ইসলাম

পবিত্র জুমাতুল বিদা ও আল কুদস দিবস শুক্রবার

আগামি (৩১ মে) শুক্রবার পবিত্র পবিত্র জুমাতুলবিদা ও আন্তর্জাতিকভাবে মুসলীম বিশ্বে এ দিনকে আল-কুদস দিবস বলা হয় । পবিত্র জুমাতুলবিদা’হচ্ছে রমজান মাসের শেষ শুক্রবার । অনেকে ওই শুক্রবারকে‘গরীবের হজ্জ্বের দিনও’ বলে আখ্যায়িত করে থাকেন । ফলে দেশের ছোটবড় সকল মসজিদেই মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় ।
দিবসটির বিশেষ তাৎপর্য থাকায় দিনটি মুসলীম জাহান পারন করে আসছে।

১৯৭৯ সালে ইরানে সংঘটিত ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা ইমাম খোমেনি আল আকসা মসজিদকে মুক্তির লক্ষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে প্রতিবছর রমজানের শেষ শুক্রবারকে আল কুদস দিবস হিসেবে পালনের আহবান জানান এবং সে থেকে সারা বিশ্বে এ দিবসটি পালন হয়ে আসছে।

প্রসঙ্গত,বায়তুল মোকাদ্দাস হচ্ছে ইসলামের প্রথম কেবলা মক্কা ও মদিনার পর তৃতীয় পবিত্র স্থান। হজরত রাসুলে করিম (সা.) মক্কার মসজিদুল হারাম, মদিনার মসজিদুন্নবী ও বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদের উদ্দেশে সফরকে বিশেষভাবে সওয়াবের কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন,যা অন্য কোনো মসজিদ সম্পর্কে করেন নি।

হিজরতের পর বায়তুল মোকাদ্দাস ইসলামের প্রথম কেবলা। বায়তুল মোকাদ্দাস দুনিয়ার জন্য অসংখ্য ভূখন্ডের মতো কোনো সাধারণ ভূখন্ড নয় । বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদ এবং তার আশপাশের এলাকা বহু নবীর স্মৃতি বিজড়িত । এ পবিত্র নাম শুধু একটি স্থানের সঙ্গে জড়িত নয় বরং এ নাম সব মুসলমানের ঈমান ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এখানে রয়েছে অসংখ্য নবী-রাসুলের মাজার। ওহি ও ইসলামের অবতরণস্থল এ নগরী নবীদের দ্বীন প্রচারের কেন্দ্রভূমি।

ইবরাহিম (আ.) কাবাঘর নির্মাণের  ৪০ বছর পর ইয়াকুব (আ.) জেরু জালেমে আল আকসা মসজিদ নির্মাণ করেন । অতঃপর সুলায়মান (আ.) এ পবিত্র মসজিদের পুনর্র্নিমাণ করেন। ৬৩৮ সালে দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা.) এর খেলাফতকালে পুরো বায়তুল মোকাদ্দাস এলাকা মুসলমানদের দখলে আসে।

১০৯৬ সালে খ্রিস্টান ক্রুসেডাররা সমগ্র সিরিয়া ও ফিলিস্তিন দখল করে নেয়ার পর বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদের ব্যাপক পরিবর্তন করে একে গির্জায় পরিণত করে। এরপর ১১৮৭ সালে মুসলিম বীর ও সিপাহসালার সুলতান সালাহ উদ্দীন আইয়ুবি জেরু জালেম শহর মুসলমানদের অধিকারে নিয়ে আসেন।

সুলতান সালাহ উদ্দীন আইয়ুবির হাতে পরাজিত হওয়ার পর খ্রিস্ট শক্তি পিছু হটলেও ইহুদি চক্র বায়তুল মোকাদ্দাসের প্রতি লোলুপদৃষ্টি ফেলে।   তারা ফিলিস্তিন থেকে শুরু করে সুদূর মদিনা পর্যন্ত সারা মুসলিম এলাকা নিয়ে বৃহত্তর ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করে।

তারা তাদের এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য তুরস্কের তৎকালীন শাসক সুলতান আবদুল হামিদের কাছে ফিলিস্তিনে জমি কেনার অনুমতি চায় এবং এর বিনিময়ে তারা তুরস্কের সব বিদেশি ঋণ পরিশোধ করে দেবে বলে অঙ্গীকার করে । সুলতান তাদের এ ষড়যন্ত্রমূলক প্রস্তাব মানেন নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইহুদিরা গোপনে জমি কিনতে থাকে।

১৯১৭ সালে ব্রিটিশরা ফিলিস্তিনে প্রবেশ করে এবং ১৯২০ সালে সেখানে পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে এবং স্যার হার্বার্টে স্যামুয়েল নামে একজন ইহুদিকে সেখানে ব্রিটিশ কমিশনার নিযুক্ত করেন
এ জমি কেনায় বহিরাগত ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিনিদের দুয়ার খুলে যায়। সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা ইহুদিবাদী উগ্র সংস্থাগুলোকে ফিলিস্তিনে বসবাস ও জমি কেনার জন্য কোটি কোটি ডলার প্রদান করে।

১৯৪৮ সালের ১৫ মে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় । এ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভের পর ইহুদিরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের অত্যাচারে জর্জরিত আরবরা জীবন বাঁচাতে দলে দলে দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। এ সত্ত্বেও তখনও বায়তুল মোকাদ্দাস মুসলমানদের দখলে ছিল।

১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের মাধ্যমেও তা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ফিলিস্তিনের নির্যাতিত জনগণ দীর্ঘদিন ধরে তাদের আবাসভূমি ও আল কুদস উদ্ধারের জন্য রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সংগ্রামে দিশেহারা হয়ে ইসরাইল ফিলিস্তিনের মধ্যে ভাঙন ধরানোর জন্য ফিলিস্তিনের একটি ক্ষুদ্র অংশে সীমিত স্বায়ত্ত শাসনের কথা বলে কিছুসংখ্যক নেতাকে বিভ্রান্ত করেছে।

তথাকথিত শান্তি আলোচনার সুযোগে তারা একে একে ফিলিস্তিনের প্রকৃত সংগ্রামী নেতাদের হত্যা করে চলছে এবং নতুন নতুন এলাকা দখল করে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছে। এমনকি ফিলিস্তিনে মানবিক ত্রাণ সহায়তা পৌঁছা পর্যন্ত তারা বাধা দান করছে।

২০১০ সালে তুরস্ক বিভিন্ন দেশের ত্রাণসামগ্রীসহ জাহাজবহর ফ্লেটিলায় আক্রমণ চালিয়ে ২০ জন বেসামরিক ত্রাণকর্মীকে হত্যা করেছে । পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিবর্গ ও ইহুদিবাদী চক্র শুধু ফিলিস্তিনের মুসলমানদের ওপরই তাদের নির্যাতন সীমাবদ্ধ রাখেনি। তারা বিশ্বব্যাপি মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্রুসেড শুরু করেছে।  বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রে সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করে।

এদিকে পবিত্র জুমাতুল বিদা  ৩১ মে । সারা দেশে এ দিনে মসজিদে মসজিদে রোজাদার মুসল্লিদের উচ্ছ্বাসমুখর উপস্থিতি ঘটে থাকে । শেষ মুহূর্তে রোজাদারদের বড় জমায়েত এ জুমাতুল বিদায় মসজিদের খতিবের মুখে বার বার ধ্বনিত হয় আল বিদা মাহে রমজান, আল বিদা মাহে রমজান।

চাঁদপুরের ৪,৮৪২ টি মসজিদে সংশ্লিষ্ঠ মসজিদ কমিটির সদস্যগণ স্ব স্ব মসজিদের  ইমামগণের সার্বিক সহায়তায় বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে জুমাতুল বিদা পালিত হবে।

রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস মাহে রমজানের বিদায়ের সানাই খতিবদের মুখে মুখে করুণ সুরে বেজে উঠে। তখন গভীর শূন্যতা ও বেদনায় আবেগ আপ্লুত হয়ে উঠে আল্লাহর প্রিয় বান্দারা। তথ্যসূত্র : পত্র-পত্রিকা সমুহ

প্রতিবেদক : আবদুল গনি
২৮ মে ২০১৯

Share