্রেমঘটিত কারণে এসব মেয়ের অভিভাবকরা বাল্যবিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তার পরও বাল্যবিয়ে রোধে তিনি কঠোর পদক্ষেপ নেবেন। (দৈনিক শিক্ষা)

: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৩:৫০ পিএম, ৪ ডিসেম্বর ২০১৬, রোববার
এজি/ডিএইচ

Leave a Reply