আজ ১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য একদিন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের এই দিনে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। পরে এ বৈদ্যনাথতলাকে মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়।
মুজিবনগর সরকারের সফল নেতৃত্বে নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।
প্রতি বছর নানা আয়োজনে দিবসটি পালিত হয়। তবে এবার দিবসটি এসেছে নজিরবিহীন এক সংকটের মধ্যে। বিশ্বজুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করা করোনাভাইরাস বাঙালিকেও ঘরে থাকতে বাধ্য করছে। করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার।
সারা দেশে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি চলছে। ছুটি ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এরই মধ্যে মহান স্বাধীনতা দিবস ও বাংলা নববর্ষ ঘরে পালিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার মুজিবনগর দিবসটিও ঘরে বসে পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর একই বছরের ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্ররূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়।
ঘোষণাপত্রে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়। সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ও সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়।
অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থমন্ত্রী হিসেবে ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মনসুর আলী এবং স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী হিসেবে এএইচএম কামরুজ্জামানকে নিয়োগ দেয়া হয়। জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী অস্থায়ী সরকারের মুক্তিবাহিনীর প্রধান কমান্ডার এবং মেজর জেনারেল আবদুর রব চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন।
১৭ এপ্রিল সকালে মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরদিন দেশ-বিদেশের পত্রপত্রিকা এবং সংবাদমাধ্যমে সরকারের শপথ গ্রহণের সংবাদ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়।
ঘরে বসে মুজিবনগর দিবস পালনের আহ্বান : করোনাভাইরাসের কারণে এবার ঘরে বসে দিনটি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, করোনা প্রতিরোধ যুদ্ধে সামনে থেকে যেসব চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী জীবনবাজি রেখে সেবা প্রদান করছেন ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে তাদের সবাইকে সশ্রদ্ধ সালাম ও কৃতজ্ঞতা।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক বা প্রতিকার না থাকায় সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই একমাত্র উত্তম পন্থা।
তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ঘরে ঘরে স্বাধীনতার দুর্গ গড়ে তুলেছিল। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তেমনি ঘরে ঘরে সচেতনতার দুর্গ গড়ে তুলতে পারলে জয় আমাদের হবেই। বাংলাদেশের সব মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করতে সক্ষম হব।
দিবসটি উপলক্ষে এক বার্তায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের শিক্ষা ও চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বাঙালি জাতিকে অনুপ্রেরণা ও শক্তি জোগাবে। মুজিবনগর দিবসের শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়তে সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার জন্য তিনি সবার প্রতি আহবান জানান।
বার্তা কক্ষ, ১৭ এপ্রিল ২০২০