Home / শীর্ষ সংবাদ / মালয়েশিয়ায় নিহত চাঁদপুরের আল আমিন ও সোহেলের বাড়িতে কান্নার রোল
malaysia-accident

মালয়েশিয়ায় নিহত চাঁদপুরের আল আমিন ও সোহেলের বাড়িতে কান্নার রোল

মালয়শিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আল আমিন ও মো. সোহেলের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। আল আমিন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরভাগল এলাকার আমির হোসেনের ছেলে। আর সোহেল হাজীগঞ্জের আনোয়ার হোসেনের ছেলে।

মালয়েশিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় একমাত্র সন্তান সোহেলকে হারিয়ে পাগলপ্রায় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের আনোয়ার হোসেন দম্পতি।

মাত্র ৮ মাস আগে বিভিন্ন এনজিও থেকে টাকা উঠিয়ে মালয়েশিয়া পাড়ি দেয়ার পরে গত রোববার মালয়েশিয়া সময় রাত ২ টায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় সোহেলসহ আরো ৫ জন মারা যান।

সোহেল হাজীগঞ্জের ৭ নং বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বশির মেম্বার বাড়ির আনোয়ার হোসেনের একমাত্র ছেলে। সে চার বোনের একমাত্র ভাই।

সাড়ে ৮ মাসের একমাত্র কন্যা সন্তানের জনক সোহেল এসএসসি পাশ করে ২০১৩ সালে। ভাগ্য বিড়ম্বিত সোহেল দেশে বেকার থাকার কারনে সম্প্রতি প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ করে মালয়েশিয়া পাঠান তার বাবা। সোহেল মালয়েশিয়া যাওয়ার পুরো টাকাটা বিভিন্নজন থেকে হাওলাত করে আনা হয়েছে বলে জানান আনোয়ার হোসেন।

সোমবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে সোহেলের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, দো-চালা বসত ঘরের ভিতর ন্ত্রী শাহানারা বেগমের গগনবিদারী কান্নার শব্দ পুরো বাড়ির পরিবেশ ভারী করে তুলেছে। পুরো বাড়ির প্রতিবেশী নারী পুরুষের ভিড়। আত্বীয়-স্বজনরা বাড়িতে ভিড় করেছে। বাবা আনোয়ার হোসেন আর মা রোকেয়া বেগম বাকরুদ্ধ। সোহেলের একমাত্র মেয়ে সোহানা এদিক সেদিক তাকানো ছাড়া আর কিছুই বুঝার বয়স হয়নি।

বাবা আনোয়ার হোসেন বুক চাপড়িয়ে বলেন আমার সবকিছুই তো শেষ হয়ে গেলো। সরকারের কাছে আকুল আবেদন আবেদন সরকার যেন আমার ছেলের লাশটা দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেয়। শেষ বয়সে এসে যেন ছেলের লাশটা নিজ বাড়িতে মাটি চাপা দিতে পারি।

গগনবিদারী চিৎকারে সোহেলের স্ত্রী বলেন, সর্বশেষ আমার সাথে যখন কথা তখন আমাকে বলে আমি যেন নামাজ পড়ি। সে ডিউটিতে আছে ডিউটি শেষে আমাকে ফোন দেবে। সে তো আর আমাকে ফোন দিলো না বলেই হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দেন।

স্থানীয় ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি লোটাস দেলোয়ার দাবি করে বলেন সরকারের কাছে আমাদের এলাকাবাসীর আকুল আবেদন সরকার যেন সোহেলের লাশটা দেশের বাড়িতে পৌছনোর ব্যবস্থা করে দেন।

al-amin

ফরিদগঞ্জের আল আমিন

এদিকে মালেয়শিয়ার কুয়ালালমপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের মধ্যে একজন হচ্ছেন চাঁদপুরে ফরিদগঞ্জের আল আমিন। সোমবার (৮ এপ্রিল) সকালে তার মৃত্যুর সংবাদ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে। এ সময় স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। আশপাশের প্রতিবেশীরা তাদের স্বান্তনা দিতে ছুটে আসেন।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরভাগল গ্রামের মাওলানা আমির হোসেনের তিন ছেলের মধ্যে আল আমিন সবার বড়। মাত্র ৭ মাস আগে পাশের বাড়ির মিলন গাজীর ছেলে রাসেলের সঙ্গে মালেয়শিয়ার কুয়ালামপুরে যান তিনি।

পরিবারের সদস্যরা জানান, একটু স্বচ্ছলতার জন্য বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে আল আমিনকে বিদেশ পাঠান তারা। এমন পরিস্থিতিতে তাঁর অকাল মৃত্যুতে পরিবারের ওপর এখন যেনো আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম হলো।

নিহতের বাবা মাওলানা আমির হোসেন বলেন, গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ছেলে আল-আমিনকে মালেয়শিয়া পাঠান। এরমধ্যে বেশকিছু টাকাও পাঠিয়েছে আল আমিন। তিনি আরো বলেন, তিন লাখ টাকা অন্যের কাছ থেকে ধার করে ছেলেকে সেখানে পাঠিয়েছি। নিহতের মা আমেনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার আল-আমিনকে তোমরা নিয়ে আসো।

প্রতিবেশী মিলন গাজী বলেন, তার ছেলে রাসেলের সঙ্গে আল আমিন মালেশিয়া যায়। তিনি আরো জানান, সোমবার ভোরে দুর্ঘটনার সংবাদ পান তিনি।

এদিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে আল আমিনের মরদেহ দেশে নিয়ে আসার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। একই সঙ্গে ক্ষতিপূরণের দাবিও জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মালেয়শিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরের কাছের একটি সড়কে বাংলাদেশিসহ আরো কয়েকটি দেশের শ্রমিকরা কর্মস্থলে যাবার পথে বাস দুর্ঘটনার শিকার হন। এ সময় ৫ বাংলাদেশিসহ ১১ জন নিহত হন। এতে আরো বেশ কয়েকজন আহত হন।

প্রতিবেদক- শরীফুল ইসলাম
৮ এপ্রিল, ২০১৯