Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরের সেই মা এখনো রোহানের লাশ পাননি – ভিডিও
tanjil-hasan-ruhan
নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রোহানের মা ছেলের ছবি হাতে লাশের অপেক্ষায়।

চাঁদপুরের সেই মা এখনো রোহানের লাশ পাননি – ভিডিও

বোনের বিয়ের বাজার করতে গিয়ে চকবাজার ট্র্যাজেডিতে অগ্নিদগ্ধ নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তানজিল হাসান রোহানের গোশতের টুকরা চাওয়া সেই ফরিদঞ্জের সেই মা এখনো লাশ ফিরে পাননি।

‘যেরকম হোক… কালি হোক, একটু যদি মাংস থাকে, মাংসের ফোঁটাও থাকে। আমার বাবারে এনে দেন। আমি কোলে নিমু। দরকার হয় আমি ছালি (ছাই) ধরমু, এমনে গায়ে মাখুম।’

পুরান ঢাকার চকবাজারে পাঁচটি বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ হওয়া সন্তানের খোঁজে এভাবেই সাংবাদিকদের সামনে কাকুতি-মিনতি করছিলেন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার এক মা।

রুহানদের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার সেকদি খান বাড়ি (খাসের বাড়ি)। তাাঁর জ্যাঠাতো ভাই ফয়সাল খান চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘ছোটবেলা থেকেই রুহান তার পরিবারের সাথে ঢাকায় থাকতেন। ঘটনার দিন তিন বাইকে ছয় বন্ধু বিয়ের বাজার করতে গিয়ে অগ্নিকাণ্ডের শিকার হন। এরমধ্যে দু’বন্ধু বেঁচে গেলেও রুহানসহ বাকিরা অগ্নিদগ্ধ হয়।

জানা যায়, আগামি ১০ মার্চ ছিলো রুহানের ছোটবোনের বিয়ে। নানান ব্যস্ততায় রোহান তার পাঁচ বন্ধুকে নিয়ে গেছে পুরনো ঢাকার চকবাজারে। তিনটি বাইকে ছয় বন্ধু। কমিউনিটি সেন্টার বুকড, নানান শপিং করা জরুরি। সময়ও ফুরিয়ে আসছে। তাই রোহান বন্ধুদের নিয়ে যাচ্ছিলেন চুড়িহাট্টার গলিপথ দিয়েই। কিন্তু রোহানরা কি জানত তাদের এই হাসি ঠাট্টা শেষ হয়ে যাবে আগুনের লেলিহান শিখায়। তাদের পথচলার গতিকে থামিয়ে দেবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া আগুনের গতি।

এদিকে ঢাকা মেডিকেলে রুহানের লাশ খুঁজতে গিয়ে আহাজারি করে রোহানের মা বলেন, “ যা পান, একটু মাংস হলেও, একটু, একটু হলেও দেন। আমার বাবারে আমি কোলে নিমু!আমার বাবারে ডাকলে আসবে না? আামার বাবার অনেক সপ্ন ছিল, বিদেশ যাবে ও নর্থ সাউথ এ পরে! আমার বাবারে আমি ডাকলে আসবে তো? যা পান,আমার বাবার, একটু বের করে দেন ”

নর্থ সাউথের শিক্ষার্থী রোহানের মায়ের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে আশেপাশের পরিবেশ। কাঁদতে কাঁদতে তিনিই জানাচ্ছিলেন, তার ছেলের নাম রুহান, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ফোর্থ সেমিস্টারে পড়ছিলেন।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, সাংবাদিক মুন্নী সাহাকে উদ্দেশ্য রুহানের মা বলছিলেন, ‘সম্ভব হইলে কোনো জায়গায়, মনে হয় যে কোনো জায়গায় আছে… এখনো শেষ হয় নাই, কোনো জায়গায় মনে হয় যে দমটা এখনো টিপটিপ করতেছে, কিন্তু পলিথিন দিয়া ঘুইরা থুইছে, কিন্তু আমার পোলাডা মা মা কইতাছে। টিপটিপ করা অবস্থায় কি পলিথিন দেয়, কেউ দিবো?’

এই সময় মুন্নী সাহাসহ আশপাশের লোকজনকেও অশ্রু মুছতে দেখা যায়। মা বলতে থাকেন, ‘আমার আব্বা এতো সহজে যাইবো না আমারে রাইখা। আমার বাবাতো অনেক ভয় পায়, আমার বাবায় কোনহানে জানি আছে।’

সবাইকে আবার দেখাচ্ছিলেন তার ছেলের পাসপোর্ট সাইজ ছবিটা, ‘যেরকম হোক… কালি হোক, একটু যদি মাংস থাকে, মাংসের ফোঁটাও থাকে। আমার বাবার কাছে, একটা মাংসের ফোঁটা…। আমার বাবারে আমি এমনে কোলে নিমু (শিশুকে দু’হাতে বুকে জড়ানোর ভঙ্গি করে)। দরকার হয় আমি ছালি (ছাই) ধরমু, এমনে গায়ে মাখুম। বাবারে চুম্মা দিমু।’

রুহানের ছবির দিকে তাকিয়েই মা বলতে থাকেন, ‘বাবারে, তোমার কিছু অইবো না।’ আবার সবাইকে ছেলের ছবি দেখিয়ে বলতে থাকেন, ‘সবাই তোমারে খুঁজে দিবো। ইনশাল্লাহ সবাই খুঁজে দিবো। কতো মানুষ…কোন দিকে সরায়ালায়, কোন দিকে যায় গা।’
‘আমার বাবারে একটু খুঁইজা দেন না’ বলে প্রায় গড়িয়ে পড়ছিলেন মা। ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭০ জন নিহত হওয়ার খবর মিলেছে। হদিস মিলছিলোনা রোহানসহ কয়েকজনের।

স্থানীয়রা বলছেন, চকবাজারের নন্দকুমার দত্ত রোডের শেষ মাথায় চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পাশে ৬৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওয়াহিদ ম্যানশনে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আবাসিক ভবনটিতে কেমিক্যাল গোডাউন থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

আরো পড়ুন-*** চকবাজারে লাশের মিছিলে যোগ হলো হাজীগঞ্জের দু’জন

*** মুখের দাড়ি আর হাতের ঘড়িতে সনাক্ত ফরিদগঞ্জের শামছুল হকের লাশ

রুহানের মায়ের আহাজারিতে ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিও-

প্রতিবেদক- দেলোয়ার হোসাইন
২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯