বরিশাল ব্যুরো :
শুরু হয়েছে ইলিশের মৌসুম। আষাঢ়ের শুরুতেই দেখা মিলেছে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালী ইলিশের। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে গভীর সাগরে এখনও যাচ্ছেন না জেলেরা। উত্তাল সাগরের পাশাপাশি জলদস্যুর ভয়েও সন্ত্রস্ত মাছের কারবারীরা।
বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডে অবস্থিত মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে দৌলতখানের জেলে নূরুন্নবী চাঁদপুর টাইমসকে জানান, আষাঢ়ের শুরুতেই এবার অনেক ইলিশ ধরা পড়েছে। মাছের সাইজও বেশ ভাল।
তিনি জানান, সুনামির বছর আড়াই থেকে তিন কেজি ওজনের ইলিশ পেয়েছিলেন। এবারও ভূমিকম্প হওয়াতে সাগরের নিচ থেকে মাদার সাইজের ইলিশ উঠে আসবে। অপরদিকে পয়লা নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৮ মাস জাটকা ধরা বন্ধে অভিযান চলায় এমনিতেই বড় সাইজের ইলিশের দেখা মিলছে এবার।
শুক্রবার বরিশালের বাজারে দেড় কেজির ওপরের ইলিশের মণ বিক্রি হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশের মণ ৪৬ হাজার, এলসি সাইজ (৫০০ গ্রাম থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের) মণপ্রতি ৩৪ হাজার টাকা এবং ৫শ গ্রামের নিচে ইলিশের মণ ছিল ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা।
মাছের আড়তদার ইয়ার হোসেন সিকদার চাঁদপুর টাইমসকে জানান, দিন পনেরোর মধ্যে এই মাছের দর মণপ্রতি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা কমে যাবে।
মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অজিত কান্তি দাস জানান, বরিশাল, পটুয়াখালী, মহিপুর, আলিপুর বরগুনা, পাথরঘাটা এসব এলাকার মাছ ধরা ট্রলারগুলো মহিপুর থেকে ৮ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে সমুদ্রের চালনার খাড়ি নামক এলাকায় জাল ফেলে। মাছ পড়লে তিন থেকে চার দিন বা সপ্তাহ পার হয় মাছের অপেক্ষায়। অপরদিকে ভোলা এলাকার চরফ্যাশন, নূরবাদের টেম্পু বোটগুলো সোনারচর, ঢালচরে মাছ ধরে। এরা প্রতিদিন মাছ ধরে ফিরে আসে।
তিনি জানান, মাছ নিয়ে ফেরার পথে পাথরঘাটা উপজেলার নামায় সুন্দরবন সংলগ্ন নারকেলগাছি এলাকায় জলদস্যুর কবলে পড়ে বরিশালের ট্রলারগুলো। দস্যুরা ট্রলার ও মাঝিকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করে। ব্যবসার স্বার্থে মুক্তিপণের কথা অনেক সময় গোপন রাখতে হয়। সুন্দরবনে আস্তানাগাড়া এসব দস্যুদলের বেশীরভাগই খুলনা, বাগেরহাট, রামপাল ও সাতক্ষীরা এলাকার। এদের বিরুদ্ধে বরিশালের র্যাব-৮ অভিযান চালালেও দস্যুতা নির্মূল হচ্ছে না বলে জেলে এবং ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
ডাকাতের কবল থেকে বেঁচে আসা দৌলতখানের জেলে মোসলেউদ্দিন বলেন, ‘তিন বছর আগে ঢালচরের নামায় কালকিনি এলাকায় ১৮ জন জেলে সমেত তাদের ট্রলার জলদস্যুর কবলে পড়ে। ট্রলারের মাছ দস্যুরা চট্টগ্রামের আড়তে বিক্রি করতে গেলে ট্রলার মালিক আকবর খবর পেয়ে মাছ আটকে দেন। এরপর দস্যুরা তাদের বেদম মারধর করে। মধ্যরাতে আরেক দল জলদস্যু এসে ট্রলার ছিনিয়ে নিতে চাইলে গোলাগুলি হয় দু’দলের মধ্যে। এই সুযোগে বনের মধ্যে লুকিয়ে পালিয়ে বাঁচি সবাই।’
মোসলেউদ্দিন আরও বলেন, ‘ইলিশের মৌসুম আর সামনে ঈদ বলে জলদস্যুরা সাগরে নামবে এতে কোন সন্দেহ নেই।’
মৎস্য বিভাগের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ বজলুর রশীদ বলেন, ‘৮ মাস জাটকা নিধন অভিযান এবং ৬৪ দিন সাগরে সব ধরনের ফিশিংবোট বন্ধ রাখায় ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। অপরদিকে ২ লাখ ৫২ হাজার ৬৬৭ জন জেলের মধ্যে ১ লাখ ২৯ হাজার জেলেকে মাছধরা বন্ধ থাকাকালীন চাল বিতরণ করতে পেরেছেন তারা। তাই বরিশাল অঞ্চলে গেল বছর পাওয়া ১ লাখ ৮৭ হাজার মে. টন ইলিশ এবার ছাপিয়ে যাবে।
জলদস্যুর উপদ্রব বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা পুলিশ প্রশাসন ও কোস্টগার্ডকে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।’
র্যাব-৮ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফরিদুল আলম বলেন, ‘জলদস্যুরা বেশীরভাগ সুন্দরবনে অবস্থান করে। এদের বিরুদ্ধে র্যাব-৮ চলতি বছরে ১৩টি অভিযান করেছে। এতে দস্যুবাহিনীর দলনেতাসহ বেশ কয়েকজন সদস্য নিহত হয়েছে। বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র এবং গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জেলেদের রক্ষায় সুন্দরবন সংলগ্ন নারকেলগাছি এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হবে। যাতে করে জেলেরা নিরাপদে সমুদ্র থেকে মাছ নিয়ে বন্দরে ফিরতে পারেন।’
আপডেট : বাংলাদেশ সময় : ১৩ আষাঢ় ১৪২২ বঙ্গাব্দ, শনিবার ২৭ জুন ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৯:৪২ অপরাহ্ন
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস ডট কম–এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি