শীর্ষ সংবাদ

চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী!

প্রবাদ আছে “চোরে শোনেনা ধর্মের কাহিনী”। এ কথাটি যারাই বলে গেছেন, নিশ্চয়ই তাঁরা গভীর চিন্তা-ভাবনা ও বাস্তবতার হিসাব-নিকাশ করেই প্রবাদটি বলেছিলেন। যার একটি বাস্তব উদাহরণ চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার অন্যতম মাদক ব্যবসায়ী থেকে মাদক মাফিয়া মো. সফিকুল ইসলাম ওরফে পাকিস্তানি সফিক।

মতলব পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের মোবারকদী গ্রামে বসবাস তার। পিতার নাম মৃত তোরাব আলী। তার সংসারে রয়েছে ১ ছেলে ৩ মেয়ে। দীর্ঘ সময় পাকিস্তানে কাটিয়েছেন বলে এলাকায় তাকে পাকিস্তানি সফিক বলে ডাকে। পাকিস্তান থেকে দেশে ফেরার পর মাদকের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। তার বিরুদ্ধে মতলব দক্ষিণ থানাসহ বিভিন্ন থানায় মাদকের মামলা রয়েছে ডজন খানিক।

গ্রেফতার হয়েছে ৪/৫ বার। জামিনে বেরিয়ে পুনরায় মাদক বেচা-কেনা করতো। মতলব ছাড়াও চাঁদপুর জেলা শহরেও পাশর্^বর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন বয়সী লোকজন আসতো তার কাছ থেকে মাদক কেনার জন্য। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে ডিলার হওয়ায় এলাকায় পাকিস্তানি সফিক নামে এক সময় চাঁদপুর ও কুমিল্লায় মাদক স¤্রাট হিসেবে পরিচিতি ছিল মতলবের বিমল ও শ্যামল।

তাদের দু’ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই মারা যাওয়ার পর অপরজন ওই ব্যবসা ছেড়ে বর্তমানে ভাল হয়ে স্বাভাবিক জীবন সংসার করছে। কিন্তু পাকিস্তানি সফিক ভাল হওয়ার সুযোগ গ্রহণ করেও এ পথ থেকে সরে আসতে পারেনি। থানা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পাকিস্তানি সফিক বিগত আড়াই মাস পূর্বে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে থানার অফিসার ইনচার্জ একেএমএস ইকবালের নিকট।

তিনি শপথ করেন মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিবেন এবং অন্ধকার জগৎ থেকে আলোর জগতে আসার জন্য। ওসি তার কথা শুনে কিছু নির্দেশনা দেন। নির্দেশনা মোতাবেক পাকিস্তানি সফিক থানা মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সহিত আদায় করেন। থাকা ও খাওয়ার জন্য সব ব্যবস্থা করে দেন তিনি। প্রায় ১৫/২০ দিন মসজিদ ও থানা ছাড়া অন্য কোথাও যাতায়াত ছিলো না তার। মসজিদের মুয়াজ্জিন না থাকলে তিনিই মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করেন।

তাকে দেখতে পরিবারের লোকজন থানায় আসতো। সন্তানরা তার বাবার এ পরিবর্তন দেখে মহাখুশি। থানায় থাকা অবস্থায় একদিন ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পাকিস্তানি সফিক। এসময় প্রধান অতিথি ছিলেন সিনিয়র সহকারি পুুলিশ সুপার (মতলব সার্কেল) মো. আহসান হাবিব সহ থানার ওসি, কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি, সম্পাদক, রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যক্তিবর্গ ও ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকবৃন্দ।

তিনি তার বক্তব্যে অন্ধকার জগৎ থেকে ফিরে আলোর জগতে অর্থ্যাৎ স্বাভাবিক জীবনে আসার অনুভুতি ব্যক্ত করেন। পাকিস্তানি সফিক বলেন, মাদকের সাথে জড়িত থাকলে অসংখ্য দুঃচিন্তা মাথায় থাকে, ঘুম কম হয়, পালিয়ে থাকতে হয়, পালিয়ে থাকলেও গ্রেফতারের ভয় পিছু ছাড়ে না এবং স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনসহ সমাজব্যবস্থার সাথে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়।

আজ ওই অন্ধকার জগৎ ছেড়ে আলোর পথে ফিরে আসায় আজ সন্তানরা আমাকে বাবা বলে ডাকে, আত্মীয়-স্বজনরা কাছে টানে। এ সুখ ছেড়ে কেউ অন্ধকার জগতে যাবেন না। যারা এ জগতে আছেন তারা ফিরে আসুন। এমন সুন্দর বক্তব্য উপস্থাপনার পর সেই পাকিস্তানি সফিক গত ২৮ জুন ৫৪ পিচ ইয়াবাসহ আড়ং বাজার এলাকা থেকে আটক হয় চাঁদপুরের ডিবি পুলিশের হাতে।

ওসি একেএমএস ইকবাল বলেন, সে নিজে স্বেচ্ছায় থানায় এসে আত্মসমর্পন করায় তাকে ভাল হওয়ার এবং স্বাভাবিক জীবন যাপনের সুযোগ করে দেওয়া হয়। তাকে পায়জামা, পাঞ্জাবি, টুপি এবং থাকার জন্য বিছানা দেয়া হয়। খাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করা হয়।

নিয়মিত নামাজ পড়াসহ ১৫/২০ দিনের চালচলন এবং ওপেন হাউজ ডেতে তার বক্তব্যের পর মনে হয়েছিল তার উপর আল্লাহ্র রহমত হয়েছে। কিন্তু গত পরশু দিনের ঘটনা অর্থ্যাৎ ইয়াবা সহ আটক হওয়ার বিষয়টি অবাক করে দিয়েছেন সে।

মাদকের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই।

প্রতিবেদক- মাহফুজ মল্লিক
২৯ জুন ২০১৯

Share