Home / জাতীয় / আদালতে হাসতে হাসতে ঢুকে কাঁদতে কাঁদতে বের হলেন অধ্যক্ষ সিরাজ
Siraj-uddaula

আদালতে হাসতে হাসতে ঢুকে কাঁদতে কাঁদতে বের হলেন অধ্যক্ষ সিরাজ

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান ওরফে রাফি হত্যা মামলার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা আজ বৃহস্পতিবার সকালে আদালত প্রাঙ্গণে বেশ হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন। রায় ঘোষণার পর অবশ্য তাঁকে কাঁদতে দেখা গেছে।

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান ওরফে রাফি হত্যা মামলার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা আজ বৃহস্পতিবার সকালে আদালত প্রাঙ্গণে বেশ হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন। রায় ঘোষণার পর অবশ্য তাঁকে কাঁদতে দেখা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, আজ সকালে অধ্যক্ষ সিরাজসহ এই মামলার ১৬ আসামিকে প্রিজনভ্যানে করে আদালত প্রাঙ্গণে আনা হয়। প্রিজনভ্যান থেকে নামার সময় তিনি বেশ হাসিখুশি ছিলেন। হাসতে হাসতে তিনি আদালতের এজলাসে যান। রায় ঘোষণার আগ পর্যন্ত তিনি খোশমেজাজে ছিলেন।

তবে আদালতের রায় শুনে কাঁদতে শুরু করেন সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা। রায়ের পর যখন তিনিসহ সব আসামিকে প্রিজনভ্যানে তোলা হয়, তখনো তাঁকে কাঁদতে দেখা গেছে।

গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় তাঁর মা শিরিনা আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলা তুলে না নেওয়ায় ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয় নুসরাতকে। এ সময় তাঁর হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল নুসরাতের মৃত্যু হয়।
আজ সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে আসামিদের এজলাসে আনা হয়। ৩ মিনিটের মধ্যে আসামিদের কাঠগড়ায় তোলা হয়। বেলা ১১টা ৮ মিনিটে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ রায় পড়তে শুরু করেন। বিচারক অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। রায় পড়তে বিচারক সময় নেন ১২ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড। আর এরপরই অধ্যক্ষ সিরাজের মুখে হাসির বদলে কান্না দেখা দেয়।

এর আগে সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে আসামিদের কাঠগড়ায় আনা হয়। ৩ মিনিটের মধ্যে আসামিদের কাঠগড়ায় তোলা হয়। রায় শোনার পর আসামিরা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন। কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন। কেউ কেউ জানান উচ্চ আদালতে আপিল করবেন তাঁরা। আসামিরা এ সময় বাদীপক্ষের আইনজীবীদের অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করেন। পরে পুলিশ পাহারায় আইনজীবীদের সরিয়ে দেওয়া হয়।

গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় তাঁর মা শিরিনা আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করলে অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলা তুলে না নেওয়ায় ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বোরকা পরা পাঁচ দুর্বৃত্ত। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের মৃত্যু হয়।

অগ্নিসন্ত্রাসের এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান (নোমান) সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। গত ২৮ মে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত শেষে মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে ৮৬৯ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে। মাত্র ৬১ কার্যদিবসে মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। আর মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ করতে পিবিআইয়ের লাগে ৩৩ কার্যদিবস।

এ মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত ১৬ আসামি হলেন সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি রুহুল আমিন, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম, মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ আবদুল কাদের, প্রভাষক আফসার উদ্দিন, মাদ্রাসার ছাত্র নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ যোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা পপি ওরফে তুহিন, আবদুর রহিম শরিফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, মোহাম্মদ শামীম ও মহি উদ্দিন শাকিল।

বার্তা কক্ষ, ২৪ অক্টোবর ২০১৯