মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী ঘাটে ফেরির অপেক্ষায় থাকা স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ভবিষ্যতে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ফেরি চলাচলের ক্ষেত্রে সাত দফা সুপারিশ করেছে।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. রেজাউল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি এ প্রতিবেদন অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে জমা দেয়।
তদন্ত কমিটি যুগ্ম সচিব আবদুস সবুর মণ্ডল ও মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম কোনো দোষ খুঁজে পায়নি। বরং ঘাটের ব্যবস্থাপক সালাম হোসেনসহ তিনজনকে দায়ী করে প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ প্রতিবেদনের ওপর শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অংশে বলা হয়েছে-
১. ঘাট থেকে ফেরি ছাড়া ও পৌঁছানোর সময় মাস্টারকে অবশ্যই স্থায়ী লগ বুক/রেজিস্ট্রারে সময় লিখে স্বাক্ষর করতে হবে। ২. ফেরি ঘাটে ভিড়িয়ে র্যাম্প উঠিয়ে কোনো ব্যক্তি বিশেষের জন্য কোনোক্রমে অপেক্ষা করা যাবে না।
৩. নীতিমালা অনুযায়ী ভিআইপি সুবিধা চেয়ে কেউ ফেরি পার হতে চাইলে তাকে অবশ্যই তার সরকারি ভ্রমণ বিবরণী আগে থেকে ফেরি কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে হবে। তবে জরুরি প্রয়োজনে পূর্বে যোগাযোগ সাপেক্ষে ও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এ নিয়ম শিথিল করা যেতে পারে।
৪. অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স/গাড়িকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করে পারাপারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৫. প্রত্যেক ঘাটে ও ফেরিতে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে গাড়ি ও ফেরি পারাপারের বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
৬. ফেরিঘাট ও ফেরিতে কর্মরত সবাইকে নাম ট্যাগসহ নির্দিষ্ট পোশাক পরিধান করতে হবে। ৭. ফেরিঘাট ও ফেরিতে জরুরি গুরুত্বপূর্ণ মোবাইল নম্বরগুলো প্রদর্শন করতে হবে।
দাখিল করা প্রতিবেদনে তিতাসের মৃত্যুর ঘটনায় ফেরিঘাটের তিনজনকে দায়ী করা হয়েছে। এঁরা হলেন কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক সালাম হোসেন, ঘাটের প্রান্তিক সহকারী খোকন মিয়া এবং উচ্চমান সহকারী ও গ্রুপ প্রধান ফিরোজ আলম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা দেরিতে ফেরি ছাড়ার কারণে তিতাসের মৃত্যুর দায় এ তিনজন এড়াতে পারেন না। তবে এ ঘটনায় চাঁদপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক ও বর্তমান যুগ্ম সচিব আবদুস সবুর মণ্ডল ও মাদারীপুরের জেলা প্রশাসকের দোষ খুঁজে পায়নি কমিটি। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, যুগ্ম সচিব ও জেলা প্রশাসক জানতেন না যে ফেরিঘাটে মুমূর্ষু রোগী আছে।
মাদারীপুর কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাটে স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুর ঘটনায় গত ৩১ জুলাই অতিরিক্ত সচিবের নিচে নন, এমন পদমর্যাদার কর্মকর্তার নেতৃত্বে তদন্ত করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে রুলে তিতাসের পরিবারকে কেন তিন কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. জহির উদ্দিন লিমন।
বার্তা কক্ষ, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯