Home / আন্তর্জাতিক / ইউরোপে পাড়ি জমাতে গিয়ে ৩৪ হাজারের বেশি অভিবাসীর মৃত্যু
ইউরোপে পাড়ি জমাতে গিয়ে ৩৪ হাজারের বেশি অভিবাসীর মৃত্যু

ইউরোপে পাড়ি জমাতে গিয়ে ৩৪ হাজারের বেশি অভিবাসীর মৃত্যু

ইউরোপে অভিবাসনের চেষ্টা
প্রায় ৪০০ অভিবাসনপ্রত্যাশী আত্মহত্যা করেছেন।
৬০০ জনেরও বেশি সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন।
মৃত্যুর এই মিছিলে বহু বাংলাদেশিও রয়েছেন

গত ২৫ বছরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপে পাড়ি জমাতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩৪ হাজারেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীর। তাঁদের কেউ সাগরে নৌকা ডুবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন, কেউ মারা গেছে আটককেন্দ্রে, আবার কেউবা সহিংস ঘটনায় নিহত হয়েছেন। মৃত্যুর এই মিছিলে বহু বাংলাদেশিও রয়েছেন। তাঁদের কারও পরিচয় পাওয়া গেছে, কারও পাওয়া যায়নি।

বিগত ২৫ বছরে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টার সময় ঠিক কত অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে, তার সরকারি হিসাব সেভাবে নেই। তবে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামভিত্তিক বেসরকারি সংগঠন ইউনাইটেড ফর ইন্টারকালচারাল অ্যাকশন একটি তালিকা তৈরি করেছে। বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে গতকাল বুধবার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান তালিকাটি প্রকাশ করেছে।

১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউনাইটেড ফর ইন্টারকালচারাল অ্যাকশন আসলে ইউরোপের ৪৮টি দেশের ৫৬০টিরও বেশি সংগঠনের জোট। সংবাদপত্রের প্রতিবেদন, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) তথ্য ও কোস্টগার্ডের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য একত্র করে নিহত ব্যক্তিদের এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, প্রায় ৪০০ অভিবাসনপ্রত্যাশী আত্মহত্যা করেছেন। ৬০০ জনেরও বেশি সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন।

মৃত্যুর এই তালিকায় প্রথম যে বাংলাদেশি রয়েছে, তার নাম জানা যায়নি। জার্মানির রেজেনবার্গ শহরে ১৯৯৫ সালের ২৫ অক্টোবর গাড়িচাপায় নিহত হয় ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোর। মানব পাচারকারীরা তাকে ফেলে গিয়েছিল।

পরের বছর ১৯৯৬ সালে যুক্তরাজ্যে অভিবাসন কর্মকর্তাদের হাত থেকে বাঁচতে পালানোর চেষ্টার সময় নিজের বাসার ব্যালকনি থেকে পড়ে নিহত হন নূরজাহান বেগম (৩৫)। একই বছর ৪ সেপ্টেম্বর জার্মানির বার্লিনে এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সে আত্মহত্যা করে বলে ধারণা কর্তৃপক্ষের।

১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল চেক-জার্মান সীমান্তের কাছে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় অজ্ঞাতনামা এক বাংলাদেশির। ২০০০ সালের ১২ জানুয়ারি সুইডেনের স্টকহোমে আত্মহত্যা করেন হোসেন (৩০) নামের এক বাংলাদেশি। দুই বছর পর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে একটি ট্রাকে শ্বাসরোধে মারা পড়েন তিন বাংলাদেশি। ওই বছরই ১৯ জুন তুরস্কে প্রবেশের সময় সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে নিহত হন আরও দুই বাংলাদেশি। এর তিন মাসের মাথায় ২২ সেপ্টেম্বর ইরান-তুরস্ক সীমান্তে নিহত হন মোহাম্মদ সারাদ (৬০) নামের আরেক বাংলাদেশি।

মৃত্যুর এই মিছিলে আরও যে বাংলাদেশিদের নাম জানা গেছে, তাঁরা হলেন মোহাম্মদ হানিফ (বয়স ২৭, ২০০৫ সালের ৮ ডিসেম্বর আত্মহত্যা), বায়তুল আতিক (২০০৭ সালের ২ মার্চ আত্মহত্যা), হামিদুর রহমান (বয়স ৩১, ২০০৮ সালের ৪ মে আত্মহত্যা), জাহিদুল হোসেন (বয়স ২৪, ২০০৯ সালের ৩ জানুয়ারি মরদেহ উদ্ধার), আবদুল আলিম মান্নান (বয়স ২১, ২০১১ সালের ১২ মে ছুরিকাঘাতে নিহত), রুবেল আহমেদ (বয়স ২৬, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আত্মহত্যা) ও তারেক চৌধুরী (বয়স ৬৪, ২০১৬ সালের ২ ডিসেম্বর সহিংসতায় নিহত)। এই তালিকায় থাকা আরও ৩৭ বাংলাদেশির নাম জানা যায়নি। তাঁদের মধ্যে ১১ জনকে ২০০৫ সালের ১১ মার্চ মরক্কো থেকে নৌকায় করে স্পেনে যাওয়ার পথে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ২০১১ সালের ৬ মার্চ লিবিয়া থেকে জাহাজে করে গ্রিসে যাওয়ার সময় সাগরে লাফিয়ে পড়েন ১৮ বাংলাদেশি। তাঁদের মধ্যে ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা গেছে। ১৫ জন আজও নিখোঁজ। এই হিসাবের বাইরেও নিহত ও নিখোঁজের তালিকায় রয়েছেন বহু বাংলাদেশি।

Leave a Reply