Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরের মেঘনার চরে জলে ভেসে ভেসে আনন্দের ভ্রমণ
meghnar cor

চাঁদপুরের মেঘনার চরে জলে ভেসে ভেসে আনন্দের ভ্রমণ

নদীর বুকে তখন সূর্য খেলা করছে ঢেউয়ের সঙ্গে। সকালের মিষ্টি আলো ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। নানা রঙের নানা ঢঙের পোশাক পরে দলবেঁধে সদরঘাটের লঞ্চে আসতে শুরু করেছে এমসিজিয়ানরা। সকাল ১০টার দিকে হুইসেল বাজিয়ে প্রায় ৪০০ যাত্রী নিয়ে চলতে শুরু করেছে লঞ্চ। গন্তব্য চাঁদপুরের মেঘনার চর। ঘুরে এসে লিখেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন-

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বার্ষিক নৌবিহার অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। সেদিন এ বিভাগের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মহামিলনমেলায় পরিণত হয়। সঙ্গে ছিলেন বিভাগের শিক্ষক ড. নিসতার জাহান কবির, আনোয়ারুস সালাম, রাইসুল ইসলাম, ইব্রাহিম বিন হারুন, বর্ণনা ভৌমিক, জাকারিয়া খান ও মিঠুন মিয়া প্রমুখ।

লঞ্চ ছাড়ার একটু পরই দেখা গেল, মায়াময় দৃষ্টি নিয়ে কেউ বসে আছেন জানালার পাশে। কেউ প্রিয়জনকে নিয়ে বসে নদীর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। কেউ ছাদে। কেউ বা আবার এক কোণে জটলা বেঁধে সিনিয়র ভাইয়া-আপুদের সাথে আড্ডায় মত্ত। আবার অনেকেই লঞ্চের ২য় তলায় খোলা ডেরায় বসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করছেন। লঞ্চের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হলো বিভিন্ন ধরনের খেলা। একপায়ে দৌড়, কপাল থেকে বিস্কুট খাওয়া, কপালে টিপ পরানো ইত্যাদি। সবচেয়ে আকর্ষণীয় খেলা ছিল ‘সতীনের মেয়ে কার কোলে’ খেলাটি।

এসবের মধ্যদিয়ে বিকেল ৩টার দিকে আমরা পৌঁছে গেলাম চাঁদপুরের বিস্তীর্ণ এক মেঘনার চর ।

লঞ্চ থেকে নেমেই আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের জার্সি পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে ২ দলে বিভক্ত হয়ে এক জমজমাট ফুটবল খেলা হলো। খেলায় ব্রাজিল টিমকে ০-১ গোলে হারিয়ে বিজয়ের ট্রফি তুলে নিল আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনা টিমের কোচ ছিলেন বিভাগের শিক্ষক রাইসুল ইসলাম।

তারপর কেউ কেউ নদীতে নেমে গোসল করলো। বিস্তীর্ণ চরের দুই চোখের সীমানায় তখন কেবলই সবুজ আর সবুজ। আর অন্য পাশে ঢেউ খেলানো নদীর বিস্তীর্ণ পানি। এমন মনোরম জায়গায় ছবি না তুলে উপায় আছে? তাই তো কেউ চরের সবুজ মাঠে ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। কেউ নদীকে পেছনে রেখে ছবি তুলে স্মৃতিকে ধারণ করার চেষ্টা করলেন।

সবাই মিলে দুপুরের খাবার খেলাম। এখন যাবার পালা। লঞ্চ আবার সদরঘাটের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলো। লঞ্চের মধ্যে আবারও শুরু হলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কী ছিল না এতে? আঞ্চলিক বির্তক, নাচ, গান, মূকাভিনয়, আবৃত্তি, নাটিকা সবই ছিল চোখ ধাঁধানো পারফর্মেন্সে।

এরমধ্যে সাবেক শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানালো বর্তমান শিক্ষার্থীরা। ছিল আকর্ষণীয় পর্ব র‌্যাফেল ড্র। শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। তখন লঞ্চ চলছে বিশাল নদীর মধ্যদিয়ে।

দূরের গ্রামগুলোয় ক্রমশ আঁধার নামছে। একটু পরেই ব্যাঙের মতো এক লাফে সূর্য ডুব দেবে নদীর জলে। নদীর কূলে বাঁশের সাথে রশি দিয়ে বাঁধা কয়েকটি নৌকা ঢেউয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে নেচে যাচ্ছে। সাদা পাল তুলে ঝিরিঝিরি বাতাসে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে একটি ডিঙি নৌকা। আমরা মুগ্ধ হয়ে দেখছি নদীর অপার সৌন্দর্য। ততক্ষণে অস্তগামী সূর্যের রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়েছে আকাশে। তার ছায়া পড়েছে নদীর পানিতে; যেন তা দিগন্তবিস্তৃত একটি রক্তিম চাদর।

ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নামল। আরও কিছুটা পর গাঢ় অন্ধকারে হারিয়ে গেল আকাশ। তখন হেসে উঠল আকাশের গায়ে মিটিমিটি খুদে তারার দল। আর লঞ্চের মধ্যে চলতে লাগলো ডিজে পার্টি। রাতের অন্ধকারে বিশাল নদীর উপর ভেসে চলা লঞ্চের ছাদে গিয়ে আমরা ফানুস উড়ালাম। এক সময় হঠাৎ ভ্যাপু বাজিয়ে থেমে গেল লঞ্চ। বুঝতে পারলাম লঞ্চ এসে ভিড়েছে সদরঘাটে। তারপর ফটোফ্রেমে আটকে থাকা একরাশ স্মৃতি আর শরীরে রাজ্যের ক্লান্তি নিয়ে হাসিমুখে যার যার বাসায় ফিরলাম। (জাগো নিউজ)

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।