কয়েক বছর আগেও পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ মানেই মিষ্টি বিতরণের ধুম পড়ে যেতো। ফলপ্রকাশের পর এলাকায় মিষ্টি বিতরণের পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজন বা স্কুলশিক্ষকদের দাওয়াত করে খাওয়ানো হতো মিষ্টি। সেজন্য ক্রেতার আগমনে জমে উঠত মিষ্টিপাড়া। তবে গত দুই-তিন বছর ধরে সে চিত্র দেখা যাচ্ছে না মিষ্টির দোকানে।
শুভ কাজ কিংবা শুভ ফলাফলে মিষ্টি খাওয়ানোর ঐতিহ্য অনেকটা উঠে গেছে। এখন আর মিষ্টি দোকানগুলোতে কোনো ভিড় নেই, অলস সময় কাটাতে দেখা যাচ্ছে দোকানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।
বুধবার (১৭ জুলাই) এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলপ্রকাশের পর চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে থাকা ওয়ান মিনিট, মৌসুমী সুইটস, রস বিলাস, মুসলিম সুইটস, বিক্রমপুর সুইটস, রসের হাঁড়ি, আবদুল্লাহ সুইটসসহ একাধিক নামিদামি প্রতিষ্ঠানের এখাধিক শো-রুমের কোনটিতেই বিক্রি বাড়েনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব দোকান ঘুরেও এমনই চিত্র দেখা গেছে। দোকানগুলোতে চলছে সপ্তাহের অন্য দিনের মতোই বেচা-বিক্রি।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এর আগে যেকোনো পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পরপরই ক্রেতার ভিড় লেগে যেতো মিষ্টির দোকানে। সকাল ১১টার পরপরই চলতো টানা বেচা-বিক্রি। এসময়ে দোকানে অতিরিক্তি কর্মচারী রাখা হতো মিষ্টি বিক্রির জন্য। তবে এবার মোটেই বেচা-বিক্রি নেই দোকানগুলোতে। শান্তিনগর, বেইলি রোড, পল্টন এলাকায় বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অনেক দোকানিকে গল্প করে সময় পার করতে দেখা যায়।
ফলপ্রকাশের চার ঘণ্টার মাথায় একজন অভিভাবকে দেখা যায় মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কিনতে। তার মতে, এখন আর মিষ্টি খাওয়ানোর প্রচলন নেই। এর পরিবর্তে ফল-মূল বা ভারি খাবার খাওয়ানো হয় মেহমানদের।
সালেহা নামের এ অভিভাবক মুসলিম সুইটসে এসেছেন মিষ্টি কিনতে। তার মেয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘এক সময় মিষ্টির প্রচলন ছিলো, তবে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় মিষ্টির পরিবর্তে এখন ফলেই ভরসা সবার। এখন নিকটজনরা মিষ্টি খেতে চান না, তারপরও একটু মিষ্টি কিনেছি। তবে মেহমানদের মিষ্টির পরিবর্তে ফল বা অন্য ভারি খাবার খাওয়ানোর ইচ্ছে আছে।’
চাঁদপুর রস বিলাসের স্বত্ত্বাধিকারী আতিকুর রহমান চাঁপদুর টাইমসকে জানান, ‘এর আগে যে কোনো পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা মানেই মিষ্টি খাওয়ানোর ধুম পড়তো। আমাদের দোকানগুলোতেও চলতো ভালো বিক্রি। কারখানা থেকে উৎপাদন করেও চাহিদা মেটানো সম্ভব হতো না। কিন্তু এখন আর সেরকমটি হচ্ছে না। ’
মুসলিম সুইটসের সেলসম্যান বলেন, ‘এসএসসি বা এইচএসসির রেজাল্টের পর বেচা-বিক্রির ধূম পড়ে যেতো। তবে গত দুই বছর ধরে এ দু’টি পরীক্ষায় মোটেও বেচা-কেনা থাকে না। গত এসএসসি পরীক্ষায়ও কোনো বেচা-কেনা হয়নি। যা হয়েছে সপ্তাহের অন্য দিনের মতো। আজ এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পরও একই অবস্থা, কোনো বিক্রি নেই।’
চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট
১৮ জুলাই ২০১৯