মনোনায়ন না পেয়ে অভিমান করে দল থেকে পদত্যাগ করলেন সংগীতশিল্পী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মনির খান
। আজ রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে মনির খান তাঁর এই পদত্যাগপত্র জমা দেন। সন্ধ্যায় প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি।
শুধু দল থেকে নয়, মনোনয়ন না পাওয়ার কষ্টে মনির খান রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এখন থেকে গান নিয়ে মানুষের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন তিনি। জানালেন মনির খান।
কলেজজীবন থেকে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মনির খান। ২০০৮ সাল থেকে সক্রিয়ভাবে বিএনপিতে যুক্ত হয়ে যান। গানের মঞ্চের পাশাপাশি রাজপথেও সক্রিয় থেকেছেন দেশের জনপ্রিয় এই গায়ক। এখন থেকে আবার পুরোদস্তুর গান নিয়ে মেতে থাকতে চান।
বললেন, ‘আমি শিল্পী মানুষ, রাজনীতি করতে আর ইচ্ছে করছে না। রাজনীতির মধ্যে যে কৌশলগত দিক আছে, সেটার সঙ্গে আমি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছি না। মনে হচ্ছে, রাজনীতির মধ্যে সামনে যত দিন যাচ্ছে, জীবনটা অন্ধকারে চলে যাচ্ছে।
এদিকে আমার ভক্তরাও চাইছেন,আমি যেন গানে ব্যস্ত হই। তাঁদের আহ্বান আর আমার সুস্থ জীবনযাপনের আকাঙ্খা থেকে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। কাউকে অভিযোগ করতে চাই না।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর-কোটচাঁদপুর) আসন থেকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন দেশের এই বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী। প্রাথমিকভাবে দলের মনোনয়নের চিঠি পেয়ে জমাও দিয়েছিলেন। কিন্তু আসনটি জোটের শরিক জামায়াত ইসলামকে ছেড়ে দেওয়ায় চূড়ান্ত তালিকায় ঠাঁই হয়নি তাঁর। এরপরই পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন মনির খান।
আজ বিকেল ৫টায় পদত্যাগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন মনির খান। মনির খান বলেন, ‘মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়া একাবারে বড় কারণ নয়। মনোনয়ন পেলে রাজনীতি করব, আর না পেলে ককরব না এমন ছিল না। আমি গানের মানুষ, গানের মাধ্যমে জনগণের কাছে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। রাজনীতি জনগণের জন্য, গানও তাই। কিন্তু দিন দিন রাজনীতি খুব কঠিন মনে হচ্ছে।
মনোনয়ন পেলে তো ঠিকই রাজনীতি করতেন। এমন প্রশ্নে মনির খান বলেন, ‘মনোনয়ন পেলে তো অবশ্যই রাজনীতি করতাম। আমি যখন রাজনীতিতে আসি তখন বিএনপির দুঃসময়। আমার যৌবনের সুসময়, গানের জীবনের যৌবনের সুসময়ে রাজনীতিতে আসি। একটা মানুষের তো কিছু লক্ষ্য থাকে।
আমার এলাকার লাখ লাখ মানুষ আমার সঙ্গে কাজ করেছে। মনোনয়ন না পাওয়ায় তাঁদের হৃদয় ভেঙে গেছে। রাজনীতি করে যদি জনগণের জন্য সেই জায়গাটা পুরণ করতে না পারি, এলাকার মানুষের কাছাকাছি থেকে এলাকার মানুষের আশা আকাঙ্খা আর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে ব্যর্থ হই— তাহলে রাজনীতিতে থাকার কীইবা দরকার। গান নিয়ে থাকিনা, সেই মঙ্গল। এখন থেকে গান নিয়ে ভাবব, গান নিয়েই থাকব।’
কদিন পর আবার অন্য কোনো দলে যোগ দেবেন না তো? এমন প্রশ্নে মনির খান বলেন, ‘আর কোনো দলে যোগ দেব না। গান নিয়ে থাকব। সাধারণ শিল্পী হিসেবে, সাধারণ মানুষ হিসেবে—সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে থাকতে চাই। আজ বিকেল থেকে আমি আর কোনো দলের নই, কোনো পক্ষের নই, আমি একজন মনির খান, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের—আমি সেভাবেই থাকব।’
অভিযোগ নাই। দুঃখ নাই—এই ব্যাপারটা কতটা সত্য। এমন প্রশ্নে মনির খান বললেন, ‘ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি করতাম। ২০০৮ সাল থেকে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছি। মনোনয়ন না পাওয়াতে ব্যথা তো আছে। আমার আসনে যাঁকে দেওয়া হয়েছে তিনি কিন্তু বিএপির না। এই কারণে আমার কষ্টটা সত্যিই বেশি। বিএপির মধ্যে কেউ মনোনয়ন পেতেন তাহলে এত কষ্ট পেতাম না।’
বিএনপি সূত্র থেকে জানা গেছে, আসনটিতে জামায়াতের ভোট বেশি হওয়ায় বিএনপি ছাড় দিয়েছে। এখানে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন ঝিনাইদহ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মতিয়ার রহমান।
মনির খানের পদত্যাগের বিষয়ে সন্ধ্যায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘মনির তো দলের ছেলে। দলের ছেলে দল ছেড়ে আর কোথায় যাবে? আমি ওর সঙ্গে কথা বলেছি। সে আমাকে বলেছে, সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করবে। মনোনয়ন নিয়ে ওর অভিমান হয়েছে। অভিমান ভাঙলে আবার দলে ফিরবে। দলের ছেলে, দলের জন্য কাজ করবে।’
রিজভীর সঙ্গে কথা বলার পর মনির খানের সঙ্গে আবার যোগাযোগ করা হয়। পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের বিষয়টি তুলতেই মনির খান বললেন, ‘এটা ঠিক যে, তিনি আমাকে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করেছেন। আমি তাঁকে বলে দিয়েছি, আমি কোথাও যাচ্ছি না। আর কোনো দলই করব না, রাজনীতি থেকে বিদায়। এরপরও তিনি আমাকে বলেছেন, ‘মনির, তুমি এটা করো না। আমি বলেছি, ভাই আমাকে অনুরোধ কইরেন না। আমি আর কোনো রাজনীতিই করব না। কারো প্রতি কোনো অভিযোগ আমার নাই। তাই আমার আর ফেরার কোনো সম্ভাবনাই নাই।
(প্রথম আলো)
বার্তা কক্ষ
০৯ ডিসেম্বর,২০১৮