চাঁদপুর ফরিদগঞ্জে গভীররাতে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে একটি পরিবারের বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মাথাগোঁজার শেষ সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব পরিবারটির ঠাঁই হয়েছে এখন খোলা আকাশের নিচে।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) দিবাগত রাতে উপজেলার ১০নং গোবিন্দপুর দক্ষিন ইউনিয়নের উত্তর হাঁসা গ্রামের শীতল গাজী বাড়িতে উক্ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। এই ঘটনায় মো. হাসান গাজী সংশ্লিষ্ট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন।
শনিবার (৩০ মার্চ) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসান গাজীর স্ত্রী নারগিস বেগম আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরের পাশে বিলাপ দিয়ে কাঁদছেন। কাঁদতে কাঁদতে বার বার তিনি মুর্চা গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন। তিন মেয়ে নাজমিন, সাথী ও সীমার অশ্রুগড়িয়ে পড়ছে।
বাবা হাসান গাজীর চোখে রাজ্যের হতাশা। এ প্রতিনিধি তাদের সাথে কথা বলতে চাইতেই জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করেন। বলতে থাকেন, ‘ভাই আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। শরীরে পরিধেয় বস্ত্র ছাড়া পরিধান করার মত আমাদের আর কনো বস্ত্র নেই। ক্ষুধা নিবারনের জন্যে কোন খাবার নেই। চাল-ডাল-আলু যা ছিলো সব পুড়ে গেছে।’
এসময় উপস্থিত নারী-পুরুষ অনেকের চোখের জল চল্ চল্ করছিলো। পুড়ে যাওয়া বসত ঘরটির অবস্থান বিলের ধারে কিছুটা নির্জন স্থানে। বসতঘরটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই।অগ্নিকাণ্ডের সময় বসতঘরে কেউ ছিলো না।
বসত ঘরের ভিটায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিলো আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন আসবাবপত্র। পেশায় মিস্ত্রী হাছান গাজী ও তার স্ত্রী নারগিস বেগম একজন গৃহীনি। তিল তিল করে বহু কষ্টে গড়ে তুলেছিল তাদের এই সংসার। কিন্তু, আগুণের লেলিহান শিখায় সব পুড়ে শেষ হয়ে গেছে।
আগুণে ৪টি কোরআন শরীফ সহ সম্পত্তির দলিলপত্র, ব্রাক সমিতির ঋণের বই, পাসপোর্ট ও ভিসার কাগজপত্র, মেয়েদের লেখা পড়ার বই, একটি স্টিলের আলমিরা, একটি কাঠের আলমিরা, শোকেস, রেক, তিনটি খাট, চেয়ার-টেবিল, কম্বল, প্রায় তিন ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ ৩৭ হাজার টাকা, খাবারের জন্য রাখা দুই বস্তা আলু, দুই বস্তা চাল, ডাল সবই পুড়ে গেছে। উল্লেখিত আসবাবপত্রের মধ্যে মেয়ের জামাইর বাড়িতে দেওয়ার জন্যে বহু কষ্টে ক্রয়কৃত কিছু স্বর্ণালঙ্কার ও আসবাবপত্র ছিলো।
এ বিষয়ে মো. হাসান গাজী চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, শ্বশুরের অসুস্থতার খবর শুনে রাত ১০টার দিকে আমার স্ত্রী ঘরে তালা দিয়ে মেয়েদের সাথে নিয়ে বাবার বাড়িতে যায়। রাত তিনটার দিকে তার কাছে খবর আসে আমার বসতঘরে আগুন লেগেছে। আমার স্ত্রী এসে দেখে আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনে আনুমানিক ৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান,‘বিকালে রান্না শেষে পাকের ঘরে চুলা নিবিয়ে ফেলে আমার স্ত্রী। শত্রুতাবসত রাতে দুবৃত্তরা আগুন দিয়ে আমার বসতঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। এনিয়ে আমি থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছি।’
এ বিষয়ে স্থানীয় ক’জন এ প্রতিনিধিকে জানায়, আগুন লাগার পর রাত দুইটার দিকে বাড়ির লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। কিন্তু, আগুনের লেলিহান শিখায় এরই মধ্যে ঘরটি পুড়ে যায়।
এদিকে রাতের আধাঁরে দুর্বৃত্তের আগুণে বসত ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার খবর শুনে উপজেলা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হাসান গাজীর পরিবারকে শান্ত্বনা দিতে বাড়িতে যেতে দেখা যায়।
এদিকে সচেতন জনসাধারণের অভিমত এমহুর্তে মানুষ হিসেবে জীবনধারণের জন্য নূন্যতম মৌলিক ও মানবাধিকার হিসেবে হাছান গাজীর স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান নির্মানে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও মহত ব্যক্তিদের আন্তুরিক সহযোগীতা জরুরী।
প্রতিবেদক:আতাউর রহমান সোহাগ
৩০ মার্চ,২০১৯