১৯৯৭ সাল। এসএসসি পরীক্ষা সবে শেষ হয়েছে। আব্বার মামাতো ভাই বিল্লাল কাকার আহ্বানে আব্বা আমাকে তার সাথে ঢাকা যেতে দিলেন ‘চালাক চতুর’ হওয়ার জন্য। কাকা তার রুমমেট এম এ আউয়ালের প্রস্তাবে রাজি হয়ে তার পত্রমিতালী প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অনুমতি দিলেন। সে সময়কার দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রমিতালী ‘ফরেন সার্ভিস এডুকেশন এন্ড ফ্রেন্ডশীপ’ এর সম্পাদকের সহযোগী হিসেবে কাজ করি প্রায় ৫ মাস।
সেই পত্রমিতালীর বিজ্ঞাপন দিতে প্রায়ই জনকণ্ঠ, ইত্তেফাক, বাংলার বাণী, ইনকিলাবসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের অফিসে যাওয়া হতো। চকচকে ঝকঝকে অফিসে সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালন দেখে বেশ ভালো লাগতো। আউয়াল কাকা নিজেও একটি আঞ্চলিক দৈনিকের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি ছিলেন। মূলত তার সেই প্রেস আইডি কার্ড দেখেই আমার সাংবাদিক হওয়ার বাসনা জাগে।
সাংবাদিকতার সূচনাও হলো ঢাকায় অবস্থানকালেই। ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি সাপ্তাহিক ও একটি মাসিক পত্রিকায় চাঁদপুর প্রতিনিধি হিসেবে প্রথম লেখালেখি। এসএসসি’র ফল ঘোষিত হওয়ার পর কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য চলে এলাম চাঁদপুরে। বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হলাম।
ফুফাতো ভাই শেখ মহিউদ্দিন রাসেলের পরামর্শ ও সহযোগিতায় ওই বছরের শেষ দিকে সাপ্তাহিক চাঁদপুর সংবাদ পত্রিকার আশিকাটি ইউনিয়ন প্রতিনিধি হিসেবে চাঁদপুরে আমার সাংবাদিকতার নতুন সূচনা। পত্রিকাটির (বর্তমানে দৈনিক) সম্পাদক ও প্রকাশক আবদুর রহমান। রাসেল ভাই তখন বার্তা সম্পাদক। কিছুদিনের মধ্যে পত্রিকাটির বাবুরহাট আঞ্চলিক প্রতিনিধি হয়ে কাজের পরিধি বাড়ে।
সে সময় বাবুরহাট এলাকায় কোনো ঘটনা-দুর্ঘটনা, সভা-সমাবেশ হলেই ডাক পেতাম। এই পত্রিকার তখন নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন আবদুর রাজ্জাক, যিনি বর্তমানে মানসিক সমস্যায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। রাসেল ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ছিলেন আলাউদ্দিন আল আজাদ, সে কারণে আমার সাথেও ছিল তার সখ্য।
তিনি অবশ্য কিছুদিন আগে মারা গেছেন। চাঁদপুর সংবাদ তখন লেটার প্রেসে ছাপা হতো। মাঝে মাঝে ঢাকা থেকে অফসেটে ছাপানোর ব্যবস্থা হতো। চাঁদপুরে তখনো অফসেট প্রেস আসেনি। চাঁদপুর সংবাদে কাজ করার পাশাপাশি চাঁদপুরে প্রথমবারের মতো ‘নলেজ পাওয়ার এডুকেশন এন্ড ফ্রেন্ডশীপ’ নামে একটি পত্রমিতালীর প্রকাশনা বের করি। যদিও সেটি ব্যবসাসফল হয়নি।
১৯৯৮ সালের বন্যার সময় সাপ্তাহিক চাঁদপুর কণ্ঠ দৈনিকে রূপান্তরের কাজ চলছিল। বিদেশ ফেরত সিরাজ মিয়ার প্রথম অফসেট প্রেস চালু অ্যাড. ইকবাল-বিন-বাশার ও কাজী শাহাদাত ভাইকে সেই সময় এই সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণে বেশ সাহস সঞ্চার করেছিল। সে সময়ে পত্রিকাটির বাবুরহাট আঞ্চলিক প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলমের অন্যত্র বদলীর কারণে তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে চাঁদপুর সংবাদ ছেড়ে প্রকাশিতব্য দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে বাবুরহাট প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করি। এ ক্ষেত্রেও উৎসাহ দিলেন রাসেল ভাই। ছোট ছোট খবর হলেও দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের উদ্বোধনী সংখ্যায় আমার লেখা সর্বোচ্চ সংখ্যক সংবাদ প্রকাশিত হলো, যা আমাকে বেশ অনুপ্রাণিত করেছিল।
আমার পারিবারিক ও দালিলিক নাম ‘আবদুর রহিম বেপারী’। চাঁদপুর সংবাদ ও ঢাকার সাপ্তাহিক/মাসিকে সেই নামেই সংবাদ প্রকাশিত হতো। চাঁদপুর কণ্ঠে যোগদানের পর প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত বললেন- ‘তোমার নামটা সেকেলে, কিছুটা বড়ও, একটু আধুনিক করো’। তার প্রস্তাবেই চাঁদপুর কণ্ঠে শুরুর দিকে ‘বেপারী আবদুর রহিম’ নামে আমার লেখা সংবাদ প্রকাশিত হয়। তখন আমি একদিন তাকে জানাই- আমার দাদী ও মক্তবের হুজুর ছোটবেলায় আমাকে ‘রহিম বাদশা’ নামে ডাকতেন।
তিনি বললেন, নামটা ছোট ও শ্রুতিমধুর। সেই থেকে আমি ‘রহিম বাদশা’ নামে পরিচিত হতে শুরু করলাম। প্রায় দুই বছর দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করেছি আমি। এই পত্রিকায় আমার পরবর্তী দু’টি পদ ছিল চাঁদপুর সদর উপজেলা প্রতিনিধি ও স্টাফ রিপোর্টার। পুরোটা সময়জুড়ে পত্রিকার প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাতের ঘনিষ্ঠ, বিশ্বস্ত ও স্নেহধন্য সহকর্মী ছিলাম আমি। দীর্ঘদিন আমি তার প্রুফ দেখার একমাত্র সঙ্গী ছিলাম। এই পত্রিকায় আমার ঘনিষ্ঠ ছিলেন মহিউদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান সুমন, এস এম আন্ওয়ারুল করীম, বি এম হান্নান, গিয়াস উদ্দিন মিলন, রাশেদ শাহরিয়ার পলাশ, শাহাদাত হোসেন শান্ত, নাজমুস শাহরিয়ার মিরন, আবু সাঈদ কাউছার। অন্যদের সাথেও আন্তরিক সম্পর্ক ছিল।
চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করার সময় সিনিয়র সাংবাদিক গোলাম কিবরিয়া জীবনের প্রস্তাবে তার সম্পাদিত ‘সাপ্তাহিক চাঁদপুর’ পত্রিকায়ও কিছুদিন বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। এই সময়ে’ই এইচএসসি পাশ করে অনার্সে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেই। আমার একান্ত আগ্রহ ছিল সাংবাদিকতা বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স করা। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের হাতেগোনা কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ ছিল। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এসএসসি ও এইচএসসিতে প্রয়োজনীয় নম্বর না থাকায় আবেদন করার সুযোগ পাইনি।
সাংবাদিকতা বিষয়ের বিকল্প বিষয় হিসেবে বেছে নিলাম বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে। চাঁদপুর সরকারি কলেজে অনার্স ভর্তি পরীক্ষায় বাংলা, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান- তিনটি বিষয়ে অংশগ্রহণ করি। তিনটি বিষয়ে’ই উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। সাংবাদিক হতে চাওয়ার আগ্রহ থেকেই বেছে নেই বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে। পড়াশোনার পাশাপাশি লোকজন অন্য কিছু করলেও আমি সাংবাদিকতার পাশাপাশি পড়াশোনা করতে লাগলাম। সকালে বাড়ি থেকে এসে দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত পত্রিকা অফিসে কাজ করতাম। কখনো এসাইনমেন্ট, কখনো প্রুফ রিডিং, কখনো রি-রাইটিং, কখনো কম্পিউটার কম্পোজ বহুমুখী কাজ ছিল আমাদের।
কাজের ফাঁকে কম্পিউটারে মান্না দে, হেমন্ত, কিশোর কুমারের কালজয়ী গান শুনে বিনোদন পেতাম। রাতে বাড়ি ফেরার পথে কখনো কখনো গাড়ি না পেলে সুমন কাকা তার মোটরবাইকে করে বাড়ি পৌঁছে দিতেন। আর কলেজ খোলা থাকলে ক্লাশ সেরেই পত্রিকা অফিসে চলে আসতাম, টানা কাজ করে গভীর রাতে বাড়ি ফেরা। কখনো কখনো রাতে কাজ সারতে দেরী হলে বাকী রাতটুকুও অফিসে কাটিয়ে দিতাম। সকালে কলেজ সেরে বাড়ি হয়ে আবার অফিসে ফেরা। কখনো কখনো দু’-তিন দিনেও বাড়ি যাওয়া হতো না। পরে অবশ্য হোস্টেলে ওঠায় যাতায়াতের এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাই। হোস্টেলে সিট পেতে হান্নান ভাই ভালো সহযোগিতা করেছিলেন।
এক অনিবার্য কারণে ২০০০ সালে চাঁদপুর কণ্ঠ ছেড়ে দৈনিক চাঁদপুর দর্পণ পত্রিকায় যোগদান করি আমি। এই দুই পত্রিকার বার্তা বিভাগের পাশাপাশি কম্পিউটার বিভাগেও নিয়মিত কাজ করতাম আমি। যা আজো বহমান। চাঁদপুর দর্পণে পদোন্নতি পেয়ে সাব-এডিটরের পাশাপাশি দীর্ঘদিন পত্রিকাটির নারী বিষয়ক পাতা ‘অনামিকা’র বিভাগীয় সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছি। চাঁদপুর দর্পণে কাজ করতে যেয়ে ইকরাম চৌধুরীর আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করে।
এখানে যোগ দেয়ার ক্ষেত্রেও সহযোগিতা ও পরামর্শ ছিল রাসেল ভাইয়ের। তিনি তখন এই পত্রিকার সহকারী বার্তা সম্পাদক ছিলেন। চাঁদপুর দর্পণে আমার ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ছিলেন পত্রিকাটির সাব-এডিটর ও বিভাগীয় সম্পাদক এস টি শাহাদাত, যিনি বর্তমানে ইটালি প্রবাসী সফল ব্যবসায়ী। মাসের পর মাস রাত জেগে পত্রিকার কাজ করেছি সেখানে। শেষ রাতে পত্রিকার কাজ শেষ হলে আমরা দু’জন ডাকাতিয়ার তীরে বসে কিংবা পদব্রজে শহর প্রদক্ষিণ করে সময় কাটাতাম।
ভোরে চৌধুরী অফসেট প্রেসে যেয়ে পত্রিকা হাতে নিয়ে সেটি পড়তে পড়তে রুটি-বিস্কুট খেয়ে সকালে ঘুমাতে যেতাম। এই পত্রিকায় কাজ করতে যেয়ে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে শ্রদ্ধেয় জালাল চৌধুরী, ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, মুনির চৌধুরী, শরীফ চৌধুরী, পার্থনাথ চক্রবর্তী, লক্ষ্মন চন্দ্র সূত্রধর, হাসান মাহমুদ, সুজন চৌধুরীসহ আরো অনেকের সাথে।
২০০১ সাল। চাঁদপুরে সবচেয়ে বড় বাজেটের পত্রিকা হিসেবে আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় দৈনিক চাঁদপুর প্রবাহ। একদিন হঠাৎ রাস্তায় দেখা সিনিয়র সাংবাদিক শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলমের সাথে। সঙ্গে ছিলেন ইলিয়াছ খান নিজেল। দু’জনে প্রস্তাব দিলেন প্রকাশিতব্য দৈনিক চাঁদপুর প্রবাহে কাজ করতে। হঠাৎ প্রস্তাবে আমি কিছুটা বিব্রত, বললাম পরে জানাবো। অনেক চিন্তা-ভাবনা করে চাঁদপুর প্রবাহে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
এ ক্ষেত্রে আমাকে উৎসাহ যোগালেন এস টি শাহাদাত। এক বিকেলে চাঁদপুর প্রবাহ অফিসে এসে মাকসুদ ভাইয়ের কাছে আবেদন করলাম আমাকে সহকারী বার্তা সম্পাদক পদ দিতে। যোগ্যতা-অভিজ্ঞতা কম ছিল বলে মাকসুদ ভাই তাতে রাজি হচ্ছিলেন না। বললেন, সিনিয়র সাব-এডিটর পদ নিতে। কিন্তু আমার খুব আগ্রহ ছিল বার্তা বিভাগে সহকারী হিসেবে থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে যোগ্য করে তোলার।
শেষ পর্যন্ত মাকসুদ ভাই পদটি দিতে রাজি হলেন। কিন্তু ঘটনাক্রমে পূর্ব নির্ধারিত বার্তা সম্পাদক এস এম আন্ওয়ারুল করীম ও যুগ্ম বার্তা সম্পাদক নাজমুস শাহরিয়ার মিরন শেষ পর্যন্ত চাঁদপুর প্রবাহে যোগ দিলেন না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মাকসুদ ভাই আমাকে ভারপ্রাপ্ত বার্তা সম্পাদক নিয়োগ করলেন। এই পদ প্রাপ্তিতে আমার আনন্দের চেয়ে ভয় কাজ করেছিল বেশি, কারণ একটাই- যোগ্যতা-অভিজ্ঞতার অভাব।
২০০১ সালের মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ১৮ বছরের বেশি সময় ধরে আমি চাঁদপুর প্রবাহে কর্মরত। অবশ্য মাঝখানে ২০০৪ সালে প্রায় তিন মাস স্বেচ্ছায় পত্রিকার দায়িত্ব থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম। মাকসুদ ভাইয়ের হাত ধরেই পত্রিকার পূর্ণাঙ্গ বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব লাভ করি আমি। তিনি স্বেচ্ছায় চাঁদপুর প্রবাহ ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত আমি চাঁদপুর প্রবাহের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। শুরুতে আমি এই দায়িত্ব গ্রহণে প্রস্তুত ছিলাম না, ছিল না কোনো আগ্রহও। এর মূল কারণ ছিল এই পদটির জন্য নিজেকে যোগ্য ও অভিজ্ঞ মনে না করা। আমি ও আমরা তখন বেশ কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিকের নাম প্রস্তাব করেছিলাম সম্পাদক নিযুক্ত করার জন্য। কিন্তু পত্রিকার প্রধান সম্পাদক আলহাজ ওচমান গনি পাটওয়ারীর প্রবল আগ্রহ ও দৃঢ় অবস্থানের কারণে প্রকাশক এ কে এম শফিক উল্যা সরকার আমাকে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নিযুক্ত করে পত্রিকার সার্বিক দায়িত্ব প্রদান করেন। পরবর্তীতে শফিক ভাই আমাকে এতটাই বিশ্বাস, স্নেহ ও আনুকুল্য দিয়েছেন যে আজ পর্যন্ত চাঁদপুর প্রবাহ ছাড়ার কথা চিন্তায় আসেনি। যদিও বিভিন্ন সময়ে লোভনীয় প্রস্তাব এসেছে বহুবার।
দেড় যুগেরও বেশি সময়ে চাঁদপুর প্রবাহ পত্রিকায় কাজ করতে যেয়ে বহু সহকর্মীর সান্নিধ্য পেয়েছি, নির্মম বাস্তবতায় সময়ের প্রয়োজনে এদের অনেকেই আজ অন্য হাউজে কাজ করছেন। চলে যাওয়াদের মধ্যে মাহবুবুর রহমান সুমন, শওকত আলী, রাশেদ শাহরিয়ার পলাশ, জি এম শাহীন, এ এইচ এম আহসান উল্লাহ, মুনাওয়ার কানন, আবদুল গনি, বশির আহমেদ দেওয়ান, ইয়াছিন ইকরাম, ইলিয়াছ খান নিজেল, এ কে আজাদ, আবদুস সোবহান রানা, বাদল মজুমদার, অভিজিত রায় ছিলেন আমার খুব কাছের মানুষ। যদিও স্মরণ করি সকল সহকর্মী ও তাদের অবদানকে। বারবার অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধার প্রস্তাব পেয়েও নিতান্তই মনের টানে চাঁদপুর প্রবাহে আজো সহকর্মী হিসেবে রয়ে গেছেন বার্তা সম্পাদক আল-ইমরান শোভন।
তার সাংবাদিকতায় আমার অল্পস্বল্প সহযোগিতা থাকলেও বর্তমান বাস্তবতায় আমার সাংবাদিকতায় তার অবদান অসামান্য, অতুলনীয়। শতভাগ পেশাগত সাংবাদিকতার এক উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত শোভন। তার সাংবাদিকতার বিকাশ ও সাফল্যে আমি দারুণভাবে পরিতৃপ্ত। এছাড়া চাঁদপুর প্রবাহে সুদীর্ঘকাল ধরে আমার সহকর্মী হিসেবে পত্রিকার নিয়মিত প্রকাশনায় অনবদ্য অবদান রেখে চলেছেন হাসান মাহমুদ।
পূর্ণকালীন না হলেও মোরশেদ আলম রোকনের সাথে ঘনিষ্ঠতার ছেদ নেই। আবদুস সালাম আজাদ জুয়েল, আল-আমিন, কবির হোসেন মিজি, শাওন পাটোয়ারী ও শরীফুল ইসলাম আজ চাঁদপুর প্রবাহের বার্তা বিভাগের প্রাণ। আমার আগ্রহে চাঁদপুর প্রবাহের মাধ্যমে সাংবাদিকতায় আসা তালহা জুবায়েরের পেশাগত উৎকর্ষতা ও সাফল্য আমাকে দারুণভাবে অনুপ্রেরণা যোগায়।
চাঁদপুর প্রবাহে কাজ করার পাশাপাশি টেলিভিশন ও জাতীয় পত্রিকায় কাজ করার আগ্রহ নিয়ে ঢাকার প্রতিষ্ঠিত ও ছোট-বড় বহু মিডিয়া হাউজে ছুটোছুটি করেছি দীর্ঘসময় ধরে। অম্লমধুর সেসব অভিজ্ঞতা নিজের ও ঘনিষ্ঠজনদের জন্যই সংরক্ষিত থাকুক। এসটিভি ইউএস ও আরটিভিতে দীর্ঘদিন পরীক্ষামূলকভাবে কাজ করলেও হঠাৎ করেই বাংলাভিশনে কাজ করার সুযোগ পাই। অল্প দিন কাজ করার পর বাংলাভিশনের জেলা প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ লাভ করি। আজও শীর্ষস্থানীয় ও জনপ্রিয় এই টেলিভিশন হাউজের সাথে যুক্ত আছি।
এছাড়া দৈনিক আমাদের সময়, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি, চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক সুপ্রভাতসহ বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে বিভিন্ন সময়ে কাজ করলেও নিয়োগ মেলেনি নানা কারণে। হয়তো যোগ্যতার অভাব নয়তো তদ্বিরের অভাব। এনএনবি, শীর্ষনিউজসহ কিছু অনলাইন মিডিয়ায়ও কিছু সময় কাজ করেছি।
চাঁদপুর প্রবাহসহ স্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে বহু কলাম ও মন্তব্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে আমার। গেলবছর কানাডায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জি-৭ সম্মেলনে অংশগ্রহণ নিয়ে রোহিঙ্গা বিষয়ক একটি কলাম লিখেছিলাম। দৈনিক জনকণ্ঠের সহকারী সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ ভাই সযত্নে সম্পাদনা করে সেই লেখা জনকণ্ঠে প্রকাশের ব্যবস্থা করে জাতীয় দৈনিকের কলাম লেখক হওয়ার সুযোগ করে দিলেন। (চলবে)
লেখক : সহ-সভাপতি চাঁদপুর প্রেসক্লাব ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক দৈনিক চাঁদপুর প্রবাহ।
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯
রহিম বাদশা সম্পর্কে আরো পড়ুন- * প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে কানাডায় সাংবাদিক রহিম বাদশা