Home / জাতীয় / আইএসের পরবর্তী চারণভূমি বাংলাদেশ?
আইএসের পরবর্তী চারণভূমি বাংলাদেশ?

আইএসের পরবর্তী চারণভূমি বাংলাদেশ?

বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি জিনিস রয়েছে, যা উল্লেখ করার মত; অর্থনীতি বাড়ছে, তরুণ জনসংখ্যার সঙ্গে এর গণতন্ত্র চলমান এবং আশীর্বাদপুষ্ট উর্বর ভূমি আছে। সাড়ে ১৫ কোটি মুসলিম জনগোষ্ঠী রয়েছে। যদিও সম্প্রতি বিশ্বের অন্যান্য অংশের ন্যায় দেশটিতে মৌলবাদীদের অশুভ ছায়া পড়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দেশের এই অশুভ লক্ষণ পরিবর্তিত হচ্ছে।

দুই বছরের বেশি সময় ধরে নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের ঢেউ দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের একটি পরিষ্কার বৈশিষ্ট্য রয়েছে; রাজধানী ঢাকার সুপরিচিত ধর্মনিরপেক্ষ লেখকরা হামলার লক্ষ্য হচ্ছেন। যারা ইসলামের সমালোচনা করার সাহস দেখাচ্ছেন, তাদের স্তব্ধ করতেই পরিকল্পিত হামলা হচ্ছে।

এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে উচ্চপদস্থ একটি হচ্ছে ২০১৪ সালে বাংলাদেশি-আমেরিকান লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড। ঢাকার বার্ষিক বইমেলার বাইরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। এরপর চলতি বছরের এপ্রিলে সমকামী অধিকার কর্মী ও তার এক বন্ধু নিজ বাসায় খুন হয়েছেন।

চলতি সপ্তাহে এই হামলা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। মাত্রাও বেড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক থেকে শুরু করে প্রত্যেকেই এই হামলার শিকার হচ্ছেন। এমনকি হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ এবং সুফী মুসলিমরাসহ সবাই এই হামলার লক্ষ্যবস্তু।

জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের হাত?
বর্বর ও মধ্যযুগীয় কায়দায় খুনের সঙ্গে একটি বিষয় পরিষ্কার; রামদা নিয়ে হামলা চালানো হচ্ছে। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে মূলপরিকল্পনাকারী কারা? তথাকথিত জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট তাদের গণমাধ্যম শাখার মাধ্যমে বেশ কয়েকটি হামলার দায় স্বীকার করেছে। কিন্তু দেশে আইএসের উপস্থিতি বরাবরের মত অস্বীকার করেছে বাংলাদেশ সরকার।

অন্যান্য হামলায় স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠী দায় স্বীকার করেছে। পুলিশ বলেছে, সন্দেহভাজন হামলাকারীদের অধিকাংশই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য। তবে দাবির পক্ষে পরিষ্কার কোনো তথ্য নেই। এমনকি এই অঞ্চলের জঙ্গি বিশ্লেষকদের মাঝেও নেই।

বাংলাদেশি লেখকদের কি রক্ষা করা যাবে?
সাউথ এশিয়া টেরোরিজম পোর্টালের নির্বাহী পরিচালক আজাই সাহনি বলেন, আইএস বাজারে গিয়ে কাউকে ছুরিকাঘাত করে না। আইএসের পরিচালিত গণমাধ্যমে কিছু হামলার দায় স্বীকার করা হয়, কারণ এর মাধ্যমে এই গোষ্ঠী বৃহৎ অংশের কাছে পৌঁছাতে পারে।

তিনি বলেন, এরা বিশ্বব্যাপি পরিধি বাড়াতে চাচ্ছে। কিন্তু আইএস যদি এতে জড়িত থাকে, তাহলে এদের প্রকৃত অস্ত্র ভাণ্ডার কোথায়? কোথায় তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়?

এশিয়া-প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের সন্ত্রাসবাদ বিশ্লেষক সজ্জান গোহেল বলেন, ‘জেএমবিকে এখন আইএসের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে দেখা যেতে পারে’। তিনি বলেন, ‘জেএমবি বিদেশি নাগরিক, অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদদের লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করেছে’। অন্যদিকে, অন্য জঙ্গিগোষ্ঠী আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিট) অধিকাংশ লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে ব্লগার ও নাস্তিক। এই বিশ্লেষক ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা আল কায়েদার (একিউআইএস) সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হিসেবে দেখছেন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে।

বিশ্লেষক গোহেলের ধারণা যদি সত্যি হয়, তাহলে বাংলাদেশ আইএস এবং আল কায়েদার মধ্যে প্রক্সিযুদ্ধের চারণভূমিতে পরিণত হতে যাচ্ছে অথবা ইতোমধ্যে হয়েছে। এর লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য পরিষ্কার : বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার একটি দেশে পা রাখার জায়গা করা। ভারতের সঙ্গে বেশির ভাগ সীমানা থাকায় এটিও একটি বড় পাওয়া হবে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর। বাংলাদেশে আরো বড় ধরনের হামলা চালাতে চায় বলে উল্লেখ করেছে আইএস। পরবর্তী পর্যায়ে আরো বৃহৎ পরিসরে হামলা হতে পারে।

কিন্তু রামদা কেন?
সাউথ এশিয়া টেরোরিজম পোর্টালের নির্বাহী পরিচালক আজাই সাহনি বলেন, ছুরিকাঘাত এবং কুপিয়ে হত্যা নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতার ক্ষেত্রে ছোটখাটো সহিংসতার ঘটনা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক হামলা অন্যগুলোর চেয়ে একটু বড়, কেননা এই হামলা সঠিক অথবা ভুলভাবেই আইএসের সঙ্গে ব্রান্ডিং করছে।

এমনকি এসব হামলার প্রতিদানও আছে। যেকোনো হামলাই জঙ্গিগোষ্ঠীর আলোচনায় জ্বালানির জোগান দেয়। সিএনএসের সন্ত্রাসবাদ বিশ্লেষক পিটার বার্গেন বলেন, তালেবানের সাবেক সদস্যরা নিজেদের আইএস হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। যদিও আইএসের সঙ্গে তাদের কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই।

রাজনীতি এবং অঙুলি নির্দেশ :
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু গত মাসে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বৃহৎ ইসলামিক দল জামায়াতে ইসলামির দিকে অঙুলি নির্দেশ করেন।

চলতি মাসে আবারো সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, হামলার প্রযোজক বিএনপি। পরিচালক জামায়াতে ইসলামী। মাঠে ক্ষুদ্র অভিনেতা এবিটি, জেএমবি ও অন্যান্য জঙ্গি নেটওয়ার্ক। তিনি বলেন, আইএসের দাবি কাল্পনিক এবং মিথ্যা। দেশকে অস্থিতিশীল করতে বিরোধী দল এসব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে।

তবে বিএনপির মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী তথ্যমন্ত্রীর দাবি পুরোপুরি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং নীতিসহ আমরা একটি রাজনৈতিক দল। সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য হলো বিরোধী দল ধ্বংস করে দেয়া। তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

দেশে চলমান হত্যাকাণ্ড অবসানের লক্ষে সরকারের সর্বশেষ জঙ্গিবিরোধী অভিযানে দুই হাজার ৭০০ বিএনপি কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রিজভী। (

: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৮ে:০০ এএম, ২১ জুন ২০১৬, বুধবার
ডিএইচ

Leave a Reply