ফণী’র অগ্রভাগ বাংলাদেশে এরইমধ্যে প্রবেশ করেছে। মূলকেন্দ্র আসতে কিছুটা দেরি হবে। নদী অববাহিকা ও উপকূলীয়য় অঞ্চল হিসেবে চাঁদপুরের আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গেছে। পাশাপাশি মাঝারি বাতাস বইছে।
এরমইমধ্যে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ‘ফণী’র প্রভাবে জেলাজুড়ে বৃষ্টি হয়েছে। চাঁদপুর আবহাওয়া বিভাগের রেকর্ড অনুযায়ী এ বৃষ্টিপাতে গড় ছিলো ২৫ মিলিমিটার।
মেঘনা যথেষ্ট উত্তাল রয়েছে। কয়েক ফুট উচ্চতায় ঢেউ এসে বাঁধের ওপর আছড়ে পড়ছে। ত্রিনদী মোহনা চাঁদপুর বড়স্টেশন মোলহেডে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। আবহাওয়া বিভাগ বলছে পুরো আকাশ ছেঁয়ে ফেলবে শুক্রবার মধ্য রাত থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত।
এদিকে সকাল শুক্রবার (৩ মে) সকাল ১১ টায় মেঘনা নদীতে চাঁদপুর-শরীয়তপুর গামী যাত্রীবাহী ট্রলার ও মাছ ধরার নৌকা আটক করা হয়।
আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান জানান, কিছু মানুষ এত অসচেতন যে হাজার বললেও সচেতন হয় না। গত দুই দিন ঘূর্ণিঝড় ফণি নিয়ে এত প্রচার,এত প্রচারণা-তারপরও এরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল নদীতে নামছে।
পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা এবং ত্রাণ বিভাগের সকল কর্মচারীদের ছুটি বাতিলসহ চাঁদপুরে প্রস্তুত রয়েছে ৩১১ টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ সকল প্রাথমিক, মাধ্যমিক,কলেজ ও মাদ্রাসা ভবনসমূহ (১৪৫০টি) আশ্রয় কেন্দ্র। নদী উপকূলীয় এলাকায় ক্ষতির আশঙ্কায় চাঁদপুর-ঢাকা, চাঁদপুর-নারায়নগঞ্জ রূটের সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডাব্লিউ কর্তৃপক্ষ।
অপরদিকে ফণীর প্রভাবে আশংকা দেখা দিয়েছে উন্নয়ন কাজের। প্রখর খরতাপে জেলা প্রায় কিলো মিটার সড়ক পাকা করণের কাজ চলছে। অতিমাত্রায় বৃষ্টি হলে ওইসব সড়কের ভিটমিন নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে আশংকা করছেন জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী জিএম মজিবুর রহমান।
চাঁদপুরের আবহাওয়া পরিস্থিতি নিয়ে চাঁদপুর টাইমসের সাথে কথা জেলা আবহাওয়া বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ মো. সোয়েব। তিনি চাঁদপুর টাইমসকে জানান, উপকূলীয় অঞ্চল হিসেবে চাঁদপুর এখনো ৬ নং সতর্ক সংকেতের আওতায় রয়েছে। আর নদী বন্দর হিসেবে ২ নং সতর্ক সংকেতের মধ্যে রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ফণীর প্রভাবে চাঁদপুরে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কি.মি. থাকতে পারে। আর চরাঞ্চলগুলোতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট উচ্চতায় পানি প্লাবিত হতে পারে।
এছাড়া পুরো দেশের আবহাওয়ার বিষয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক জানিয়েছেন পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর, চট্টগ্রাম বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত এবং কক্সবাজার ও কাছাকাছি উপকূলীয় অঞ্চলকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, এরইমধ্যে ‘ফণী’র অগ্রভাগ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মূলকেন্দ্র আসতে কিছুটা দেরি হবে। খুলনা অঞ্চলের আকাশ মেঘলা হওয়া শুরু হয়েছে। এর মেঘ ঢাকা পর্যন্ত এসে গেছে। ঢাকায় ‘ফণী’র মেঘ থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে’। আমাদের ধারণা ছিল সন্ধ্যা নাগাদ এটি বাংলাদেশে আসবে। এটি একটি বিশাল আকৃতির । এটি সন্ধ্যা থেকে শুরু করে রাতব্যাপী অতিক্রম করতে থাকবে। পুরো ব্যাস বাংলাদেশের পুরো আকাশ ছেয়ে ফেলবে মধ্য রাত থেকে শনিবার (০৪ মে) সকাল পর্যন্ত।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়টি শুক্রবার সকাল ১০টায় ভারতের উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করেছে। অতিক্রমের সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার। এটি এখন শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছে।
তিনি আরো বলেন, এটি এখনও দুর্বল হয়নি। আমাদের ধারণা ছিল এটি আঘাত করে দুর্বল হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী এটি দুর্বল হয়নি।
পরিচালক আরো বলেন, ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের জন্য বাতাসের গতি ৮০ থেকে প্রায় ১৪০ হয়ে থাকে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে আগে আমরা সবাইকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করিয়েছি।
ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এর কাছাকাছি দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে জানান আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক।
ভিডিওতে দেখুন-
প্রতিবেদন- দেলোয়ার হোসাইন,
ভিডিও ও ছবি : শরীফুল ইসলাম
৩ মে ২০১৯