ফিচার

অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট যখন রোহিঙ্গারা ব্যাপকহারে বাংলাদেশে প্রবেশ করে, তখন আমারও সুযোগ হয় সেখানে যাওয়ার। ইউএনবির কক্সবাজার স্থানীয় প্রতিনিধি ছাড়াও ৩ জন রিপোর্টার ও ১ জন ফটোগ্রাফার কাজ করছিলো সেখানে। সেই সাথে আমিও অল্প কিছু দিনের জন্য সেখানে ছিলাম। আমাদের টিম সেখানে ছিল টানা প্রায় ২মাস। যদিও মাঝে মধ্যেই রিপ্লেসমেন্ট হয়েছে এবং সিনিয়র রির্পোটারও সেখানে গিয়েছেন।

তখন রোহিঙ্গা ঢল বাংলাদেশের দিকে। শাহপরীর দ্বীপ দিয়ে তারা বন্যারমত বাংলাদেশে ঢুকছে। টেকনাফে একটি মাঠে তাদের জড়ো করার পর ন্যূনতম চেক আপ ছাড়াই তাদের লাইন করে বসিয়ে খাবার এবং টিকা খাওয়ানোর পর ট্রাকে উঠিয়ে ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছিল।

আমি একজন পুলিশ অফিসারকে বললাম, ইমিগ্রেশন না হোক, অন্ততঃ তাদের ব্যাগে বা বস্তায় কি আছে তা একবার পরখ করা উচিত। তিনি বললেন এত মানুষ তাতে অনেক সময় লেগে যাবে। আমি হাসি দিয়ে বললাম সময় লাগলেও তারা আমাদের নাগরিক নয়। কি নিয়ে আসছে তা দেখা কর্তব্য বলেই আমার মনে হয়।
ঠিক এসময়ই একজন রোহিঙ্গা ট্রাকে উঠতে গিয়ে তার বড় আকারের বস্তাটা হাত ফসকে রাস্তায় পড়ে যায়। দেখা গেল যন্ত্র আকৃতির ছোট ছোট অনেক গুলো স্টিল বাক্স। একজন স্থানীয় যুবক বলল এগুলো ই্য়াবা তৈরীর যন্ত্রাংশ।

সেই শুরু। রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে আসার সময় অনেকেই মানবতা দেখিয়েছেন। শাহপরীর দ্বীপ থেকে টেকনাফ আসতে নৌকা ভাড়া লাগত ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। বাংলাদেশি একদল হুজুর তাদের এ নৌকা ভাড়া দিয়ে দিতেন। ক্যাম্পে গিয়ে ট্রাকে ট্রাকে খাবার দেয়ার কথা আমরা স্বচক্ষে দেখেছি।

পরে আমরা যখন বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাই, তখন দেখি অনেক গাছ কাটা। শুধু গাছের গোড়া দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন জানাল রোহিঙ্গাদের জন্য দৈনিক ৫০০ কেজি লাকড়ি দরকার হয়। এটা ভাবা যায়? এত গাছ কাটা হচ্ছে? শুধু তাই নয়, পাহাড় কেটে যেভাবে সমান করে ফেলা হচ্ছিল তা নিয়েও আমরা আতঙ্কিত ছিলাম।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো রোহিঙ্গারা মানব সন্তান উৎপাদনে সিদহস্ত। জানলে অবাক হবেন এই দুই বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৯২ হাজার শিশুর জন্ম হয়েছে। ভাবতে অবাক লাগে এই ছোট্ট একটা খুপড়ি ঘরে তারা কিভাবে জৈবিক কাজে অংশ নেয়? যেখানে একই স্থানে ৮/১০ জন মানুষ ঘুমাত। রোহিঙ্গারা এখনো শিশু জন্ম দিয়েই যাচ্ছে।

রোহিঙ্গারা ঘরে বসেই খাবার পায়। তাদের কোনো দুঃশ্চিন্তা নেই। অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। তাই তারা বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে যাচ্ছে।

গত ২ বছরে রোহঙ্গা ক্যাম্পে ৪৩ জন খুন হয়েছে। ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন ৩২ জন। অধিকাংশ রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ই্য়াবা ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করছে। আধিপত্য বিস্তার, বিভিন্ন বাজার নিয়ন্ত্রণ, ত্রাণ নিয়ন্ত্রণসহ নানাকাজে রোহিঙ্গাদের মধ্যে গ্রুপিং, লবিং হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

স্থানীয় অধিবাসী হচ্ছে সাড়ে ৫ লাখের মত। আর রোহিঙ্গা হচ্ছে ১১ লাখের বেশি। তাই স্থানীয় অধিবাসীরাই এখন সংখ্যালঘু।

অবাককরা বিষয় হলো টেকনাফে প্রায় শতাধিক এনজিও আছে। তারমধ্যে ৬১টি এনজিও সরাসরি রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করে। এরা বিদেশ থেকে অর্থ এনে নিজেদের আরাম আয়েশে ব্যস্ত।

একটা মজার অভিজ্ঞতা হলো, ’ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স’ নামে একটি চিকিৎসা বিষয়ক এনজিও রয়েছে। আমরা ঢুকতে চেস্টা করলাম। কিন্তু সেখানে কোনো সাংবাদিকের প্রবেশ নিষেধ। ব্যাপারকি? কৌতুহল বেড়ে গেল। চট্টগ্রামের ভাষা অল্প স্বল্প জানি। যা মিয়ানমারের ভাষার সাথে মিলে যায়। সেটাকে পুঁজি করে একজন রোহিঙ্গাকে রাজী করালাম অসুস্থতার ভান করতে। আর আমি তার অভিভাবক সেজে সেখানে প্রবেশ করতে চাইলাম। কিন্তু তাও সিকিউরিটি আটকে দিল। রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দিলেও আমাকে আর ঢুকতে দেয়নি। পরে বুঝলাম পোষাকই ছিল বড় সমস্যা।

সন্ধ্যার পর পুরো রোহিঙ্গা ক্যাম্প চলে যায় রোহিঙ্গাদের দখলে। কারন তখন বাইরের কেউ ক্যাম্প এলাকায় থাকতে পারেন না।

ফলে দিনে দিনে তারা আরো বেপোয়ারা হয়ে উঠেছে। এই যে এত বড় একটা সমাবেশ করতে দেয়া হলো, এতে আমার মনে হচ্ছে আমাদের জন্য ক্ষতিই হলো। তাদের একতাবদ্ধ শক্তি তাদের আরো প্রতিহিংসা পরায়ন করবে।

শরনার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার যদিও বলেছেন, তাদের আবেগ প্রকাশের দিনে এই সুযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয় এতে যারা একটু নিরীহ টাইপের রোহিঙ্গা ছিল তারাও এখন নিজেদের শক্তিশালী মনে করবে। তাই অনতিবিলম্বে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

লেখক- একেএম রাশেদ শাহরিয়ার পলাশ
মফস্বল সম্পাদক ও বাংলা বিভাগের প্রধান,
বার্তা সংস্থা ইউএনবি

Share