Home / চাঁদপুর / এ কোন্ পুলিশ?
nou-police-ismail

এ কোন্ পুলিশ?

মনটা গতকাল (১০ আগস্ট) সারাদিনই খারাপ লাগছিলো নীচের দৃশ্যগুলো এবং বর্ণনা শুনে! মনে প্রশ্ন ছিলো এও কী সম্ভব? কী করে সম্ভব? আবার উত্তরও জানা ছিলো এ দেশের কিছু পুলিশের দ্বারা এটা মামুলি বিষয়!

কি করলেন তিনি এটা? একজন ছোট হকারের থালাভরা ছোট ছোট স্বপ্নকে মেঘনার পানিতে চুবিয় দিলেন? হকার উচ্ছেদ করলেন? দখলদারমুক্ত করলেন টার্মিনাল? লঞ্চ স্টেশনে এখনো ৫ শ অবৈধ দোকান দাঁড়িয়ে আছে মি. নৌ পুলিশের এএসপি ইসমাইল সাহেব! তাও আপনার নৌ ফাড়ির চারদিক ঘিরে! একটা ধাক্কাও ওই দোকানগুলোতে লাগাতে পেরেছেন? পারেননি। পারছেন,মাত্র ৪/৫ বা তারও কম টাকার পূঁজির একজন নজরুলের থালায় রাখা আমড়া পানিতে ফেলতে!

তাকে মারতে! ছি:! এই আপনাদের মতো পুলিশরাই পুরো পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট করতে যথেষ্ট।! স্বল্প কিছু আগে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতনের সাথে কথা হচ্ছিলো আমার। ভদ্রলোক অতিশয় ভালো মানুষ। এ বিষয়ে প্রশ্ন ছিলো তার কাছে। মনে হলো ব্যাপারটিকে তিনি কোন ভাবে ভালো চোখে দেখছেন না!

বল্লেন ভাই! এ পুলিশ নৌ পুলিশ! আমাদের স্থল পুলিশ নয়! এবং ইসমাইল নামের সহকারী পুলিশ সুপার প্রমোটি! অর্থাৎ বিসিএস ক্যাডার হয়ে সে চাকরিতে ঢুকেনি। সে এস আই পদ থেকে আসছে প্রমোশন পেয়ে। এক সময় হয়তো থানার ওসিগিরি করেছে।

তখন আমি স্পষ্ট হলাম যে, তার দ্বারা এই আচরণ অসম্ভববের কিছুই না! আবার বিসিএস করা ২/৪ ঊর্ধ্বতন যে এমন নয়, তাও বলছি না! গাজীপুরের সাবেক এসপি বা চট্টগ্রামের বৃদ্ধ জনপ্রিয় সাংবাদিককে পেটাতেও এক উর্ধ্বতনকে দেখেছি! কিন্তু সংখ্যায় এরা সব মিলে আসলেও কম! কিন্তু ওই যে! খাঁচি ভরা ফলে ১/২ টা আম যখন খারাপ থাকে আর সেগুলো যদি ভালোর সাথে বা মাঝে রাখা হয়, তাহলে ১/২ দিন বাদেই দেখা যায় খাঁচির পুরো ফলই নষ্ট হয়ে গেছে বা পঁচে গেছে। তাই ওই ফলগুলো আগে থেকেই ফেলে দেয়া ভালো! ঠিক একই রকম আমাদের পুলিশে!

এখন ফেলবে কে? অবশ্যই বসেরা! আর বস্ কে? নিশ্চয়ই পুলিশ সুপার, ডিআইজি নয়তো এর উপরের কেউ?

হ্যাঁ, চাঁদপুরের নৌ পুলিশ সুপার নবম বিসিএসে এর একজন! পদবী এক হলেও যিনি আমাদের চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার জিহাদুল কবিরের ১০/১১ ব্যাচ সিনিয়র! মানে অনেক অনেক বড় ভাই! যিনি ডিআইজি ডিঙ্গিয়ে আরো উপরের অফিসার থাকার কথা ছিলো! কি কারণে হননি, সে কারণ আমার কাছে অজ্ঞাত!

আজ সেই সিনিয়রের কাছে জানতে ইচ্ছে করে – আপনি কী এটির জন্য তদন্ত কমিটি করেছেন? তাকে কি প্রত্যাহার করেছেন? থালাওয়ালা নজরুলের কাছে দাঁড়িয়েছেন? কিংবা তাকেই দোষী বানিয়ে জেলে পাঠিয়েছেন?

না তা করেননি! কিন্তু আপনার তা করা উচিত ছিলো- যদি নিজেকে সত্যিকার সেবক মনে করতেন। অথচ ইতিমধ্যে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগে ভাইরাল!

নজরুলকে শান্তনা দিতে, সাহায্য করতে এরই মধ্যে অনেকে গেছে। আপনার সেই অফিসারও যেতে পারতো। যাইনি! কারণ তার মানুষত্বের অনুভূতিগুলো নুসারতদের দেশের সেই ওসি মোয়াজ্জেমদের মতো!

নজরুলদের দোষের কোন শেষ নেই! কারণ তারা অবৈধ হকার! যাত্রীদের আমড়া খাওয়ায়। নোংরা করে ঘাট! যাত্রীদের যন্ত্রণা করে! তবে আজও অবদি শুনিনি একজন আমরা, চিরুনি, পেপার বিক্রেতা লঞ্চঘাটে যাত্রীদের হয়রানি করেছে, শুনিনি চুরি করেছে, শুনিনি ঘাট দখল করেছে।

শুনিনি সরকারি জাহাজে তেল বিক্রি করে দিতে, শুনিনি অবৈধ নৌযান চলাচলে সুযোগ করে দিতে। বরং শুনেছি, টাউট বাটপার এলাকার মাস্তান চাঁদাবাজ, ধান্দাবাজ রাজনীতিক কিছু নাম বিক্রি করে শক্তি সামর্থ নিয়ে নৌ পুলিশকে সংগে নিয়ে লঞ্চঘাট এলাকা বেশ জমজমাট আছে!?

আমি এই ঘটনার নিন্দা জানাই একজন সংবাদকর্মী হিসাবে তো বটেই, চাঁদপুরের একজন নাগরিক হিসাবেও ঘৃণা করি।

আমি দাবি রাখবো – চাঁদপুরের কৃতি সন্তান পুলিশের আইজি মহোদয়ের কাছে যে, শুধু তাকেই নয়, নৌ-এসপিসহ এখানের পুরো নৌ-টিমকে প্রত্যাহার করে নিতে। আপনি শুধু পুলিশ প্রধানই নন! একজন সৎ, যোগ্য দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তা। তার উপর আপনার আরেক পরিচয়, আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণের মেধাবী ছাত্র, আপনার সহধর্মিণীও তাই।

আমিও সামাজিক বিজ্ঞানের ছাত্র হিসাবে এই অসভ্যতাকে মেনে নিতে পারছি না! কারণ সমাজ বিজ্ঞানে এসব অন্যায়ের স্থান নেই! আর আপনার পুলিশের চাকরি বিধিতেও না! আপনার আপনাদের অনেক অর্জন। কেউ তা স্বীকার করলো কি না করলো তা আমার কিছু যায় আসে না। আবার উল্টোটা হচ্ছে আপনাদের ভালো কিছু অর্জন ইসমাইল, মিজান, মোয়াজ্জেম বা নিখিলরা ম্লান করে দেয়ার চেষ্টা করে।

একজন-দু’জন এসপি শামসুন্নাহার, জিহাদ, সদ্য এসপি প্রমোশন পাওয়া চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পারভেজ চৌধুরীসহ অনেক ভালো দক্ষ, সৎ অফিসার আছে বলেই বোধহয় আমরা সাধারনরা ভালো আছি।!

ভাই নজরুল তোমাকে বলছি- আক্কেল থাকলে আর এ ব্যবসা করো না! বরং ছেলে মেয়েকে লেখাপড়া করাও! অন্য ব্যবসা করো। সবশেষ আল্লাহর কাছে চাও – হে আল্লাহ আমার এটা সন্তানকে এমন অফিসার বানাও, যাতে আমার মতো অসহায়ের ব্যবসায়ীর থালাটা নদীতে না ফেলে বরং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে- সে চিন্তায় বিভোর থাকে।

আমি দোয়া করি ভাই তোমার জন্যে। ভালো থাকো। আর এমন দৃশ্য যেন আল্লাহ না দেখায়। বিশেষ অনুরোধ: আমার এই পোষ্টটিতে যারাই কমান্ড করবেন, তারা এটিকে কোন ভাবেই রাজনীতিক বা পুরো পুলিশ বাহিনীর প্রতি অযথা ঘৃণা ছোঁড়ে মন্তব্য করবেন, নিন্দা করবেন তাদের যারা এই অফিসারদের মতন তাদের! পরামর্শ এবং দাবি বা বিচার অর্থে মন্তব্য করতে পারেন। অশ্লিল কোন বাক্য ছোঁড়ার দরকার নেই!

ভিডিওতে দেখুন-

Ikbal-Patwary

ইকবাল পাটওয়ারী সিনিয়র সাংবাদিক।

লেখক-ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, সিনিয়র সংবাদকর্মী।