অন্যান্য বছরের তুলনায় চাঁদপুরে আর্সেনিক ‘ঝুঁকি কমছে’

চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় নিয়ন্ত্রিত একাধিক বিভাগের আন্তরিকতা ও জনসচেতনতায় গত কয়েক বছরের হিসেবে অনুযায়ী চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় ধীরে ধীরে আর্সেনিক ঝুঁকি কমছে।

চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা, আর্সেনিকযুক্ত নলকূপ দ্রুত সনাক্তকরণ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ কর্তৃক সব ক’টি উপজেলায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক গভীর নলকূপ স্থাপন, পুরোনো অগভীর নলকূপের পানি পান না করা ও বিগত ক’বছরে আর্সেনিক বিষয়ে পল্লী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধিতে এর ঝুঁকি কমে আসছে।

চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এপ্রিল ২০১৬ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী চাঁদপুর সদরে ৪শ’ ৮৪ জন, কচুয়ায় ৭শ’ ৯৩ জন, শাহরাস্তিতে ৫ হাজার ১ শ’ ৪৩ জন, হাজীগঞ্জে ১ হাজার ১ শ’ ৫৫ জন, মতলব দক্ষিণে ৫ শ’৩১ জন ,মতলব উত্তরে ৪ শ’ ৫০ জন,ফরিদগঞ্জে ৫শ’ ৪৯ জন এবং হাইমচরে ১ শ’ ২২ জন সম্ভাব্য ও নিশ্চিত আর্সেনিকোসিস রোগী রয়েছে।

প্রসঙ্গত, চিকিৎসকগণের মতে, আর্সেনিক স্বাদ-গন্ধ-বর্ণহীন এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ। এটি পারদের চেয়ে চারগুণ বেশি বিষাক্ত। মানুষের আর্সেনিক আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে ভূ-গর্ভস্থ পানি।
প্রাকৃতিক নিয়মেই ভূ-গর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক দূষণ হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩ টি জেলা ব্যতীত দেশের সব জেলায় ব্যাপক জরিপ পরিচালনা করে। এতে ৫৩ টি জেলায় পূর্বে বসানো নলকূপের পানিতে আর্সেনিক দূষণমাত্রা গ্রহণসীমার ওপরে পাওয়া গেছে।

এর ভয়াবহতা উপলদ্ধি করে আরো নিশ্চিত হতে ঢাকার কমিউনিটি হাসপাতাল ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিভাগের সার্বিক সহায়তায় জরিপ চালিয়ে দেশের ৬৪ টি জেলার প্রায় সাড়ে ৭ কোটি মানুষ কম-বেশি হারে আর্সেনিক হুমকির মধ্যে রয়েছে বলে রিপোর্ট দেন। চাঁদপুরের শাহরাস্তি ও হাজীগঞ্জে আর্সেনিকের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়।

পানিতে আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা হলো ০.০৫ মিলিগ্রাম। সে ক্ষেত্রে কোনো কোনো জেলায় ৪০ থেকে ৫০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।যার ফলে প্রায় কোটি লোক আর্সেনিকে আক্রান্ত হওয়ার খবর উঠে আসে।

এ প্রেক্ষিতে সর্বপ্রথম ১৯৯৬ সালে এ অবস্থার উন্নীতিকল্পে সরকার একটি কৌশলপত্র তৈরি করে ২ শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। এ জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে স্বেচ্ছাসেবক দলের মাধ্যমে অগভীর নলকূপগুলির পানি তাৎক্ষণিকভাবে পরীক্ষা করে কলের মাথায় লাল ও সবুজ রং দিয়ে সংকেত দেয়া হয়।

আর বাড়ির গৃহিণীদেরকে লাল রং করা কলের পানি পান করা যাবে না বলে দেয়া হয়। এর সাথে সাথে গভীর নলকূপ বসানোর উদ্যোগ সরকারিভাবে নেয়া হয়।

চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ সূত্র চাঁদপুর টাইমসকে জানায়, ২০১৩ সালের পর জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলিতে এখন আর্সেনিকোসিস রোগী আসে না। পূর্বে রোগীদেরই বর্তমানে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।

প্রতিবেদক- আবদুল গনি

Share