উচ্চ শিক্ষায় প্রতিবছর শূন্য থাকে ১৩ লাখ আসন

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজগুলোতে পাস কোর্সে ভর্তি হতে চান না শিক্ষার্থীরা। অধিকাংশ কলেজে আসন শূন্য থাকছে। এ কারণে কলেজে পাস কোর্সের আসন কমানো প্রয়োজন বলে মত দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ।

ইউজিসি বলছে, `জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে আসন সংখ্যা ১৯ লাখ ১৪ হাজার ৪২০টি। এর মধ্যে ভর্তি হয় মাত্র ৬ লাখ ৩১ হাজার ৬৩ শিক্ষার্থী। ফলে প্রতিবছর আসন শূন্য থাকে ১২ লাখ ৮৩ হাজার ৩৫৭টি। আর স্নাতকোত্তর স্তরে আসন ১ লাখ ৭৭ হাজার ৭৪০টি। ভর্তি হয় ১ লাখ ১৯ হাজার ২৮২ জন। আসন শূন্য থাকে ৫৮ হাজার ৪৮৫টি। এই তথ্য বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু পাস কোর্স নয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কোর্সেও ভর্তির সংখ্যা কাঙ্ক্ষিত নয়।

গত সপ্তাহে প্রকাশিত ২০১৭ সালের ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনে শূন্য আসনের সংখ্যা প্রকাশ করা হয়। দেশের শিক্ষার সার্বিক পরিসংখ্যান, শিক্ষা পরিস্থিতি এবং সমস্যা চিহ্নিত করে সে সম্পর্কে সুপারিশ দিয়ে প্রতিবছরই এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে দেওয়া হয়।

অতীতের প্রতিবেদনগুলোতেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন ছিল ইউজিসির। ২০১৬ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে উচ্চ শিক্ষার প্রসার ঘটলেও মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত কলেজ থেকে পাস করা স্নাতকদের শিক্ষার মান কাঙ্ক্ষিত নয়। আর আগের বছরের প্রতিবেদনে ইউজিসি বলেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ এবং তাদের গুণগত মান আশানুরূপ নয়।

বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনে কলেজগুলোতে ২৮ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজ রয়েছে ২ হাজার ২৬৯টি।

গত সপ্তাহে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ইউজিসি বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী প্রতি মাথাপিছু যে ব্যয় হয় সে তুলনায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রতি ব্যয় কম। ফলে এই দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী প্রতি বার্ষিক মাথাপিছু ব্যয় ১ লাখ ৯৪ হাজার ৩৯০ টাকা এবং শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রতি ব্যয় ২ লাখের বেশি। অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রতি ব্যয় মাত্র ১ হাজার ২৬২ টাকা।

তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশীদ বলেন, কলেজগুলো তার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি আসনের চাহিদা দেয়। ফলে আসন সংখ্যা শূন্য থাকে। এখন কলেজগুলোর শিক্ষার্থী সংখ্যা হিসাব করে নির্ধারিত সংখ্যক আসন অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে আর আসন সংখ্যা বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই। আর আসনও শূন্যও থাকবে না।

তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার কোনো বরাদ্দ দেয় না। নিজস্ব আয়ে চলে। অন্যদিকে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার বরাদ্দ দেয়। এ কারণে মোট বরাদ্দ ও শিক্ষার্থী সংখ্যা হিসাব করে শিক্ষার্থী প্রতি ব্যয় বের করা যাচ্ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়নে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করার কথা জানান উপাচার্য।

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শূন্য আসন : জাতীয় ও উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বাদে দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা ৮৮ হাজার ৬৩৭টি। এর মধ্যে প্রতিবছর শূন্য থাকে ৩ হাজার ২৫১টি আসন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে গত বছর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৬৯টি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৭৩টি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২২২টি, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৪২টি, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪৩টি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪৫টি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭২টি, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০১টি আসন শূন্য ছিল।

বার্তা কক্ষ
২৯ অক্টোবর ২০১৮ সোমবার

Share