চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ‘জে-ার ও গ্রাম আদালত বিষয়ক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সচেতনতামূলক’ দিনব্যাপি কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো.মাজেদুর রহমান খান বলেন,‘ গ্রাম আদালতের সার্বিক বিচার-প্রক্রিয়া নারী-বান্ধব ও ভয়মুক্ত করতে হবে। আইনের দৃষ্টিতে প্রত্যেক নাগরিক সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। সমতার এ বিধান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত। সাংবিধানিক অঙ্গীকার অনুসরণ করে নারীদের উন্নয়নের জন্যে বিভিন্ন আইন ও নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। নারীর সম-সুযোগ ও সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে ২০১১ সালে প্রণীত হয়েছে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি। আমাদের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায়ও সমতার ভিত্তিতে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত করার নির্দেশনা সংযুক্ত হয়েছে।’
গ্রাম আদালত কিভাবে নারী-বান্ধব করা যায় তা’ নিয়ে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ‘জে-ার ও গ্রাম আদালত বিষয়ক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সচেতনতামূলক’ দিনব্যাপি কর্মশালা বুধবার (২৪ অক্টোবর) প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো.মাজেদুর রহমান খান একথা বলেন।
স্থানীয় সরকার ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শওকত ওসমান-এর সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো.মাজেদুর রহমান খান, যুগ্ম-জেলা ও দায়রা জজ এবং ভারপ্রাপ্ত জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার মো.মোস্তফা শাহরিয়ার খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান এবং চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী।
স্থানীয় সরকার বিভাগ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা এর আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় পরিচালিত বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের সহযোগিতায় কর্মশালাটি জেলা প্রশাসন,চাঁদপুর আয়োজন করে।
বিশেষ অতিথি যুগ্ম-জেলা ও দায়রা জজ এবং ভারপ্রাপ্ত জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার মো. মোস্তফা শাহরিয়ার খান বলেন,‘ প্রথাগতভাবে স্থানীয় জনগণ বিরোধ নিষ্পত্তির জন্যে জনপ্রতিনিধিদের দ্বারস্থ হয়। এ অভিজ্ঞতার সূত্র ধরেই স্থানীয় পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে এলাকার ছোটো-খাটো বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে ১৯৭৬ সালে গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ জারি করা হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘পরবর্তীতে ২০০৬ সালে ২০১৩ সালে সংশোধিত আকারে ইউনিয়নের এখতিয়ারাধীন এলাকার মধ্যে সংঘটিত ছোটো-খাটো বিরোধ নিষ্পত্তি করতে গ্রাম আদালত প্রতিষ্ঠার আইন প্রণীত হয়। সাধারণ জনগণের বিচার ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণে আমাদের নিজ নিজ পক্ষ থেকে ভূমিকা পালন করতে হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.মিজানুর রহমান বলেন,‘ গ্রাম আদালতের মাধ্যমে বিচারিক প্রতিকার লাভের ক্ষেত্রে নারী ও অন্যান্য সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও গ্রাম আদালতের প্যানেল সদস্য হিসেবে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এ লক্ষ্যে গ্রাম আদালতের সেবা নারী-পুরুষ সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছে দিতে সবার জন্যে স্বাচ্ছন্দ্যময় একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে বিরোধ নিরসনের ইতিহাস অনেক পুরনো।’
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউএনডিপি’র জে-ার স্পেশালিস্ট কামরুন্নেসা নাজলী এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন গ্রাম আদালত বিষয়ক প্রকল্পের ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর নিকোলাস বিশ্বাস।
প্রসঙ্গত, ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কিন্তু দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত নারী-পুরুষ বিভিন্ন কারণে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়।
এ বাস্তবতায় বিচারিক সেবাকে সবার জন্য সহজলভ্য করতে বাংলাদেশ সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় অ-আনুষ্ঠানিক ও আধা-আনুষ্ঠানিক বিচারিক প্রতিষ্ঠান বিশেষ ক’রে গ্রাম আদালত শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক মহোদয়দের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী যে একগুচ্ছ নির্দেশনা প্রদান করেছেন সেখানেও সাধারণ জনগণের কাছে ন্যায় বিচারকে সহজ করতে এবং মামলার জট কমাতে গ্রাম আদালতকে কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থায় বিভিন্ন কারণে নারীরা এখনও অনেক ক্ষেত্রেই পিছিয়ে রয়েছে। ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও নারীদের জন্যে বিভিন্ন বাধা রয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেলেও এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
কর্মশালায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,জেলা ও দায়রা জজ কোর্টের বিজ্ঞ বিচারক, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার,জেলা পুলিশের কর্মকর্তা, সরকারের বিভিন্ন লাইন ডিপার্টমেন্টের জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তা,ইউপি চেয়ারম্যান ও নারী সদস্য, এ্যাডভোকেট,স্কুল শিক্ষক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ ৬০ জন এ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।
সম্পাদনায় : আবদুল গনি
অক্টোবর ২৪,২০১৮ , বুধবার