সারাদেশ

যেভাবে আদালত থেকে জামিন পেয়েছিলো সুবর্ণচরের রুহুল আমিন

নির্বাচনের রাতে সুবর্ণচরে ধর্ষণের আসামি রুহুল আমিনকে জামিনাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন হাইকোর্ট। কাজেই বহিষ্কৃত এ আওয়ামী লীগ নেতার জামিন মিলছে না।

আদালত সূত্রে জানা যায়, আসামি রুহুল আমিনের পক্ষে গত ২৯ জানুয়ারি জামিন চেয়ে নোয়াখালী দায়রা জজ আদালতে আবেদন জানায় তার আইনজীবী। ৪ মার্চ আবেদন নামঞ্জুর করেন ওই আদালত।

এরপর রুহুল আমিনের জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানান আইনজীবী আশেক-ই-রসুল। ওই আইনজীবী জামিন আবেদনটি এনেক্স ১৭ নম্বর কোর্টে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে শুনানির জন্য ফাইল করা হয়।

এ সংক্রান্ত নথিও দেয়া হয় অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসকে। ফলে আবেদনটির অনুলিপি চলে যায় ওই কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরে।

কিন্তু পরবর্তীতে (১৪ নম্বর কোর্টে) বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য উঠে।

এ সময় ওই বেঞ্চের সংশ্লিষ্ট ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে জামিন আবেদনের কোনো নথি সরবাহ করা হয়নি। এরই মধ্যে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে জামিন আদেশ নেয়া হয়।

যে তথ্য গোপন করা হয় জামিন আবেদনে ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায় জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, জামিন আবেদনের সঙ্গে বলা হয়, আসামি রুহুল আমিন এফআইআর ভুক্ত আসামি নয়। শুনানির সময় এ মামলায় গ্রেফতারকৃত ৮ আসামির ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দি এবং ২২ ধারায় দেয়া জবানবন্দি উপস্থাপন করা হয়নি।

শুনানির সময় সংশ্লিষ্ট আইনজীবী আসামি রুহুল আমিন ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না এবং সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে তাকে এ মামলায় জড়ানো হয়েছে বলে আদালতকে বলেন।

তাছাড়া ১৮ মার্চ রুহুল আমিন ওই বেঞ্চ থেকে জামিন পেলেও সে জামিন আদেশের অনুলিপি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা হাতে পান ২১ মার্চ।

রুহুল আমিনের জামিন নজিরবিহীন ঘটনা : অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ‘সুবর্ণচরের গণধর্ষণের ঘটনার মূলহোতা রুহুল আমিনের জামিন নজিরবিহীন ঘটনা। যেখানে পুরো জাতি ধর্ষণ মামলার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন এবং ক্ষুব্ধ, সেখানে জামিন হওয়ায় সবাই হতবাক।’

রুহুল আমিনের জামিন বাতিলের আদেশের পর শনিবার দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন তিনি।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সুবর্ণচরের আলোচিত গণধর্ষণ মামলার আসামি মো. রুহুল আমিনের জামিনের জন্য তার একজন আইনজীবী হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন। সে আইনজীবীর নাম আশেক-ই-রসুল।

‘তিনি আমাদের অফিসকে (অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়) জানিয়েছিলেন, তার আবেদনটি বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের বেঞ্চে শুনানি হবে।’

‘কিন্তু তিনি আবেদনটি বিচারপতি মামনুন রহমানের বেঞ্চে শুনানি করেন এবং এই মামলার স্বীকারোক্তিমূলক জবানববন্দি ও ভিকটিমের জবানবন্দি সন্নিবেশিত না করে আদালতকে ভুল বুঝিয়ে ওই আইনজীবী জামিন নেন, বললেন মাহবুবে আলম।

তিনি বলেন, পরে আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে সংশ্লিষ্ট কোর্টের বিচারপতিদের যখন বিষয়টি অবহিত করা হয়। তখন শনিবার (আজকে) সকালবেলা তারা চেম্বারে বসে এই জামিন আদেশটি রিকল করে বাতিল করেছেন। এর ফলে ওই আসামিকে দেয়া পূর্বের জামিন আদেশটি বাতিল হয়ে গেল। তার অন্তর্বর্তীকালীন জামিন আর কার্যকর থাকল না।

‘এখন আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেব সে যাতে জেল থেকে বের হতে না পারে।’

তিনি আরও বলেন, এটা খুবই ঘৃণ্য তৎপরতা। আমরা বিষয়টি প্রধান বিচারপতির নজরে আনব যে, কিছু কিছু আইনজীবী এক আদালতের কথা উল্লেখ করে অন্য আদালত থেকে শুনানি করেন। আর বিচারপতিদের কাছেও আমাদের আবেদন তারা যখন মামলার পিটিশন দেখেন, তখন তারা যেন লক্ষ রাখেন কোন আদালতে কয় নম্বর কোর্টের আবেদন করে পরে আরেক কোর্টে শুনানি করতে এসেছেন।

‘এটা একধরনের আদালতের সঙ্গে প্রতারণা ও আদালত অবমাননার শামিল।’ ওই আইনজীবীর বিষয়টি প্রথমে প্রধান বিচারপতির নজরে আনব পরে প্রয়োজনে বার কাউন্সিলের নজরে আনা হবে বলেও জানান তিনি।

মাহবুবে আলম আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, যদি আদালতের সামনে সব তথ্যপ্রমাণ সন্নিবেশিত হতো তবে অবশ্যই আদালত জামিন দিতেন না। আদালতকে ভুল বুঝিয়ে জামিন নেয়া হয়েছিল, যা আদালত বুঝতে পেরে আদেশটি রিকল করে জামিন বাতিল করেছেন।

মাহবুবে আলম আরও বলেন, আমি আদালতের কাছে ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারির আরজি জানাব। আগামী ২৫ মার্চ এ আবেদন করব।

জামিনের ঘটনাটি দুঃখজনক উল্লেখ করে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘‘আমি শুনেছি হাইকোর্টে নাকি এখন ৪০ সেকেন্ডে একটি মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে। একটা মামলায় উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে তারপর আদালত আদেশ দেবেন। উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনতে হলে কি এক মিনিট পর্যাপ্ত সময়?

তিনি বলেন, ধর্ষণের মামলায় আসামির জামিনের ঘটনাটি আমি শুনেছি। এসব গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর মামলার ক্ষেত্রে আদালতকে আরও সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট আসামির আইনজীবীর বিরুদ্ধে বার কাউন্সিল প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে পারে বলে মনে করেন বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক।

তিনি বলেন, এমন একটি আলোচিত ধর্ষণ মামলার আসামির জামিন প্রত্যাহার করেছেন হাইকোর্ট, এটা নিঃসন্দেহ প্রশংসনীয়।

আদালতে রুহুল আমিনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আশেক-ই-রসুল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। (যুগান্তর)

বার্তা কক্ষ
২৩ মার্চ, ২০১৯

Share