ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় ঈদ বাজার তত জমে ওঠছে। বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়। উপজেলার প্রতিটি ব্র্যান্ড ফ্যাশন হাউস ঈদকে সামনে রেখে সেজেছে নতুন সাজে। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে আনা হয়েছে রকমারি ডিজাইনের পোশাক। আকর্ষণীয় ডিজাইনের পোশাক নজর কাড়ছে ক্রেতাদের। তাই প্রতিটি ব্র্যান্ডের ফ্যাশন হাউসে এখন ক্রেতাদের ভিড়।
জৈষ্ঠ্যের প্রচ- গরমে মানুষের অবস্থা বেগতিক। স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে হাঁপিয়ে উঠছেন। কিন্তু ঈদের মার্কেটে গরমের প্রভাব ফেলতে পারছে না। প্রচ- গরম সত্ত্বেও ঈদের কেনাকাটায় ভিড় জমেছে মতলব উত্তর উপজেলার মার্কেটগুলোতে। রোদে পুড়ে গরমে ঘেমেও থেমে নেই ঈদের কেনাকাটা। ক্রেতাদের অভিযোগ, এবার ঈদের পোশাকে গলাকাটা দাম নিচ্ছে দোকানিরা। বিশেষ করে রেডিমেড পোশাক বিপণিবিতানগুলোতে একদরের নামে গলাকাটা দাম রাখছে। দাম বেশি থাকায় পোশাক কিনতে ক্রেতাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন বিপণী বিতানে কেনাকাটা ও পছন্দের শাড়ি জামা কাপড় দেখতে আসছে ক্রেতারা। উপজেলার সবচেয়ে প্রাচিনতম বাজারে ফিক্সড রেইড এমএস ফ্যাশন ও এশিয়ান ফ্যাশনসহ এখানে অনেকগুলো নামিদামি মার্কেট রয়েছে। উপজেলার মোজাদ্দেদীয়া ছাইফিয়া প্লাজায় উপজেলার একমাত্র ফিক্সড রেইড এমএস ফ্যাশন এবং ছেংগারচর বাজার কলেজ রোড সংলগ্ন এশিয়ান ফ্যাশন এবং এশিয়ান টেইলার্স বৃহত্তম মার্কেট। বিশেষ করে এই অভিজাত বিপনিবিতানগুলোতে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে ক্রেতাদের। এবার ঈদ বাজারে ক্রেতাদের ভিড় বেশি এ মার্কেটেই। নতুন ডিজাইনের জামা-কাপড়ের পাশাপাশি চলছে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে জুতা ও গয়না কেনার ধুম।
এ মার্কেটগুলোতে দেশের নামীদামী ব্রান্ডের জিনিসপত্র সমাহার রয়েছে হক মার্কেটেই। তাছাড়া খোলামেলা ও বৃহৎ পরিসরে ঘুরে ফিরে এ মার্কেটেই কেনাকাটার সুযোগ পাচ্ছে ক্রেতারা।
উপজেলার উপজেলার একমাত্র ফিক্সড রেইড এমএস ফ্যাশন । এ মার্কেটে ঈদ ছাড়াও ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকে। বর্তমানে ঈদের বাজার আরো গরম।
ঈদে কেনাকাটায় উপজেলার সেরা স্থান দখল করে আছে ফিক্সড রেইড এমএস ফ্যাশন এবং ছেংগারচর বাজার কলেজ রোড সংলগ্ন এশিয়ান ফ্যাশন এবং এশিয়ান টেইলার্স এবং স্কুল রোড সংলগ্ন ফাহিমা ফ্যাশন বিপনী বিতান। পৌর শহরের মধ্য বাজার,কলেজ রোড ও স্কুল রোডে অবস্থিত হওয়ায় এ মার্কেটগুলোতে কলেজের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়। সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এসব ক্রেতারা এখানে কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকে। আধুনিক ডিজাইনের পোশাকের সমাহার রয়েছে এ বিপনী বিতানগুলোতে। ক্রেতাদের সমাগম চোখে পড়ছে বেশি। এ বিপুনিবিতানগুলোতে কাপড়ের মান ভালো এবং এক দাম হওয়ায় এমন সেখানে ক্রেতাদের ভিড় বেশি।
ঈদের বাজারে পুরুষের চাইতে মেয়েদের ভিড় বেশি। উঠতি বয়সি তরুণ তরুণী আর মাঝবয়সি নারীরা মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন ঈদ বাজারে ভিড় করছে। ছেংগারচর বাজার থেকে ঈদের কেনাকাটা করে স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে কথা হয় পারভীন বেগম নামে এক গৃহিনীর সাথে। তিনি এসময় বলেন, সাধারণ একটি থ্রি-পিস যা আগে এক হাজার টাকায় বিক্রি করা হতো। ঈদ মার্কেটে তাই হচ্ছে ২২শ টাকা। গত বছর আমার তিন ছেলেদের জন্য যে দামে পোশাক কিনেছিলাম সেটি এ বছর দাম নিচ্ছে প্রায় দ্বিগুনের মতো।
রোববার (২৬ মে) দুপুরে এশিয়ান ফ্যাশন-এ পোশাক কিনতে আসা এক স্যেদি প্রবাসীর স্ত্রী মরিয়ম আক্তার বলেন, গত বছর যে পাঞ্জাবি কিনেছি ১৫ থেকে ১৬শ টাকায়। সেই পাঞ্জাবি এবার কিনতে হয়েছে ১৯শ টাকায়।
ছেংগারচর বাজারে একদর মার্কেট হিসেবে পরিচিত এমএস ফ্যাশন-এ পোশাক কিনতে আসা মুদি ব্যবসায়ী কেশাইরকান্দি গ্রামের মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন, গত বছর যে পাঞ্জাবি কিনেছি ১৫ থেকে ১৬শ টাকায়। সেই পাঞ্জাবি এবার কিনতে হয়েছে ১৯শ টাকায়। রোজার এক মাস আগে যে শার্ট ১২শ টাকায় বিক্রি হয়েছে এখন তা ১৪৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অভিযাত বিপনী বিতানের ব্যবসায়ী এমএস ফ্যাশন এর পরিচালক মোঃ মোতালেব ও এশিয়ান ফ্যাশন এর পরিচালক এমএস মিন্টু জানান, এবারের ঈদে তরুনীদের পছন্দের মধ্যে বোম্বে জামা, পাকিস্তানী জামা, টিস্যু জামা, রাউন্ড জামা, ইন্ডিয়ান গ্রাউন্ড, ভার্বি গ্রাউন্ড, টিস্যু গ্রাউন্ড, সরনী ফ্যাশনের জামা, রৌশনী ফ্যাশনের জামা, এস ফ্যাশনের জামা, থ্রি-পিচ, বিনয়, বিরেক ও হানচা জামা বেশি বিক্রি হচ্ছে।
এমএস ফ্যাশন এর প্রোপ্রাইটর মো. মোতালেব বলেন, এবার ঢাকা থেকে বেশি দাম দিয়ে থ্রি-পিস কিনতে হয়েছে। বিশেষ করে হাতের কাজ করা থ্রি-পিসের বেশ দাম দিতে হয়েছে। যে কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে তিনি আরও বলেন এবছর থ্রি-পিচ,শিশুদের পোশাসস ও শড়ির দাম খুব একটা বাড়েনি।
এদিকে শাড়ির মধ্যে ইন্ডিয়ান কাতান, বেনারসি, জর্জেট, ঢাকাই জামাদানী, কাতান শাড়িগুলো বিশেষ করে মহিলা ক্রেতা সাধারনের কাছে বেশি বিক্রি হচ্ছে। পুরুষ ক্রেতাদের পাঞ্জাবী দোকানে ভিড় করতে দেখা গেছে এবং শিশুদের বেবীসপগুলোতে ভিড় ছিল লক্ষনীয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন গতবারের চেয়ে এবারের বেচাবিক্রিতে তারা সন্তষ প্রকাশ করেন। ঈদে ক্রেতা সাধারণের নিরাপত্তার বিষয়ে কয়েকটি মার্কেটে মালিক জানান, এবারের ঈদে মার্কেটগুলোতে প্রশাসন, বাজার কমিটি পক্ষ থেকে সর্বচ্চ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
উপজেলার ছেংগারচর বাজার পেরৈ বনিক সমবায় সমিতি লিঃ এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ নাসির ফরাজী জানান, প্রতিটা মার্কেটের ভেতরে বাইরে বিভিন্ন পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। কোন ধরনের অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটবেনা এবং ক্রেতা সাধারন নির্বিঘেœ তাদের পছন্দের কেনাকাটা করে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে রোববার সকালে উপজেলাপর সবচেয়ে প্রাচিনতম ও ঐতিহ্যবাহী বাজার ছেংগারচর বাজার বিভিন্ন শপিংমলে ঘুরে দেখা গেছে কোথাও তিল ধারণের স্থান নেই। দিন গড়িয়ে ইফতরির পর পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা। তবে এবার পোশাকের দাম অনেকটা বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। উচ্চমূল্যেই বিত্তশালীরা কাপড়-চোপড় ক্রয় করলেও নিুবিত্ত, খেটেখাওয়া দিনমজুর মানুষগুলো পড়েছেন মহা সমস্যায়। বেশি দামে ব্যবহার্য পণ্য ক্রয়ে তারা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন।
প্রতিবেদক- খান মোহাম্মদ কামাল
২৬ মে ২০১৯
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur